চারধাম ও হেমকুন্ড সাহিব যাত্রায় ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ১৮ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৭১

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: এপ্রি ২৮, ২০২৩ @ ১৭:১৪

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৮ এপ্রিল: উত্তরাখণ্ডে চারধাম যাত্রায় এবার তীর্থযাত্রীদের ঢল নেমেছে। ভিড় বাড়ছে হেমকুন্ড সাহিবও। ২৪ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত হেমকুন্ড সাহেব সহ চারধাম যাত্রার জন্য রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধীকরণ ১৮ লক্ষ ছাড়িয়েছে। তবে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ২৫-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রাখা হয়েছে, যদিও যাত্রা চালু আছে। তীর্থযাত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই সময় যারা যাত্রা করছেন তারা যেন আবহাওয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নজর রেখে যাত্রা করেন।

চারধাম খুলে দিয়েছে

ইতিমধ্যে চারধাম খুলে দিয়েছে। ২২ এপ্রিল ২০২৩ যমুনোত্রী ও গঙ্গোত্রী ধামের দ্বার খুলেছে। ২৫ এপ্রিল ২০২৩ খুলেছে কেদারনাথ ধামের দ্বার। সব শেষে ২৭ এপ্রিল ২০২৩ –এ বদ্রীনাথ ধামের দ্বার খুলেছে। উত্তরাখণ্ডের পঞ্চম ধাম, হেমকুন্ড সাহিব খুলছে ২০ মে ২০২৩। তীর্থযাত্রীরা ২০মে থেকে, গুরুদুয়ারা হেমকুন্ড সাহিব দেখতে পারবেন এবং পরবর্তী পাঁচ মাস দর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

উত্তরাখণ্ড সরকার তীর্থযাত্রিদের জন্য রেজিস্ট্রেশন শুরু করে দিয়েছে অনেক আগে থেকে।ইতিমধ্যে উত্তরাখণ্ডের এই পাঁচ ধামে ১৮ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৭১জন তাদের নাম তীর্থযাত্রার জন্য নিবন্ধীকরণ করেছেন। উত্তরাখণ্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট বোর্ড থেকে সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে পাঠানো রেজিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী চার ধাম ও হেমকুণ্ড সাহিব-এর বিস্তারির পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।

কোথায় কত রেজিস্ট্রেশন হয়েছে

২৪ এপ্রিল ২০২৩ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যমুনোত্রী ধামে ২,৯৩,০৩৫জন নাম নিবন্ধীকরণ করিয়েছেন। গঙ্গোত্রীতে ৩,৩৬,৪৭৭জন, কেদারনাথে ৬,৫২,১২৮ জন, বদ্রীনাথে ৫,৫০,৮৮৯জন এবং হেমকুণ্ড সাহিব-এ ১৪,১৪২জন নাম নিবন্ধীকরণ করিয়েছেন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ১৮,৪৬,৬৭১ জন।

উত্তরাখন্ড সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চারধাম ও হেমকুণ্ড সাহিব-এ মোট ৪৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৮৩জন তীর্থযাত্রী দর্শন করেছিলেন। সবচেয়ে বেশি দর্শন করেছে বদ্রীনাথ ধাম। সেখানে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ লক্ষ ৪০ হাজার ৪৭৩জন তীর্থযাত্রী দর্শন করেছিলেন। এরপরেই ছিল কেদারনাথ ধাম- সেখানে দর্শন করেছিলেন ১৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৪০জন। তৃতীয় স্থানে ছিল যমুনোত্রী। সেখানে দর্শন করেছিলেন ৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৩৭১জন। চারধাম যাত্রায় তীর্থযাত্রী আগমনের নিরীখে চতুর্থ স্থানে ছিল গঙ্গোত্রী, সেখানে দর্শন করেছিলেন ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৩৫জন। তবে আরও এক তীর্থক্ষেত্র আছে যা পঞ্চম ধাম হেমকুণ্ড সাহেব, এটি শিখদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও পবিত্র। সেখানে এ বছর ১ লক্ষ ৯০ হাজার ২৬৪ জন দর্শন করেছিলেনন। এই হিসাবের দেখে মনে করা হচ্ছে এবার এই রেকর্ডকেও ছাপিয়ে যেতে পারে তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা।

গঙ্গোত্রী

উত্তরাখণ্ডে উত্তরকাশী জেলায় অবস্থিত গঙ্গোত্রী একটি শহর ও নগর পঞ্চায়েত। এটি ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত একটি হিন্দু তীর্থ শহর। গঙ্গোত্রী হিমাদ্রি হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে ৩,১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।এটি সেই জায়গা যেখানে গঙ্গা নদী একটি বরফ-সজ্জিত অববাহিকা থেকে চূড়া করে এবং ত্রিবেণী সঙ্গমে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়, যেখানে তারা এখন গঙ্গা নামে একটি নদী হিসাবে বিবেচিত হয়। গঙ্গোত্রী হল ভারতের ছোট চার ধাম তীর্থযাত্রা সার্কিটের চারটি স্থানের মধ্যে একটি, যেটি হিন্দুদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। হিন্দু দেবতা গঙ্গা মায়ের জন্মস্থান। হিন্দুরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পূজা করে আসছে।এখানে গতবছর ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৩৫জন তীর্থযাত্রী দর্শন করেছিলেন। এবার রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৩,৩৬,৪৭৭জন।

যমুনোত্রী

যমুনোত্রী হচ্ছে যমুনা নদীর উৎস এবং হিন্দু ধর্মে যমুনা দেবীর আসন। এটি ৩,২৯৩ মিটার (১০,৮০৪ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত। গাড়ওয়াল হিমালয়ের পাদদেশে এবং প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল)-এ অবস্থিত উত্তরকাশী উত্তর। এটি ভারতের ছোট চার ধাম তীর্থস্থানের চারটি সাইটের মধ্যে একটি। যমুনোত্রির পবিত্র মন্দির, যমুনা নদীর উৎস, গাড়ওয়াল হিমালয়ের পশ্চিমতম মন্দির, এটি বান্দর পুঞ্চ পর্বতের এক প্রান্তে অবস্থিত। যমুনোত্রির প্রধান আকর্ষণ হ’ল যমুনা দেবীকে উৎসর্গ করা মন্দির এবং জাঙ্কি চত্তির পবিত্র তাপ স্প্রিংস (৭  কিমি দূরে)। এখানে গত বছর ৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৩৭১ তীর্থযাত্রী দর্শন করেছিলেন।এবার ২৪ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত এখানে দর্শনের জন্য রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ২,৯৩,০৩৫জন।

কেদারনাথ ধাম

কেদারনাথ মন্দির হিন্দুদের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান। এটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গাড়োয়াল হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত কেদারনাথ শহরে মন্দাকিনী নদীর তীরে স্থাপিত একটি শিব মন্দির। এখানকার তীব্র শীতের জন্য মন্দিরটি কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি খোলা থাকে। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয় মাসের জন্য উখিমঠে নিয়ে গিয়ে পুজো করা হয়। এই অঞ্চলের প্রাচীন নাম ছিল কেদারখণ্ড; তাই এখানে শিবকে কেদারনাথ (অর্থাৎ, কেদারখণ্ডের অধিপতি) নামে পূজা করা হয়। মন্দিরটি খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ-নবম শতাব্দীর তামিল নায়ানার সন্তদের দ্বারা পাডল পেত্রা স্থলম বা মহাদেশের ২৭৫টি অতি পবিত্র শিবক্ষেত্র হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।এখানে গত বছর ১৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৪০ জন তীর্থযাত্রী দর্শন করেছিলেন। এবছর ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৬,৫২,১২৮ জন কেদারনাথ ধাম দর্শনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

বদ্রীনাথ ধাম

বদ্রীনাথ মন্দির হল উত্তরাখন্ডের বদ্রীনাথ শহরে অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির। এই মন্দিরের অপর নাম বদ্রীনারায়ণ মন্দির। এটি হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর মন্দির। বদ্রীনাথ শহর ও বদ্রীনারায়ণ মন্দির  ‘চারধাম’ ও ‘ছোট চারধাম’ নামে পরিচিত তীর্থগুলির অন্যতম। বদ্রীনাথ মন্দির ‘দিব্য দেশম’ নামে পরিচিত ১০৮টি বৈষ্ণব তীর্থেরও একটি। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষভাগ থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ছয় মাস এই মন্দিরটি খোলা থাকে। শীতকালে  হিমালয় অঞ্চলের তীব্র প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য ওই সময় এই মন্দির বন্ধ রাখা হয়। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় গাড়োয়াল পার্বত্য অঞ্চলে অলকানন্দা নদীর তীরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,১৩৩ মি (১০,২৭৯ ফুট) উচ্চতায় এই মন্দিরটি অবস্থিত। বদ্রীনাথ ভারতের জনপ্রিয় তীর্থগুলির মধ্যে একটি। এখানে গত বছর ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ লক্ষ ৪০ হাজার ৪৭৩জন তীর্থযাত্রী দর্শন করেছিলেন। এবার ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত এখানে দর্শনের জন্য মোট ৫,৫০,৮৮৯জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

Published on: এপ্রি ২৮, ২০২৩ @ ১৭:১৪


শেয়ার করুন