সংবাদদাতা- কৃষ্ণা দাস
Published on: অক্টো ২৯, ২০১৮ @ ২০:৫৩
এসপিটি নিউজ, জলপাইগুড়ি, ২৯অক্টোবরঃ এসেছিলেন চা-শ্রমিকদের হালহকিকত জানতে। কিন্তু এ কী শুনলেন-তাদের এত বঞ্চনা, এত অভাব, এত অবহেলা। জলপাইগুড়ি জেলার শিকারপুর চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের মুখে যা শুনলেন তাতে জেলাশাসক শিল্পা গৌড়িসারিয়ার মাথা হেঁট হয়ে গেল।প্রশাসন যদি আরও আগে একটু এদের দিকে নজর দিত তাহলে হয়তো এবারের দীপাবলী ভালভাবেই কাটত। কিন্তু তা যে এখন আর সম্ভব নয়। তবে সামনের দিনগুলিতে যাতে এই মানুষগুলিকে আর কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়ে কাটাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চা বাগানে দাঁড়িয়ে পঞ্চায়েত ও ব্লক আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়ে গেলেন।
শ্রমিকদের অভাব অভিযোগ স্বচক্ষে দেখার জন্য প্রায় দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে শ্রমিক মহল্লায় গিয়ে তাদের অভাব অভিযোগগুলি সোমবার খতিয়ে দেখেন জেলাশাসক শিল্পা গৌড়িসারিয়া। সেখানে গিয়ে চা-শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে হতবাক হয়ে যান তিনি। এ যে কিছুই নেই এদের। তিনি উপলব্ধি করেন শ্রমিকরা সত্যি কথাই বলেছেন।
জেলাশাসককে দেখে এগিয়ে যান এক চা শ্রমিক বেবি খারিয়া। তিনি বুঝতে পারেন সামনে যে মহিলা এসেছেন তিনি একজন বড় মাপের আধিকারিক।তাঁর কাছে নিজের অভাব-কষ্টের কথা বলে দেখাই যাক না কিছু হয় কিনা। সাহস করে তাঁর সামনে এগিয়ে যান বেবি। বলেন-“ম্যাডাম, ভাঙাচোরা ঘরে থাকতে হচ্ছে, শৌচালয় নেই, পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই।” একজন মহিলা চা-শ্রমিকের গলা থেকে এমন আর্তি শুনে চমকে যান জেলাশাসক। প্রশাসনের একজন পদস্থ আধিকারিক হিসেবে এর দায় যে তিনিও অস্বীকার করতে পারেন না। কী জবাব দেবেন এই হতভাগ্য মহিলাকে।
বেবি খারিয়ার কথা শুনে জেলাশাসক তার বাড়িতে গিয়ে বিষয়গুলি স্বচক্ষে দেখলেন। সঙ্গে সঙ্গে বাগান ম্যানেজারকে নির্দেশ দেন, অবিলম্বে বেবি খারিয়ার মতো এমন জরাজীর্ণ ঘরগুলি বাগান কর্তৃপক্ষ মেরামত করে দিক। এছাড়া দুই মাসের মধ্যে পিএফ খাতে মালিকপক্ষের অংশ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।
এদিন জেলাশাসককে কাছে পেয়ে গোটা নিজেদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে নানান বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন চা শ্রমিকরা। তারা একযোগে অভিযোগ করেন, তাদের প্রাপ্য রেশন দেওয়া হয় না, শ্রমিকদের ঘরবাড়ি জরাজীর্ণ, পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, নেই শৌচালয়। এমনকি, শ্রমিকদের কাছ থেকে পিএফ বাবদ টাকা কেটে নিলেও মালিকপক্ষ তাদের অংশ জমা দিচ্ছে না। এমন আরও কত কী। একই সঙ্গে তারা তুলে ধরেন এলাকার বেহাল রাস্তাঘাট, সেতু, অস্বাস্থ্যকর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র সহ নানা সমস্যার কথা।সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে বিডিও এবং সংশ্লিষ্ট দতফতরের আধিকারিকদের এসব সমস্যার সমাধানে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন জেলাশাসক।
Published on: অক্টো ২৯, ২০১৮ @ ২০:৫৩