২৮৮ আসনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নয়া ইতিহাস গড়লেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট

বাংলাদেশ বিদেশ
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা- ইবতিসাম রহমান

Published on: ডিসে ৩১, ২০১৮ @ ২০:৩৫

এসপিটি নিউজ, ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বরঃ   টানা তৃতীয়বারের (হ্যাটট্রিক) মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট। বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসন পেয়ে রেকর্ড জয়ে নয়া ইতিহাস গড়েছে তারা। এই জয়ের ফলে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং নির্বাচনী প্রচারণায় দলের নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি মহাজোটের বড় ব্যবধানে জয়ী হওয়ার নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা এই জোট ইতিহাস সৃষ্টিকারী জয় পেলেও তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি হয়েছে। ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর এবারই প্রথম বিএনপি সবচেয়ে কম আসন পেয়েছে। দলটির বেশ কয়েকজন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। অনেক স্থানে মহাজোট প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা।

রবিবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এই নির্বাচন। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা ৩ আসনে ভোট হয়নি। সর্বশেষ রাত ২টা পর্যন্ত প্রাপ্ত বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, মহাজোটের বিজয়ী প্রার্থীদের মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৫৭ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ২, জাসদ (ইনু) ২, তরিকত ফেডারেশন ২, বিকল্প ধারা ২ এবং লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি-জাপার ২২ ও বাইসাইকেল প্রতীকে জাতীয় পার্টি-জেপির একজন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭ টি (গণফোরামের ২টি) এবং ৪ টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।

ভোটের দিন বিক্ষিপ্ত সংঘাত ও সহিংসতার কারণে মোট ২৯টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, ২৯৯ আসনে মোট ৪০ হাজার ৫১টি কেন্দ্রে এই ভোটগ্রহণ হয়। এই হিসেবে বাতিল হওয়া কেন্দ্রের সংখ্যা ০.০৫ শতাংশের মতো। অনিয়মের অভিযোগ এনে বিএনপি ৫৫টি আসনে ভোট বর্জন করেছে।

ইসির ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সবকয়টি দল এবারের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগসহ ৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ২৭২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। জোটের প্রধান শরীক দল আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৬০টি আসনে, রাশেদ খান মেননের বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, হাসানুল হক ইনুর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ৩টি, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা বাংলাদেশ ৩টি এবং বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। বাকি ২৬টি আসন আওয়ামী লীগের শরিক দল জাপাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে বিএনপিসহ ৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ২৮২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এর মধ্যে বিএনপি এককভাবে (জামায়াতের ২২টিসহ) ২৫৭টি আসনে, কর্নেল অলির লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি থেকে ৪ জন, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে ৩ জন, আসম রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি থেকে ৪ জন, আন্দালিব রহমান পার্থের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপি থেকে ১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে ৩ জন, ড. কামাল হোসেন এর গণফোরাম থেকে ৭ জন, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি থেকে ১ জন এবং খেলাফত মজলিশ থেকে ২ জন প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। বাকি ১৭টি আসনে বিএনপি তথা ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী আদালত কর্তৃক বাতিল হওয়ায় কোন প্রার্থী ছিল না। তবে শেষ মুহূর্তে এসে ৮ বিকল্প প্রার্থীকে সমর্থন দেয় বিএনপি। এবারের নির্বাচনে ১৮৬১ জন প্রার্থী অংশ নেন। ভোটার ছিল প্রায় ১০ কোটি সাড়ে ৪২ লাখ।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে ২৩৪টি আসন পায় আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি-জাপা ৩৪টি আসনে জয়লাভ করে। অন্যরা পায় ৩২টি আসন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে স্থাপিত ভোটের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণা হয়েছে গোপালগঞ্জ-৩ আসনের। এই আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০৮টি কেন্দ্রে মধ্যে সবকটি কেন্দ্রের ফলাফলে শেখ হাসিনা পেয়েছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৫২৯ ভোট। মোট ভোটার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৪টি। গতকাল রাত সোয়া ৮টার দিকে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এই ফলাফল ঘোষণা করেন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন এস এম জিলানী। তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ১২৩টি। এই আসনে ৯৩ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে ইসি হিসাব দিয়েছে।

এদিকে ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও ইন্দুরকানী উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-২ আসন থেকে জয়ী হয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বাইসাইকেল মার্কা নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ধানের শীষ মার্কা নিয়ে পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৮৪ ভোট।

ঢাকার বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন, ঢাকা-১: সালমান এফ রহমান, ঢাকা-২: কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৩: নসরুল হামিদ বিপু, ঢাকা-৪: সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা (লাঙ্গল), ঢাকা-৫: হাবিবুর রহমান মোল্লা, ঢাকা ৬: কাজী ফিরোজ রশীদ (লাঙ্গল), ঢাকা-৭: হাজী সেলিম, ঢাকা-৮: রাশেদ খান মেনন (ওয়ার্কার্স পার্টি), ঢাকা-৯:সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১০:শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-১১: এ কে এম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১২: আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা-১৩: সাদেক খান, ঢাকা-১৪: আসলামুল হক, ঢাকা-১৫: কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬: মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, ঢাকা-১৭: আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক), ঢাকা-১৮: সাহারা খাতুন, ঢাকা-১৯: এনামুর রহমান এবং ঢাকা-২০: বেনজীর আহমেদ।

Published on: ডিসে ৩১, ২০১৮ @ ২০:৩৫


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 2 =