SAFE WILDLIFE: করোনাভাইরাস নিশ্চিহ্ন করতে পারে পাহাড়ি গরিলাদের- কড়া সতর্কতা

Main কোভিড-১৯ দেশ বন্যপ্রাণ বিদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। মানুষের পাশাপাশি এখন বন্য জীবজন্তুও নিরাপদ নয়। তাদের বিষয়েও নজর রাখা শুরু হয়েছে। সারা বিশ্বে এরকম একাধিক ন্যাশনাল পার্ক আছে। যেখানে রয়েছে নানা প্রজাতির জীবজন্তু। এই সময়ে তারা কেমন আছে। সেই খবর আমরা বিভিন্ন সূত্র ধরে জানার চেষ্টা করেছি। সংবাদ প্রভাকর টাইমস ‘সেফ ওয়াইল্ডলাইফ’ শিরোণামে এক ধারাবাহিক প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজ প্রথম পর্ব।

Published on: এপ্রি ২১, ২০২০ @ ১৮:৩১

Writer: Aniruddha Pal

এসপিটি প্রতিবেদন:  আজ আমরা আফ্রিকায় এক বিখ্যাত ন্যাশনাল পার্ক নিয়ে কথা বলব। যেখানে পর্বতে থাকা এক শ্রেণীর গেরিলারা কেমন আছে তা জানানোর চেষ্টা করব।  করোনাভাইরাস থেকে যাদের সুরক্ষিত রাখতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।আগামী জুন মাস পর্যন্ত ওই ন্যাশনাল পার্কে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মধ্য আফ্রিকার এক ছোট্ট দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে অবস্থিত বিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে কেমন আছে সেইসব গেরিলা, তা নিয়েই এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে মিডল ইস্টের এক সংবাদ মাধ্যম। সংবাদ প্রভাকর টাইমস তারই সূত্র ধরে তুলে ধরল তারই এক ছবি।

বিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক

1925 সালে বিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, যা আফ্রিকার প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যান হিসাবে পরিচিত। প্রায় 20,700 বর্গকিলোমিটার জুড়ে উদ্যানটি বিস্তৃত। এখানে নানা ধরনের বন্য জীবজন্তু আছে। তবে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ পার্কের আগ্নেয়গিরির এই পর্বতশ্রেণী এবং স্থানীয় প্রজাতিগুলির মধ্যে হিংসাত্মক সংঘাত, বড় ধরনের শিকার ও অবৈধ সংস্থানের বাড়বাড়ন্তের কারণে 1994 সাল থেকে উদ্যানটিকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নিয়ে আসা হয়েছে।

লকডাউন শুরু হওয়ার মুহূর্তে দেখা যায় বিরল দৃশ্য

লকডাউন শুরু হওয়ার মুহূর্তে কঙ্গোর এই ন্যাশনাল পার্কে গিয়ে দেখা গিয়েছিল বিরল দৃশ্য। মেঘে ঢাকা বৃষ্টিস্নাত ঘন জঙ্গল, যেখানে বাস পাহাড়ি গরিলার।জঙ্গলের পথে হেঁটে গভীরে প্রবেশ করতেই বনকর্মী ইশিবা ফিসফিস করে বলে সেই সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন-“আপনি দূরত্ব বজায় রাখুন।ওই দেখুন, ভাল করে দেখুন- 200 কিলো ওজনের রৌপ্যময় গরিলা পার হয়ে গেল। কাছে যাবেন না, যতটা তার সুরক্ষার জন্য ঠিক ততটাই আপনার জন্যও বটে।ওই গরিলার ঠিক পিছনেই এক মা গরিলা এসেছিল, যার কোলে ছিল তারই বাচ্চা। শিশুটি মায়ের শরীর আঁকড়ে ছিল। এরা কঙ্গোর জাতীয় উদ্যানেরই সদস্য।  বর্তমানে এখানে 24টি গরিলার পরিবারের বাস। বলছিলেন 2014 সাল থেকে এই পার্কে কাজ করে আসা গাইড ইশিবা। তিনি জানালেন-“এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য পর্যটকদের কাছে বন্ধ হতে চলেছে। এর আগে এত দীর্ঘ সময় ধরে এই পার্ক কখনো বন্ধ হয়নি। আমরা পর্যটকদের দিক থেকে এখানকার গরিলাদের জন্য কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না। তাই এই সিদ্ধান্ত।”

পাহাড়ি গরিলা সম্ভবত করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হতে পারে

পার্ক কর্তৃপক্ষ গত মাসেই ঘোষণা করেছিল যে বিপন্ন পাহাড়ি গরিলা সম্ভবত করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হতে পারে- এমনই পরামর্শ দিয়েছিলেন বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞরা। আর সেই পরামর্শ মেনেই তারা আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে সমস্ত সফর স্থগিত রেখেছে। গত 24 মার্চ সেই দিনে বিকেলের দিকেই ‘দ্য ন্যাশনাল’ সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিক পার্কটি পরিদর্শন করেন। ইতিমধ্যে মধ্য আফ্রিকার এই দেশে শ্বাসকষ্টের ভাইরাস নিশ্চিত হওয়ার ঘটনা দ্রুত বেড়েছে – গত 7 এপ্রিল পর্যন্ত 161 টি কেস ধরা পড়েছে এবং 18 জন মারা গেছে।প্রথম পজিটিভ পরীক্ষাটি 10 মার্চ রেকর্ড করা হয়েছিল, তবে কোভিড-19 মহামারীটি দেশের উত্তর কিভুতে পৌঁছে গিয়েছে। যা বিরুঙ্গা জাতীয় উদ্যা্নের কাছেই অবস্থিত।

বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ প্রকাশ

  • এই উদ্যানেই বাস গরিলাগুলির। বিরল প্রজাতির এই পাহাড়ি গরিলাগুলিকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী। করোনাভাইরাস যাতে তাদের সংক্রামিত করতে না পারে তার জন্য সদাসতর্ক পার্ক কর্তৃপক্ষ নজর রাখছে। সেইদিকে খেয়াল রেখে বার্লিনের বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞ এবং ফ্যাবিয়ন লেইন্টারটজ বিস্ময়প্রকাশ করে জানান-“আমরা জানি না যে গরিলাগুলির ভিতর ভাইরাস কীভাবে সংক্রামিত হতে পারে, তবে এর একটা ঝুঁকিও রয়েছে।”
  • গত মাসে নেচার জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল যে স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রকৃতির সর্বোত্তম অনুশীলনের নির্দেশিকা অনুসারে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, যেখানে মানুষের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানো উচিত বলে সুপারিশ করা হয়।সেখানে বলা হয়-মানুষের কাছ থেকে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
  • আরও বলা হয়-পাহাড়ি গরিলা মানুষের সাথে তাদের ডিএনএর 98 শতাংশ ভাগ করে নেয়। এমনকি, সাধারণ শীত, বিপন্ন প্রজাতির সুরক্ষা থেকেও তারা মারা যেতে পারে-এমনটাই বলছে বিশ্ব বন্যজীব সংস্থা।

ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ এডি কাম্বাল নজরদারি চালাচ্ছেন

ডিআরসি রুয়ান্ডা, এবং উগান্ডার গরিলাদের রক্ষা করে। তাদের রক্ষা করে এমনই একটি অলাভজনক ভেটেরিনারি সংস্থা গোমা-র গরিলা ডাক্তারদের প্রধান ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ এডি কাম্বাল জানান, “আমরা এই প্রাদুর্ভাবের দ্বারা উদ্বিগ্ন।” “এই ভাইরাস যদি গরিলাদের সংক্রামিত করে তবে তাদের বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে – বিশেষত বন্যেরা মানুষের উপস্থিতিতে থাকতে অভ্যস্ত নয়।” কারণ, কোনও চিকিৎসকই তাদের কাছে নিয়মিত গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবেন না। ডাঃ কম্বল, যিনি গরিলাদের অপারেশন এবং তাদের কেউ মারা গেলে পোস্টমর্টেম করেন, তিনিও আফ্রিকার পুরো 14 টি প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রের একটি দলের সঙ্গে থেকে এই রোগের বিকাশের উপর নজরদারি চালাচ্ছেন।

পাহাড়ি গরিলারা সুরক্ষিত

কোনওভাবেই যাতে এইসব প্রাণীরা এই ভয়ানক ভাইরাসে সংক্রামিত হতে না পারে তার জন্য যা যা করা দরকার এখানকার কর্তৃপক্ষ সেইসব ব্যবস্থা করেছেন। কারণ, এখানকার এই প্রাণী বিশ্বের মধ্যে খুবই বিরল।এই পাহাড়ি গরিলা দেখতে বিশালদেহী। তাদের দেহ পুরু আর  দীর্ঘ পশমে ঢাকা এবং যারা সাধারণত 2400 থেকে 4,000 মিটার উচ্চতায় বাস করে- তাদের কেবল বিরুঙ্গা পর্বতমালা অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় যা গণপ্রজা্তন্ত্রী কঙ্গো, রুয়ান্ডা এবং উগান্ডার সীমানা এবং দুর্ভেদ্য জাতীয় এই উদ্যানের সীমানা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে।এখানে সুরক্ষিত আছে এই পাহাড়ি গরিলা। কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পরই এই গরিলাদের সংখ্যা আজ বেড়েছে। যা খুবই ভাল খবর। কতটা বেড়েছে, তা একটি তথ্যের দিকে নজর দিলেই বোঝা যাবে।

বাড়ছে সংখ্যা

1981 সালে বিশ্বে মাত্র 254টি পাহাড়ি গরিলা অবশিষ্ট ছিল।এরপর ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর নেচার কর্জাভেশন এই প্রজাতিগুলিকে “সমালোচনামূলকভাবে বিপন্ন” হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করে। এরপরই তাদের নিবিড় সংরক্ষণের চেষ্টার পরে ছবিটা বদলাতে শুরু করে। 2013 সালের জরিপ অনুসারে, সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে আবার প্রায় 300 পাহাড়ি গরিলাকে কঙ্গোতে পাওয়া গেছে।তবে সংখ্যা বাড়লেই তো হবে না, এদের রক্ষা করাটাও একটা বড় কাজ। যা খুবই কঠিন কাজ, যেখানে চোরা শিকারির উপদ্রব রয়েছে। তাই পার্ক রেঞ্জারগুলি এই গরিলাগুলিকে রক্ষা করে গেলেও তারা হুমকির মধ্যে রয়েছে। বিগত 20 বছরে তাদের মধ্যে 1700 টিরও বেশি পাহাড়ি গরিলা নিহত হয়েছে -মূলত আনুমানিক 100 সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং স্থানীয় মিলিশিয়াদের হাতে, যারা এই অঞ্চলে খনিজ পদার্থের জন্য লড়াই করে এবং বন্যজীবকে শিকার করে।

পাহাড়ি গরিলাদের রক্ষা কবচ মিকেনো মাউন্ট

এই পাহাড়ি গরিলাগুলি কঙ্গোতে নিরাপদেই আছে বলে জানা গিয়েছে। বিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের গাইড ইশিবা অন্তত এমনটাই নিশ্চিত করেছেন। দূরে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি মিকেনো মাউন্টের দিকে ইশারা করে জানান- “গরিলাগুলি প্রতিদিন গড়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ চলাচল করে। তবে তাদের যদি কেউ তাড়া করে কিংবা হুমকি দেয় তবে তারা ওই আগ্নেয়গিরি পর্বতে উঠে পড়ে, যেখানে তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ। কারণ, জঙ্গি কিংবা শিকারিদের পক্ষে সেখানে পৌঁছনো সম্ভব নয়।এক কথায় ওই পর্বত ওদের কাছে রক্ষ কবচ।

এই কিছুর পরেও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে

কিন্তু উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। কারণ, 2018 সালের আগস্ট মাসে উত্তর কিভুতে মারাত্মক ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, যার ফলে আজ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যদিও কোনও গরিলা এখনও সেখানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি ঠিকই তবে তারা বেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সেটা বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা নিম্নভূমি গরিলা জনসংখ্যার দিকে নজর দিলেই বোঝা যায়। কারণ, সেখানে আবার গরিলার মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ বিশের দশকের গোড়ার দিকে ঐ ইবোলা ভাইরাসের দ্বারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাই এখন অনেকেরই আশঙ্কা- এই মারাত্মক করোনাভাইরাসে না আবার একই ক্ষতি হয়ে যায়।তবে সব বিপদ আশঙ্কার মধ্যেও বিরুঙ্গার পাহাড়ি গরিলাদের রক্ষা করাই এখন এক ও একমাত্র লক্ষ্য বলে মনে করেন গাইড ইশিবা। আপনারাও তাই চান তো? source: the national

Published on: এপ্রি ২১, ২০২০ @ ১৮:৩১


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

83 − = 75