প্রকৃতি-পাহাড়-অরণ্যে ঘেরা মিজোরাম পর্যটকদের জন্য সেরা-VANTAWL LALENGMAWIA

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: এপ্রি ৬, ২০২২ @ ১৮:৩৪
Reporter:Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৬ এপ্রিল: মাত্র দু’দিন আগেই কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মিজোরাম রাজ্য পর্যটন বিভাগের এক অসাধারণ রোড-শো। তাতে তুলে ধরা হয়ে মিজোরামের পর্যটন ও আনুষঙ্গিক সমস্ত তথ্য আর প্রয়োজনীয় বিষয়। সংবাদ প্রভাকর টাইমস এই রোড-শো অংশ নিয়েছিল। এসপিটি মিজোরাম সরকারের পর্যটন বিভাগের অধিকর্তা ভানতাওয়াল লালেঙ্গমাউইয়া’র মুখোমুখি হয়। কোভিড পরবর্তী সময়ে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য কিভাবে নিজেদের পর্যটনের উপযুক্ত করে তুলেছে, কি তাদের পরিকল্পনা, কতটা সম্ভাবনা দেখছে তারা পর্যটন নিয়ে, কেনই বা তারা পশ্চিমবঙ্গকে এতটা ভরসা করছে- একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন অধিকর্তা ভানতাওয়াল।

এসপিটি: কোভিড পরবর্তী সময়ে মিজোরাম কিভাবে নিজেদের পর্যটনের উপযুক্ত করে তুলেছে?

ভানতাওয়াল: দেখুন, কোভিড পর্বর্তী সময়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্য মিজোরাম নিজেদের পর্যটনের উপযুক্ত করে তুলতে নানা ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যেখানে একদিকে যেমন পর্যটনের প্রসার হচ্ছে অন্যদিকে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা চাই, মিজোরাম তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলুক।

এসপিটি: পর্যটনের প্রসারে আপনাদের পরিকল্পনা কি?

ভানতাওয়াল: আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল দায়িত্বশীল পর্যটন উদ্যোগ-মিজোরাম দায়িত্বশীল পর্যটন নীতি ২০২০। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা রাজ্যের পর্যটনকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। আপনাকে মনে রাখতে – দায়িত্ব ছাড়া কোনও কিছুই সফল হয় না। তাই আমরা এই নীতিকে অত্যন্য গুরুত্ব দিয়েছি, যাতে স্থানীয় মানুষের পাশপাশি পর্যটকরা দায়িত্বশীল হয়ে উঠুক।এতে পরিবেশ হয়ে উঠবে আরও সুন্দর। পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদী (চিরস্থায়ী) ভরণপোষণ নিশ্চিত করার জন্য খামরং, আইলাউং এবং থেনজাওলকে পাইলট-ফ্রেম করার কৌশল এবং প্রচেষ্টা নেওয়া শুরু হয়েছে।

এসপিটি: পর্যটন নিয়ে সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?

ভানতাওয়াল: আপনাকে প্রথমেই জানিয়ে রাখি, আমাদের রাজ্য মিজোরাম সব থেকেই সম্ভাবনায় ভরপুর। শিক্ষা, খেলাধুলো থেকে শুরু করে সংস্কৃতি, ঐতিহ্যে আমাদের সুনাম রয়েছে। শিক্ষায় আমরা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা শিক্ষিত রাজ্য।তাছাড়া আমাদের রাজ্যের মোট জমির ৮৫.৪১ শতাংশই হল অরণ্য নির্ভর। সেদিক থেকে দেখতে গেলে পর্যটনের প্রধান উপকরণই কিন্তু আমাদের রয়েছে। কোনও তৈরি করা জিনিসের উপর ভিত্তি করে নয়, একেবারে প্রকৃতি নির্ভর, শুদ্ধ বাতাসে পূর্ণ দূষণহীন বেড়ানোর স্থান আমাদের মিজোরাম। মিজোরাম হল প্রকৃতি-পাহাড়-জঙ্গলের মেলবন্ধন।এককথায় পর্যটনের সেরা জায়গা হল মিজোরাম। আমরা বিশ্বাস করি পর্যটনে অশেষ সম্ভাবনা আছে এখানে।

এসপিটি: রোড-শো’এর জন্য কেন পশ্চিমবঙ্গকে বেছে নিলেন ?

ভানতাওয়াল: কারণ, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে মিজোরামের দীর্ঘদিনের একটা যোগসূত্র আছে।আমাদের রাজ্যের বহু ছেলে-মেয়ে কলকাতায় পড়াশুনো করতে আসে।কাজের সূত্রে তাদের অনেকেই এই রাজ্যে আসা-যাওয়া করে। সেই থেকে বাংলার সংগে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।বিশেষ করে মিজোরামের সঙ্গে রাজ্যের ঘনিষ্ঠতার কথা কলকাতার মানুষ জানে না। আমরা মনে করি, এই সম্পর্কের কথা জানানো দরকার। পর্যটনের মাধ্যমে আমরা একে-অপরের আরও কাছাকাছি আসতে পারব।এটি পশ্চিমবঙ্গ এবং মিজোরামের মানুষের সাথে সত্যিকারের সংযোগ স্থাপন করে। তাই আমরা এখানে এসেছি, রোড-শো –এর আয়োজন করেছি। আসুন মিজোরামের রঙের সাথে শেয়ার করুন এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছ থেকে কলকাতার আমন্ত্রিত জনগণকে মিজোরামের রঙের ঝলক অনুভব করার জন্য হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে আসুন।

এসপিটি: এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প কি আছে ?

ভানতাওয়াল: আমাদের রয়েছে সবচেয়ে বড় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রকল্প। মাল্টি মডেল প্রকল্প। কলকাতা বন্দর থেকে মায়নামার। কলকাতা থেকে মায়নামার এই সরকের কাজ সম্পূর্ণ হলে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভ্রমণ দূরত্ব ৩ থেকে ৪ দিন হবে।ফলে উত্তর-পূর্বের মানুষ উপকৃত হবে।

এসপিটি: প্রধানমন্ত্রী মোদি উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, এতে কতটা অগ্রগতি হয়েছে?

ভানতাওয়াল: দেখুন, প্রধানমন্ত্রী মোদিজি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করেছে। এতে কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমান আর্থিক বছরের ক্যালেন্দারে ১০টি গন্তব্যে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আমরা আশা করব, কেন্দ্রীয় সরকারের এই নীতিতে মিজোরাম উপকৃত হবে।

এসপিটি: ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল –যোগাযোগ ব্যবস্থা- সেটা এখন কতটা মজবুত?

ভানতাওয়াল: আগের চেয়ে এখন অনেক উন্নত হয়েছে। আকাশপথে কলকাতা থেকে মাত্র ৪৫ মিনিতেই পৌঁছে যাবেন আইজল।

  • আকাশপথঃ এছাড়াও এয়ার ইন্ডিয়া, গো ফার্স্ট, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স এবং অ্যালায়েন্স এয়ার দিল্লি, কলকাতা, গুয়াহাটি এবং ইম্ফল থেকে প্রতিদিন পরিষেবা পরিচালনা করে।
  • রেলপথঃ নিকটতম রেলপথ হল আসামের শিলচর যা আইজল থেকে প্রায় 6 ঘন্টার পথ, আইজল থেকে বাস এবং ম্যাক্সি ক্যাব পাওয়া যায়।
  • সড়কঃ NH-54 শিলচরের মাধ্যমে আইজলকে দেশের বাকি অংশের সাথে সংযুক্ত করে। গুয়াহাটি এবং শিলচর থেকে আইজল পর্যন্ত বাস এবং ট্যাক্সি পাওয়া যায়।

এসপিটি: পর্যটন নিয়ে মিজোরামের প্রধান লক্ষ্য কি?

ভানতাওয়াল: আমাদের মেইন ইউএসপি হল- ইকো অ্যাডভেঞ্চার, প্রকৃতি নির্ভর এবং সংস্কৃতি।আমাদের থিম হল সবচেয়ে ভালো, দাবি করছি- শুদ্ধ প্রকৃতি, উপজাতিদের জীবনযাত্রা, মজা আর বাইরের দৃশ্য।সেই জায়গা থেকে বলা যায় যে এখানে এলে আপনি যা পাবেন, তা হল- অ্যাডভেঞ্চার এবং ইকো ট্যুরিজম, বন্যপ্রাণ এবং ইকো ট্যুরিজম, প্রকৃতি নির্ভর পর্যটন, সংস্কৃতি অথবা ঐতিহ্যের পর্যটন, সঙ্গীত পর্যটন, ক্রীড়া পর্যটন, ফ্যাশন ট্যুরিজম, গলফ ট্যুরিজম,ওয়েলনেস ট্যুরিজম, রিলিজিয়াস ট্যুরিজম, গ্রাম ভিত্তিক ইকো ট্যুরিজম, মাইস ট্যুরিজম, উৎসব আর অনুষ্ঠান, রন্ধন সম্পর্কীয় শিল্প। আপনাকে এক স্মৃতিমধুর অভিজ্ঞতা দেবে।

Published on: এপ্রি ৬, ২০২২ @ ১৮:৩৪


শেয়ার করুন