Mystical Mizoram: এক অভূতপূর্ব রোড-শো দেখাল দেশের দ্বিতীয় সেরা শিক্ষিত রাজ্য পর্যটনেও কিভাবে সেরা হতে চলেছে

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: এপ্রি ৫, ২০২২ @ ২৩:৫৩

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৫ এপ্রিল: পর্যটনের উপর একাধিক রোড-শো হয়েছে। আগামিদিনেও হবে। কিন্তু এমন অভূতপূর্ব রোড-শো সত্যিই প্রশংসার ঊর্দ্ধে। উত্তর-পূর্ব ভারতের একটা ছোট্ট রাজ্য নিজেদের চেষ্ঠায় কিভাবে পর্যটনকে সামনে রেখে দেশের মধ্যে সেরা হতে চলেছে তা না দেখলে বিশ্বাসই করা সম্ভব হত না। দেশের মধ্যে শিক্ষার দ্বিতীয় সেরা হিসেবে পরিচিত মিজোরাম এবার পর্যটনেও যে সেরার জায়গা ছিনিয়ে নিতে চলেছে তা কিন্তু পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে কলকাতার পার্ক হোটেলে অনুষ্ঠিত সোমবারের ‘মিসটিকল মিজোরাম’ রোড-শো-এ।কোভিড মহামারির পর কত তাড়াতাড়ি যে মিজোরাম পর্যটনে নিজেদের প্রস্তুত করে ফেলেছে সেতাই তারা এদিন তুলে ধরে। একই সঙ্গে তারা পশ্চিমবঙ্গের ভ্রমণপিপাসু মানুষদের তারা আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছে যে আপনারা এবার মিজোরাম আসুন। ঘুরে দেখুন। নিজের চোখে দেখেই বিচার করুন – কেমন এই রাজ্য। একবার এলে বারে বারেই আসতে ইচ্ছা করবে। একে একে তারা তুলে ধরল তাদের সমস্ত পরিকল্পনার কথা।

মিজোরাম সরকারের পর্যটন বিভাগের ডিরেক্টর ভানতাউল লালেঙ্গমাউইয়া স্বাগত ভাষণে তুলে ধরলেন মিজোরামের কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের কথা।তিনি জানালেন যে কোভিড মহামারীর পর কিভাবে তারা পর্যটনে উন্নতি ঘটিয়েছেন। এতদিন যারা উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তারা এবার দেখবে যে মিজোরাম পর্যটনে নিজেদের কোন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। জল-জঙ্গল-পাহাড়ের ঘেরা অসাধারণ প্প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর ছোট রাজ্যটি পর্যটনে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনপ্রেমীদের তারা স্বাগত জানাতে তৈরি। ইতিপূর্বে জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, গজরাট, মধ্যপ্রদেশ ছাড়াও দক্ষিণের রাজ্যগুলিও বাংলার পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নানা লোভনীয় প্যাকেজ শুরু করেছিল। এবার তাদের সকলকেই পিছনে ফেলে দিতে চলেছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। এই রাজ্যে বেড়াতে গেলে শুধু ভ্রমণের আনন্দই উপভোগ করা হবে না সঙ্গে মিলবে অবিশ্বাস্য সমস্ত স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

  • প্রতিদিন দিল্লি, কলকাতা, গুয়াহাটি ও ইম্ফল থেকে বিমান উড়ছে আইজলের পথে।
  • যদিও এই রাজ্যের সঙ্গে এখনও সেভাবে রেল সংযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে আশা করা যাচ্ছে যে আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে বৈরোবি পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়ে যাবে।
  • পাশাপাশি, সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে গুয়াহাটি, শিলং, শিলচর ভায়া জাতীয় সড়ক দিয়ে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে পন্য, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আর অর্থনৈতিক উন্নতির উপর ভিত্তি করে হবে এই যোগাযোগ।আমরা আধুনিক এবং সুষ্ঠু আতিথেয়তা এবং পর্যটনের সমস্ত জ্ঞানকে মাথায় রাখছি।জানান ডিরেক্টর।

কেন আপনি মিজোরাম বেড়াতে যাবেন

মিজোরামের ডিরেক্টর ভানতাউল বলেন- “আমাদের মেইন ইউএসপি হল- ইকো অ্যাডভেঞ্চার, প্রকৃতি নির্ভর এবং সংস্কৃতি।”

আমাদের থিমঃ সবচেয়ে ভালো, দাবি করছি- শুদ্ধ প্রকৃতি, উপজাতিদের জীবনযাত্রা, মজা আর বাইরের দৃশ্য।সেই জায়গা থেকে বলা যায় যে এখানে এলে আপনি যা পাবেন, তা হল- অ্যাডভেঞ্চার এবং ইকো ট্যুরিজম, বন্যপ্রাণ এবং ইকো ট্যুরিজম, প্রকৃতি নির্ভর পর্যটন, সংস্কৃতি অথবা ঐতিহ্যের পর্যটন, সঙ্গীত পর্যটন, ক্রীড়া পর্যটন, ফ্যাশন ট্যরিজম, গলফ ট্যুরিজম,ওয়েলনেস ট্যুরিজম, রিলিজিয়াস ট্যুরিজম, ভোল্যান্ট্যুরিজম, গ্রাম ভিত্তিক ইকো ট্যুরিজম, মাইস ট্যুরিজম, উৎসব আর অনুষ্ঠান, রন্ধন সম্পর্কীয় শিল্প।

অ্যাডভেঞ্চার আর ইকো ট্যুরিজমঃ এতে আছে র‍্যাফটিং, ট্রেকিং, হাইকিং, আউটডোর কম্পিং, রক ক্লাইম্বিং, প্যারাগ্লাইডিং, র‍্যাপেলিং, মাউন্টেইন বাইকিং, সাইক্লিং।

প্রকৃতি নির্ভর পর্যটনঃ বার্ড ওয়াচিং, নেচার ফোটোগ্রাফি, তারা দেখা, চমপিং, পায়ে হেঁটে গ্রাম ভ্রমণ, ফিসিং, অরন্যে স্নান, প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে পথচলা।

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যঃ ভ্যাংচ্ছিয়া, লিয়াংপুই, চাওয়ংতালাই, মুয়ালছেং, নৃত্য, উৎসব, উপজাতিদের জীবনযাত্রা, ঝুমিং।

স্পোর্টস ট্যুরিজমঃ ফুটবল ট্যুরিজম, ফুটবল টুরিজমের ব্যবসাত্যিক দিক, তরুণদের কাছে গভীর আবেগ, আইজল ফুটবল ক্লাব, হোটেল, হোমস্টে পূর্ণ ভাবে, ফুটবল উৎসব।

গলফ ট্যুরিজমঃ ১৮ হোল গলফ কোর্স, ৭২ একর এরিয়া-সবুজ, ৩০টি ইকো লগ হাট, ক্যাফেটেরিয়া/ক্লাব হাউস, ডর্মিটোরিস, পুল টেবিল এবং গলফ কার্ট, স্থানী ও আভ্যন্তরীন ভ্রমণের ব্যবস্থা, গলফ প্রতিযোগিতা।

সুস্থতা পর্যটনঃ ৮টি ইকো লগ হাট, জৈব খামার, সুস্থতা ও স্বাস্থ্য, স্থানীয় ও আভ্যন্তরীন পর্যটনের প্রসার।

সাইটসিন্ঃ অনেক সাইট সিন, সপ্তাহান্তে ঘোরার জায়গা, দিনের পশ্চাদপসরন শুদ্ধ বাতাস এবং দূষণহীন বাতাস, ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ।

দায়িত্বশীল পর্যটন উদ্যোগ

মিজোরাম দায়িত্বশীল পর্যটন নীতি ২০২০, দায়িত্বশীল পর্যটন উদ্যোগ, পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদী (চিরস্থায়ী) ভরণপোষণ নিশ্চিত করার জন্য খামরং, আইলাউং এবং থেনজাওলকে পাইলট-ফ্রেম করা কৌশল এবং প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।

পর্যটনে বিনিয়োগঃ মিজোরাম

  • 50% পর্যন্ত সম্ভাব্যতা/প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরিতে ভর্তুকি।
  • নন-বিদ্যুত উন্নয়নে ভর্তুকি
  • আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের উপর 4% ভর্তুকি
  • শক্তি ভর্তুকি
  • প্ল্যান্ট এবং মেশিনারিগুলিতে পরিবহন ভর্তুকি

বিনিয়োগযোগ্য প্রকল্প

স্টার রেটেড হোটেল, হিল রিসর্ট, রোপওয়ে, স্কাইওয়াক, অ্যামুইজমেন্ট পার্ক।

এক নজরে মিজোরাম পর্যটন

  • পর্যটন সেবা প্রদানকারীঃ ৭২টি হোটেল ৬০৮টি ঘর, ১৩টি বেসরকারি হোমস্টে, ৭৭টি সরকারি পৃষ্ঠপোষক হোমস্টে, ৮টি ট্যুর অপারেটর, ৪১জন ট্রাভেল এজেন্ট, ৮৯জন রাজ্য পর্যায়ে নথিভুক্ত ট্যুর গাইড।
  • সরকারি বাসস্থানঃ ৬৯টি ট্যুরিস্ট লজ, সরকারি অধীনে ৪২টি, আউটসোর্স২৭টি/
  • নবজাতক পর্যায়ে পর্যটন উন্নয়ন, প্রস্তুত, এইচআরডির জন্য পরিমাণ এবং মানের সীমাবদ্ধতা, সহায়ক সুবিধার অভাব, শিক্ষাগত/গবেষণা কার্যক্রমের অনুপস্থিতি।
  • মিজোরাম জনসংখ্যা ১১ লাখ ২০২০ সালের জনগণনা অনুসারে। ১.৬১ ভিজিটর- কোভিড মহামারীর আগে ২০১৯-২০২০ সালে মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ ভিজিট করে।বাৎসরিক বৃদ্ধির হার ৮১.০৪ শতাংশ।

চাকায় মিজোরাম পর্যটন

মুইফাং সাইকেল প্রতিযোগিতা,-৫৩ কিমি, সাকাওয়ারমুতুয়াই লাং মাউন্টেইন বাইক চলানোর পথ, হেরিটেজ ওয়াক-আইজল থেকে লাংলেং-২৩ কিমি, ম্যারাথন, পর্যটনে সাইক্লিং।

সব মিলিয়ে এক অত্যাশ্চর্য্য মিজোরাম –এর এক নয়া অধ্যায় দেখার জন্য এখন থেকেই তৈরি হোন। কারণ, ইতিমধ্যেই এ রাজ্যের ভ্রমণ পিপাসুরা মিজোরাম ভ্রমণের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। তারা বলছে, অনেক তো হল –ভারতের উত্তর, দক্ষিণ, মদঝ্য, পশ্চিমের রাজ্যগুলিতে বেড়ানো। এবার উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যেই ঘুরে আসা যাক না। খরচা কম। যাতায়াতে সময়ও কম। মিজোরাম পর্যটিওন বিভাগ থেকে পর্যটকদের জন্য দিয়েছে এক বার্তা। যা আপনার বেড়ানো কিংবা ভ্রমণকে করে তুলতে পারে আরও সুন্দর ও শান্তিময়। আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই বার্তা-

  • আমি একজন দায়িত্বশীল ভ্রমণকারী হওয়ার অঙ্গীকার করছি; যখন আমি নতুন জায়গাগুলি অন্বেষণ করব, তখন আমি পায়ের ছাপ ছাড়া আর কিছুই রাখব না, এবং কেবল স্মৃতি নিয়ে যাব।
  • আমি ক্ষতি করব না, যা আমার ক্ষতি করে না।
  • আমি পরিষ্কার এবং সবুজ ভ্রমণ করব, আমি স্থানীয় সংস্কৃতিকে সম্মান করব;
  • এবং আমি মজবুত পর্যটন প্রচার করব।

তাহলে আর দেরী কেন, বেড়িয়ে পড়ুন মিজোরাম- স্বপ্নের রাজ্যে, প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে আপন করে নিতে।

Published on: এপ্রি ৫, ২০২২ @ ২৩:৫৩


শেয়ার করুন