ভারতে আইনি বিশ্ববিদ্যালয়-এর মধ্যে প্রথম ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি মিট’-এর আয়োজন করে নজির গড়ল WBNUJS

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: এপ্রি ২৯, ২০২৩ @ ২৩:৫১
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৯ এপ্রিল: আজ ও আগামিকাল কলকাতায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিকাল সায়েন্সেস বা ডবল্যুবিএনিউজেএস ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি মিট-২০২৩’ এর আয়োজন করেছে।ভারতে কোনও আইনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তারাই প্রথম এই অসাধারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এক নয়া নজির গড়ে ফেলল। ডবল্যুবিএনিউজেএস-এর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নির্মল কান্তি চক্রবর্তী জানিয়েছেন সারা ভারতের রাজ্যগুলিতে যে সমস্ত আইনি বিশ্ববিদ্যালয় আছে তার মধ্যে তারাই প্রথম এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করল।প্রফেসার চক্রবর্তী আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরে বলেন- এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশে যা ভোগোলিক সম্পদ তাতে মাত্র ২০-২৫% আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি। এখনও প্রচুর আছে যেগুলো আমরা এখনও নিয়ে আসতে পারিনি।

অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য

প্রতি বছর গোটা পৃথিবী জুড়ে উদযাপিত হয় বিশ্ব আইপি দিবস। সেই অনুযায়ী, এই বছরের থিম হল- “আইপিআর-এর মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতার অন্তর্ভুক্তি- পিরামিডের দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত প্রতীকিতে”। এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই হল- মেধা সম্পত্তি অধিকার বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রাপ্ররটি মিট ও ভূতাত্ত্বিক সনাক্তকরণ বা জিওলজিকাল আইডেন্টিফিকেশন(জিআই)-এর মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

গাছের গোড়ায় জল ঢেলে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ

এদিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় একটু অভিনব ভাবে। চিরাচরিত প্রদীপ জ্বালিয়ে নয় গাছের গোড়ায় জল ঢেলে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ হয়। এর মাধ্যমে আয়োজকরা একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন- গাচ বাঁচলে প্রাণ বাঁচবে। অর্থাৎ পরিবেশ রক্ষা পাবে। প্রকৃতিকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য হোক। তাহলেই বাকি কাজ সুন্দরভাবে এগোবে।

সমাজ ছাড়া শিক্ষা সম্পূর্ণ নয়-উপাচার্য প্রফেসর ড. এন কে চক্রবর্তী

অনুষ্ঠানের শুরুতে জেনইউজেএস-এর উপাচার্য প্রফেসর ড. নির্মল কান্তি চক্রবর্তী বলেন- আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বহু মানুষ নানা ধরনের শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত। যারা এধরনের শিল্পকর্মে যুক্ত তাদের এখানে আনতে পেরে আমরা খুব খুশি।তারাও আমাদের সমাজের একটা গুরুত্বপুর্ণ অংশ। সমাজ ছাড়া শিক্ষা সম্পূর্ণ নয়। তাই সকলকে আনতে পেরে খুশি।

জিআই সম্পদকে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত করে সাহয্য করা

এর আগে এই বিষয়ে বিশেষভাবে তিনি আলোকপাত করেন। বলেন-“রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা সেইসব মানুষ যারা এই সমস্ত শিল্প ও সম্পদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আছেন তাদের যাতে কাজে লাগাতে পারি এবং সুযোগ দিতে পারি সেই লক্ষ্য রেখেই আজকের এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলা থেকেই অংশ নিয়েছেন। যারা প্রান্তিক মানুষ আছে, তাদের যে হাতের কাজ শুধু আমাদের পশ্চিমবঙ্গ নয় এ রাজ্যের বাইরে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যদি ছড়িয়ে দিতে পারি সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমাদের এই আয়োজন। যে আইপিআর চেয়ার আছে সেটা ভারত সরকারের দ্বারা নিয়োজিত এবং সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও সহযোগিতা নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি আমাদের যে জিআই সম্পদ আছে সেটাকে বেশি করে মানুষের কাজে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত করে তাদের আমরা সাহায্য করতে পারি।”

ভৌগলিক বৈচিত্রের মাত্র ১৪-১৫% মহিলাকে এখন পর্যন্ত সনাক্ত করা গেছে

প্রফেসর চক্রবর্তী হস্তশিল্পে যুক্ত থাকা মহিলাদের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন- “যেসব মহিলারা এসব কাজের মধ্যে যুক্ত আছেন তাদের দিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। কারণ, সংখ্যার যে তথ্য সেখানে বলছে যে যারা হাতের কাজ করেন, আমাদের ভৌগলিক বৈচিত্র তার মধ্যে মাত্র ১৪-১৫% মহিলাকে এখন পর্যন্ত সনাক্ত করা গেছে। কিন্তু অনেক মহিলা আছে যারা কাজ করে তাদের কিন্তু প্রকাশ করা হয় না। তারা যাতে আরও বিভিন্নভাবে এটা জানতে পারে কিভাবে তারা তাদের কাজ তাদের সৃষ্টি কলা বা বাণিজ্যিকভাবে তুলে ধরতে পারে আমাদের সেদিকে লক্ষ্য দেওয়া উচিত। মহিলারা যতটা কাজ করে আমরা তার প্রতিফলন পাচ্ছি না এখনও পর্যন্ত। সেই জন্য সেই মহিলাদের কাজের দিকে বিশেষ লক্ষ্য দিচ্ছি।”

ইংল্যান্ডের দু’তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা

জিআই ট্যাগ নিয়ে তিনি বলেন- “আমরা ইংল্যান্ডের দু’তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলছি। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যাতে একসঙ্গে কাজ করা যায়। যাতে আমাদের দেশের প্রোডাক্ট অন্য দেশের সাহায্য নিয়ে বিশ্বের অন্য প্রান্তে যাতে ছড়িয়ে দিতে পারি। আমাদের যারা মহিলা বা শিল্পী আছেন, তাদের সেই সৃষ্টি শুধু বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়াই নয় তারাও যাতে আর্থিক ও সামাজিকভাবে স্বীকৃতি পায় সেটাও চেষ্টা করছি।”

ড. বিপি সিং কিছু পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলে ধরেন

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারত সরকারের আইপিএবি-এর টেকনিকাল মেম্বার এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইন-চার্জ ড. বিপি সিং কিছু পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলে ধরে দেশের ইন্তেলেকচুয়াল প্রপার্টি ও ভোগোলিক সম্পদ নিয়ে আলোকপাত করেন।তিনি বলেন- “আপনারা শুধু কল্পনা করুন, ২০১৮ সালে মাত্র পাঁচ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন ( ডবল্যুআইপিও) থিমকে শক্তিশালী করে নারীদের সৃজনশীলতায় উদ্ভাবনে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আবার পাঁচ বছর প্রও ২০২৩ সালে এই বছরের থিম-এর অর্থ হল সেই নারীদের উন্নয়নকেই মজবুত করে তুলছে।”

বৈদিক যুগ থেকেই আমরা দেখেছি যে সেসময় অনেক মহিলাকে স্বীকৃতি দিয়েছে যারা বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছেন। কে ভুলতে পারে গার্গী, মৈত্রীর নাম। সমগ্র বিশ্ব সংগ্রাম করছে কারণ আজ অর্ধেক জনসংখ্যা্র অর্ধেক প্রচেষ্টা এবং সৃজনশীলতার কথা আমরা ভাবতে পারি না। আমরা দেখি সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীরা এগোচ্ছে এবং তারা ভালো কাজ করছে। উল্লেখ করেন ড. বিপি সিং।

আইপি গ্যাপ (জিএপি)

“২০১৭ থেকে ২০২১ আমার কাছে মহিলাদের দ্বারা পাওয়া রেকর্ড আছে, যেখানে আমরা ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাপী মোট ফিলিং এর মাত্র ১০.৬%, যা ২০২১ সালে একত্রিত হয়ে বেড়েছে ১৬.৫%। এটি প্রায় ১৪ বছরের ব্যবধান। এটি হওয়ার কথা প্রায় ৯-১০% , যা হয়েছে ৭% এর কম। এর মানে প্রচেষ্টা হয়েছে। তাদের উদ্যোগ এবং কর্ম পরিকল্পনা রয়েছে, যাকে আমরা বলি আইপি গ্যাপ বা জিএপি(জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান), যেখানে ২০১৫ সাল নাগাদ তারা অনেক প্রোগ্রাম শুরু করেছে যা সচেতনতা তৈরি, আইনি কাঠামো ইত্যাদি। সমস্ত প্রোগ্রাম কিভাবে নারীদের সৃজনশীলতাকে ট্যাগ করা যায় এবং কিভাবে জনসংখ্যার অর্ধেক সেখানে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক জীবন হতে পারে তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।”

নীলিমার সাফল্যের কথা তুলে ধরেন ড. বি পি সিং

বিশ্ব মঞ্চেও ভারতের জিআই ব্র্যান্ড যে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার নিয়ে আসছে সেই কথাও উল্লেখ করেন ড. বি পি সিং। তিনি বলেন- “ভারতের নীলিমা সেই মেয়ে যিনি ভিডিও প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছে। ডবল্যুআইপিও দেড় মিনিটের একটি ভিডিও কম্পিটিশনের আয়োজন করে। ৭২টি দেশ অংশ নিয়েছে এবং ১১৮টি ব্র্যান্ড ছিল। নীলিমার পোট্রেট আছে যে কীভাবে অন্ধ্রপ্রদেশে হস্তশিল্পে মানুষ পুরস্কার নিয়ে আসে। সেপ্টেম্বর ২০১৯ যখন বিধি সংশোধন করে যে উদ্ভাবকদের সুবিধার্থে আবেদনকারী যদি মহিলার মধ্যে কেউ থাকেন তবে তারা যাবেন। এখনই সময় এসেছে, আমরা নারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই এবং বলতে চাই -সেরা সম্ভাবনার কথা এবং ১৬.৫% তাই ৯৬.৫% হোক- এটাই আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা।”

পুরুলিয়ায় সিধু-কানহু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তুলে ধরেন ট্রাইবাল মহিলাদের উন্নয়নের কথা

পুরুলিয়ায় সিধু-কানহু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন- “আমরা ট্রাইবাল মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি অর্গানিক আবির তৈরি জন্য। পুরুলিয়ায় এক ধরনের লাল ফুল হয়। সেই ফুল থেকেই এই আবির তৈরি হয়। গত তিন বছর ধরে আমরা জেলার প্রতিটি ব্লকে কাজ করছি। পুরুলিয়ার মোট জনসংখ্যার ১৮.৬% ট্রাইবাল সম্প্রদায়। এখানে শবরদের বাস। এদের হাতের কাজ অসাধারণ। এখানে বাবুই ঘাস হয়, যা দিয়ে হস্তশিল্পের কাজ হয়। শিক্ষাকে শুধুমাত্র বই, গ্রন্থাগারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে প্রকৃতির মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে হবে। তবে তা সম্পূর্ণ হয়ে উঠবে।”

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

এসিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত, বিশিষ্ট আইনজীবী শুভতোষ মজুমদার, ভারত সরকারের কপি রাইট বোর্ডের প্রাক্তন ডেপুটি রেজিস্টার জগদীশ স্বরূপ, এনআইটিটিটিআর-এর ডিরেক্টর প্রফেসার ডি পি মিশ্র, ড. বিশ্বজননী যে সাত্তিগেরি প্রমুখ।

ডবল্যুবিএনিউজেএস-এর ডিপিআইআইটি আইপিআর চেয়ার ড. পিনাকী ঘোষ বলেন- “এই বৈঠক, মেধা সম্পত্তি অধিকারের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্বের দিকটিতে আলোকপাত করেছে। কার্যকর আইপি সুরক্ষা আইন এবং সচেতনতা প্রচারণা , নারিদের পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে এবং সমাজের অগ্রগতিতে সাহায্য করে।”

যারা অংশ নিয়েছেন আইপি প্রদর্শনীতে

বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে এদিন অনুষ্ঠানে যোগ দেয় পুরুলিয়ার মানভুম লোকনৃত্য ও ছৌ-নাচের দল। এছাড়াও প্রদর্শিত হয় পাতা নাচ, পুতুল নাচ, বাউল ও বহুরুপী। এছাড়াও এক প্রদর্শনীতে হাজির ছিল জনাই-এর স্বপন কুমার দাসের মনোহরা,বাঁকুড়ার মেচা মিঠাই, শান্তিনিকেতনি বাটিক ও আলপনা, বর্ধমানের কাঠের পুতুল, সুন্দরবনের খলসি মধু, পশ্চিম মেদিনীপুরের পটচিত্র শিল্পী রবীন চিত্রকরের চিত্রকলা ও হাতের কাজ, এসটিজি টি সহ আরও অনেকেই।

Published on: এপ্রি ২৯, ২০২৩ @ ২৩:৫১


শেয়ার করুন