Published on: নভে ১৬, ২০২৪ at ২৩:৫৯
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৬ নভেম্বর: আজ সারা দেশজুড়ে জাতীয় মুরগি দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ রাজ্যে কলকাতাতেও দিনটি উদযাপিত হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের উদ্যোগে। দিনটি বর্তমানে শুধুমাত্র ভারতজুড়ে উদযাপিত হলেও অদূর ভবিষ্যতে দিনটি সারা বিশ্বজুড়ে উদযাপন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের সভাপতি মদন মাইতি।
ভবিষ্যতে দিনটি “ওয়ার্ল্ড চিকেন ডে” হিসাবে পালিত হবে
এদিনের অনুষ্ঠানে পোলট্রি ফেডারেশনের সভাপতি মদন মাইতি বলেন- “১৬ নভেম্বর হল- ‘ন্যাশনাল চিকেন ডে’ বা ‘জাতীয় মুরগি দিবস’। কিন্তু আমরা ১৪ নভেম্বর থেকেই তা পালন করা শুরু করেছি। পৃথিবীতে ‘ওয়ার্ল্ড এগ ডে’ আছে কিন্তু ‘ওয়ার্ল্ড চিকেন ডে’ নেই। তাই ভারতবর্ষ প্রথম উদ্যোগ নেয়। ওয়ার্ল্ড এগ ডে শুরু হয়েছিল ভিয়েনা থেকে। অনেকেরই জানা নেই যে কোনও বিশেষ দিন উদযাপন করতে গেলে কোনও একটি দেশকে উদ্যোগ নিতে হয়। পর পর সাত বছর উদযাপন করলে ইউনাইটেড নেশন-এর কাছে আবেদন করা যায়। আমাদের দেশ ভারত এই নিয়ে পাঁচবার দিনটি উদযাপন করছে। সারা দেশেই আজ দিনটি উদযাপন হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি যে সাত বছর সম্পূর্ণ করার পর রাষ্ট্রসংঘের কাছে পাঠালে নিশ্চয় তারা একে অনুমদন দেবে। আর সেক্ষেত্রে এই দিনটি ১৬ নভেম্বর ওয়ার্ল্ড চিকেন ডে হিসাবে ঘোষণা করা হবে। যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন দিনটিকে আমরা ‘ন্যাশনাল চিকেন ডে’ হিসাবে ঘোষণা করে পালন করে চলেছি।“
চিকেন নিয়ে চলছে প্রচার
তিনি বলেন- “প্রত্যেকটা রাজ্য তাদের নিজেদের মতো করে পালন করছে। কেউ সকাল ১১টা-১২টা থেকে শুরু করেছে। আসাম সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গ একটু আলাদা ভাবে করছে। মূল উদ্দেশ্য – চিকেনের প্রমোশন। চিকেন সম্পর্কে মানুষকে একটু ভাল করে বোঝানো। চিকেন নিয়ে আলচনা করা এবং মানুষের মধ্যে চিকেন নিয়ে সম্যক ধারনা তৈরি করা। এটা আমাদের বেসিক উদ্দেশ্য। এটার সারা ভারতে দায়িত্বে আছে সি বসন্ত কুমারজি। তিনি সব কটি রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। প্যান ইন্ডিয়ার দায়িত্বে তিনি আছেন। প্রতি মুহূর্তে তিনি খোঁজ নিচ্ছেন। আমাদের ৭৫টি ট্যাবলো পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় কোনায় কোনায় ঘুরে বেড়াচ্ছে , এই চিকেনের প্রচার নিয়ে। এছাড়াও ১০ হাজার মতো ব্যানার সমস্ত মুরগি কাটিং সেন্টারে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চিকেনের রেসিপি-র বুকলেট এবং লিফলেট আমাদের গাড়িগুলিতে প্রচার করা হচ্ছে একেবারে দার্জিলিং থেকে শুরু করে পুরুলিয়া পর্যন্ত। “
এখন আমরা ১৪০ শতাংশ চিকেন উৎপাদন করি-মদন মাইতি
“আমাদের রাজ্যে প্রথম এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন আলিপুরদুয়ার জেলার জেলাশাসক। এতে প্রতিটি জেলাতেই মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখা গিয়েছে। এবং সেই আগ্রহ সমস্ত জেলাজুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে। আজ যারা চিকেন রন্ধন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে তাদের রেসিপিও কিন্তু পরের বছরের বু্কলেটে স্থান পাবে। আমরা যখনপশ্চিমবঙ্গে প্রথম আসি যখন এই ফেডারেশন মুভমেন্ট শুরু করি তখন ৩০-৩৫ শতাংশ চিকেন উৎপাদন করতাম। এখন আমরা ১৪০ শতাংশ চিকেন উৎপাদন করি। এ ৪০ শতাংশ চিকেন পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে পাঠাতে হয়। এখন যেটা খুব জরুরি, তা হল- আমাদের রাজ্যের চিকেন কনজামশন বাড়ানো। প্রতি মুহূর্তে ভারতে চিকেন কনজামশন বাড়ছে।“ বলেন মদন মাইতি।
ডিম উৎপাদনেও হারের বৃদ্ধিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম
তিনি বলতে থাকেন- “সবচেয়ে সস্তায় বিবেচিত হয় মুরগির মাংস। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগ, এবং প্রাণী সম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা কাজ করে থাকি। যাতে আমাদের রাজ্যে প্রোটিন ডেভেলপমেন্ট হয়। এই সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় আর ফেডারেশন যৌথভাবে চিকেন ডেভেলপমেন্টের কাজ করবে। তার সুফল আমরা পেয়েছি। চিকেন উৎপাদনে আমরা প্রথম স্থানে আছি। এরকম হয়েছে ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের সমান চিকেন উৎপাদন। যদি গ্রোথ রেটে যাই , তাহলে দেখা যাবে পশ্চিমবঙ্গ আর তেলেঙ্গানা সবার প্রথমে চিকেন উৎপাদনে। ডিম উৎপাদনেও হারের বৃদ্ধিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থানে আছে।“
রাজ্যে পোলট্রি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা
“আমাদের যে প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল যে পশ্চিমবঙ্গের পোল্ট্রি শিল্পকে উন্নত করা, অনেক মানুষকে এর সঙ্গে যুক্ত করা, মানুষের প্রয়োজনীয় প্রোটিন ডিম ও মাংসের যোগানের ব্যবস্থা করা তার জন্যে অনেকখানি সফল। উদাহরণ হিসাবে বলতে পারি, রাজ্যের হিসাব মতো তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ছিল এবং ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ছিল। এখন আমাদের পশ্চিমবঙ্গে পোলট্রি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমান আমাদের ফেডারেশনের এস্টিমেট অনুযায়ী প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। কর্মসংস্থান ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে।যে শিল্প মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, যে শিল্প মানুষের প্রোটিন খাদ্য সস্তায় যোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে, যে শিল্প পশ্চিমবঙ্গকে ভারতবর্ষের আঙিনায় প্রথম স্থানে আনার চেষ্টা করছে- সেই শিল্পের চিকেন প্রোডাকশানের জন্য ন্যাশনাল চিকেন উদযাপনের করা হচ্ছে। “
উজ্জ্বল উপস্থিতি
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার পার্থ দাস, তপন ঘোষ, ড. নীলোৎপল ঘোষ, অমি সারোগি, ড. মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল, ফেদারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধেশ্যাম রায়। তবে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দুই অভিনেত্রী তিয়াশা রায় ও কৌশানি মুখার্জি। ছিলেন চিকেন রন্ধন প্রতিযোগিতার বিচারক হয়ে আসা বিশিষ্ট শেফ ইন্দ্রজিৎ মুখার্জি।
প্রতিযোগীদের রান্না করা চিকেন টেস্ট করলেন অভিনেত্রী তিয়াশা
এদিন রঙিন বেলুন উড়িয়ে দিনটিকে সেলিব্রেশন করা হয়। শুরুতে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। চিকেন রন্ধন প্রতিযোগিতায় রান্না করা চিকেন খেয়ে দেখেন অভিনেত্রী তিয়াশা রায়। উচ্ছ্বসিত তিয়াশা সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে বলেন- “এমন একটা অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে। চিকেন আমার খেতে খুবই ভাল লাগে। আমি খেতেও ভালোবাসি এবার মানুষকে খাওয়াতেও ভালোবাসি। যখন মন খারাপ করে খেলে মন ভালো হয়ে যায়। এখানে এসে কত ধরনের চিকনের রেসিপি-র স্বাদ নিলাম। খুব ভালো লাগলো। আবার সেগুলি জানতে পারলাম। বাড়তিতে আমিও সেগুলি বানানোর চেষ্টা করব।“
চিকেন কেতে সেলিব্রেশন অভিনেত্রী কৌশানির
এদিন অনুষ্ঠানে একট আস্ত মুরগি রোস্ট করে রাখা ছিল। সেটি কেটে সেলিব্রেশন করা হয়। চিকেনটি কাটেন অভিনেত্রী কৌশানি। তিনি বলেন-“ চিকেন আমার খুবই প্রিয়। আমি মটন খাই না। আমার অলতারনেটিভ হচ্ছে- হয় মাছ না হয় চিকেন। যে কোনও অনুষ্ঠানে যাই যখন তখন তারা জানে যে কৌশানি আসছে মানে চিকেন করতে হবে। আজ এত সুস্বাদু আইটেমের নাম শুনলাম যে আফশোস হচ্ছে – আমি সেটা টেস্ট করতে পারিনি। আমার ভাগ্যে ছিল না। পরে যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে পরখ করতে পারব।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যতম বিশিষ্ট অতিথি হসাবে উপস্থিত চিকেন রন্ধন প্রতিযোগিতার বিচারক শেফ ইন্দ্রজিৎ চিকেনের উপযোগিতা নিয়ে বলেন। সুস্বাদথ্যের জন্য চিকেন কতটা উপযোগী সেই কথা বিস্তারিতভাবে বলেন তিনি।
Published on: নভে ১৬, ২০২৪ at ২৩:৫৯