
খারাপ আলোর জন্য DLS নিয়ম প্রয়োগ করেছে অ্যাম্পায়ার। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলা হয়েছে ১৮.১ ওভার
Published on: ফেব্রু ৩, ২০২৫ at ১৩:৪১
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৩ ফেব্রুয়ারি : বেঙ্গল-ব্রিটেন ট্রাভেল ফ্রেন্ডলি কাপের ফাইনাল ম্যাচের শেষে সবচেয়ে বেশি অসহায় লাগছিল ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনের মিডিয়া এবং কম্যিউনিকেশন হেড অমিত সেনগুপ্তকে । এই প্রতিযোগিতার মুখ্য আয়োজক হিসাবে তখন তিনি সম্পূর্ণভাবে একা হয়ে এক পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু তার অনুরোধ তার বোঝানোর প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান না চলে গেল ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (TAAI)-এর খেলোয়াড়, কর্মকর্তারা। তাদের এমন আচরণ ক্রিকেটের একেবারে পরিপন্থী। তবে রুদ্ধশ্বাস এই ফাইনাল ম্যাচে ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (TAFI) ছয় উইকেটে জয়ী হয়ে টানা দু’বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড অখুন্ন রেখে দিল।
খারাপ আবহাওয়ার জন্য অ্যাম্পায়ার দুই দলের ক্যাপ্টেনকে জানিয়ে দেন যে ব্যাটসম্যান যদি মনে করে আলো কমে যাওয়ার জন্য তার খেলতে অসুবিধা হচ্ছে আর তা যদি জানিয়ে দেন তাহলে সেই মুহূর্তে খেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তখন ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়ম প্রয়োগ করা হবে। অ্যাম্পায়ারের কথায় দুই দলের ক্যাপ্টেন সহমত হন। টাফি-র ক্যাপ্টেন অনিল পাঞ্জাবি এবং টাই-এর নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন অঞ্জনি ধানুকা সহমত হয়ে নিজের জায়গায় চলে যান।
টসে জিতে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নেয় টাই। ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে তারা তোলে ২১৮ রান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন কৌশিক মুখার্জি। ৫টা ওভার বাউন্ডারি এবং আটটা বাউন্ডারির সাহায্যে ৪৭ বলে ৭৭ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তোলেন আফজল সিদ্দিকি। তিনি ৩১ বলে ৫৫ রান তোলেন। টাফির হয়ে দুটি করে উইকেট নেন সন্দীপ ও গুরতেজ। একটি করে উইকেট নেন সফি হায়দার ও গৌরব আগরওয়াল।
২১৯ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামে টাফি। আশাজ আহমেদ ও ধীমান সেনগুপ্তের ওপেনিং জুড়ি ব্যার্থ হলেও পরবর্তী জুড়ি অভিষেক যাদব ও সন্দীপ দলকে টানতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তারা দলকে একটা সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছে দিতে থাকেন। এরপর ব্যাক্তিগত ২৪ রানের মাথায় সৈকত দাসের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান সন্দীপ। এরপর আসেন গুরতেজ। কিন্তু তিনিও মাত্র দুই রান করে ফিরে যান। ব্যাট হাতে মাঠে আসেন শবদ পাঞ্জাবি। এই সময় টাফি’র সামনে কঠিন মুহূর্ত।
কিন্তু ধীরে ধীরে শবদ পাঞ্জাবি অপর খেলোয়াড় অভিষেক যাদবের সঙ্গে বোঝাপড়া করে দলকে টানতে থাকেন। কিন্তু ২১৮ রান তাড়া করে জেতা খুবই কঠিন। সবাই যখন আশা ছেড়ে দিয়েছেন ঠিক সেইসময় ম্যাচ নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয় অভিষেক। পরপর ছক্কা হাকিয়ে টাফি’কে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন। কিন্তু আলো কমে যাওয়ায় অ্যাম্পারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন টাফি’র ব্যাটসম্যান শবদ পাঞ্জাবি। অ্যাম্পায়ার খেলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। তখন ডাকওয়ার্থ লিউস নিয়ম প্রয়োগ করে টাফি’কে আট উইকেটে জয়ী ঘোষণা করেন।
অ্যাম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি টিম টাই। কারণ, তখন সবে ১৯ ওভার শুরু হয়েছে। এক বল খেলার পরই টাফি’র ব্যাটসম্যান শবদ এগিয়ে যান অ্যাম্পায়ারের দিকে। আলো কমে যাওয়ার জন্য খেলতে অসুবিধা হচ্ছে। এ কথা জানান অ্যাম্পায়ারকে। টাই-এর বক্তব্য- এটা ঠিক হল না। ব্যাটসম্যান তো খেলছিল ঠিকঠাকভাবে। তাহলে কেন এটা করা হল? অ্যাম্পায়ার জানান- এটাই নিয়ম। এটা আমি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আলো কমে গেলে ব্যাটসম্যানের যদি মনে হয় তিনি খেলতে সক্ষম নন তখন অ্যাম্পায়ার খেলা চালিয়ে যেতে পারে না। তা না হলে খেলা চালিয়ে গেলে এরপর যদি বল এসে ব্যাটসম্যানকে আহত করে তখন তার দায় তো অ্যাম্পায়ারের উপরেই বর্তাবে। তাই সেই মুহূর্তে খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। প্রয়োগ করা হয়েছে ডিএলএস নিয়ম। অর্থাৎ ওই সময় পর্যন্ত দেখে ডাকওয়ার্থ লিউস সিস্টেমে যার রান রেট বেশি থাকবে সেই দলকেই জয়ী ঘোষণা করা হবে। আজ সেই নিয়মে জয়ী হয়েছে টিম টাফি।
তবে এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা দরকার তা হল- টাই-এর টিম নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠেছে। টাফি-র তরফ থেকে না এলেও অনেকেই এদিন অভিযোগ করেছেন যে টাই ফাইনালে বেশিরভাগ বহিরাগতদের খেলিয়েছেন। সেই অভিযোগকে মান্যতা দিয়ে টাই-এর এক সিনিয়র সদস্য মুখ ফস্কে বলেও দেন , টাফি-র অভিষেক যাদবকে দেখার পর আমরা ঠিক করি বহিরাগতদের খেলাবো। যে অভিষেককে নিয়ে খেলার শুরুতেই অভিযোগ জানিয়েছিল টাই সেই অভিষেক যাদব একাই টাই-এর জয়ের স্বপ্ন চুরমার করে দিল।
ব্রিটিশ ডেপুটি হাই-কমিশনের মিডিয়া –কম্যিউনিকেশন প্রধান অমিত সেনগুপ্ত ও স্কল ইন্টারন্যাশনাল কলকাতার প্রেসিডেন্ট আমিন আজগর জানান, সামনের বার থেকে নির্দিষ্ট নিয়ম জারি করা হবে। সেই নিয়মেই খেলা হবে। একটা দলে কতজন বাইরের খেলোয়াড় খেলানো যাবে তাও নির্ধারিত করে দেওয়া হবে। তাহলে এই সমস্যা আর হবে না।
তবে বেঙ্গল-ব্রিটেন ট্রাভেল ফ্রেন্ডলি কাপ-২০২৫ সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছে। জয়ী টিম টাফি-র ক্যাপ্টেন অনিল পাঞ্জাবি ব্রিটিশ ডেপুটি হাই-কমিশন, অ্যাম্পায়ার , স্কোরার, সহ সমস্ত আয়োজকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন- এত সুন্দর আয়োজন ক্রিকেটের জন্য স্বাস্থ্যকর। আর দেখুন, খেলায় তো হারজিত আছেই। মাঠের খেলা মাঠেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের সকলের মধ্যে যে সুসম্পর্ক আছে তা আগামিদিনেও অটুট থাকবে। খেলার মাধ্যমে বন্ধুত্ব অটুট থাকুক এই কামনা করি।
Published on: ফেব্রু ৩, ২০২৫ at ১৩:৪১