শহীদ জওয়ানের বৃদ্ধ পিতা বলে উঠলেন-মেজ ছেলের মৃত্যুর পর বিজয় চালাত গোটা পরিবার, এবার তাহলে কে দেখবে

Main দেশ
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ২১, ২০১৯ @ ২৩:৫৩

এসপিটি স্পেশাল নিউজঃ এক দিকে পরিবারের মধ্যে থেকে গোটা পরিবারের দেখভাল করা আর এক দিকে সীমান্তে সদা ব্যস্ত থেকে দেশের সেবা করে যাওয়া-এটাই এতদিন পালন করে আসছিলেন। গ্রামের যুবকদের উৎসাহিত করতেন সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য। সব সময় চাইতেন তাঁর প্রিয় গ্রাম থেকেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় এখানকার ছেলেরা দেশ সেবার কাজে যোগ দিক। স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁর ছোট্ট আদরের কন্যাকে ভালোভাবে পড়াশুনো করিয়ে ডাক্তার বানাতে। কিন্তু সব কিছু শেষ হয়ে গেল। পুলওয়ামা হামলায় শহীদ হয়ে গেলেন বিজয় কুমার মৌর্য। উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া জেলার ছপিয়া জয়দেব গ্রামের জনপ্রিয় এই যুবক।গ্রামের ছেলের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না আজ কেউ।

কিভাবে পারবেন? যে ছেলে সবার চিন্তা করে এসেছে যে ছেলে গোটা পরিবারকে মাথায় করে রেখে দিয়েছে, যে ছেলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ভালবাসে এসেছে- আজ তাঁকে এভাবে চলে যেতে হল, এটা কি মেনে নিতে পারে তাঁর পড়শি-স্বজনরা? আমরা যারা পাঠকরা এই লেখা পড়ছি তারা বুঝুন- আজ সকলে ঘরে বসে যখন এই লেখা পড়ছি তখন আমাদের দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে চলা এই বীর জওয়ানরা কত অনায়াসে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করে দিতে পেরেছে।

৭২ বছরের বৃদ্ধ পিতা রামচন্দ্র মৌর্য্য সমানে কঁদে চলেছে। আর বলছেন, “ভেবেছিলাম বিজয় আমার স্বপ্ন পূর্ণ করে দিয়েছে। এবার তাহলে নিশ্চিন্ত হতে পারব, কিন্তু সেইসময় এল এমন এক দুঃসংবাদ। দশ বছর আগে আগে ও সিআরপিএফ-এ যোগ দেয়। আর সেদিন থেকেই আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই, যাক এবার তাহলে আমাদের দুঃখের দিন কাটবে। বড় ছেলে গুজরাটে নিজের কোম্পানিতে কাজ করে নিজের পরিবারকে নিয়ে সংসার চলায়।আর গ্রামের বাড়িতে আমরা সকলে থাকি। এখানেই আমার মেজ ছেলে কৃষ্ণ চার বছর আগে কিডনির অসুখে মারা যায়। আর সেইসময় থেকে বিজয় তাঁর নিজের স্ত্রী বিজয়লক্ষী, ছোট্ট কন্যা আরাধ্যার সঙ্গে বিধবা বৌদি দুর্গাবতী ও দুই ভাইজি রীতা ও অমৃতার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। সব সময় বলতেন-এদের তো আমাকেই দেখতে হবে। এটা আমার কর্তব্য।”

স্ত্রী বিজয়লক্ষী সেকথা স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। বলেন-“হ্যাঁ, ও সবসময় এটাই বলত যে বৌদি তো আমার মায়ের মতো। ভাইজিরা তো আমার আপনজন। ওদের দায়িত্ব আমি ছাড়া আর কে নেবে?” বৌদিও কাঁদছিলেন- বলছিলেন, “এবার আমাদের কে দেখবে, কোথায় যাব আমরা?” বৃদ্ধ বাবা কপাল চাপড়াচ্ছেন আর বলছেন- “হা ভগবান, এখন ঘরে দুই বিধবা বধূ আর তিন অনাথ কন্যার দেখভাল কে করবে?”

সব ওলোট-পালোট হয়ে গেছে। বীর জওয়ান বিজয়ের পরিবারে। যে বীর জওয়ান এতদিন দেশের জন্য নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে যাননি। সম্প্রতি তিনি পাকা ঘর নির্মাণের কাজেও হাত দিয়েছিলেন। এখন সেটাও থমকে গেল। কিভাবে সেকাজ শেষ হবে তাও জানেন না তাঁর পরিবারের সদস্যরা। গ্রামের স্কুলেই পড়াশুনো সেরেছেন। স্কুল-ইন্টারমিডিয়টে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাশ করেছেন। ভাটপাররানিতে মদন মোহন মালব্য পিজি কলেজ থেকে বিএ, এমে পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি সিআরপিএফ-এ যোগ দেন। বিজয় মনে করতেন সিআরপিএফ-এ চাকরি মানেই দেশ সেবা করা। আর তাই তিনি দেশের বলিপ্রদত্ত ছিলেন। বলতেন-“দেশ আমার কাছে সব কিছু। দেশের অপমান কখনোই সহ্য করব না।” সহ্য করেননি শেষ দিন পর্যন্ত। শেষে দেশের জন্যই পরিবারের মায়া ত্যাগ করে শহীদ হয়ে বিজয় তাঁর বিজয় প্তাকা উড়িয়ে চলে গেলেন বহুদুরে।

আজ দেশ আছে। আছে তাঁর পরিবার। আছে তাঁর আদরের ছোট্ট আরাধ্যা। আছে স্ত্রী বিজয়লক্ষ্মীও। আছে তাঁকে তিলে তিলে বড় করে তোলা বৃদ্ধ বাবাও। আছে গ্রামের বাড়ী। আছে তাঁর বন্ধুরা পাড়া-পড়শিরা। শুধু নেই বিজয় কুমার মৌর্য্য। বীরের মতো শহীদ হয়ে তিনি আজ চলে গেছেন অনেক দূরে। যেখান থেকে আর কোনওদিনও ফিরে আসবেন না তিনি। কে দেবেন এই পরিবারের সুরক্ষা, বলতে পারেন?

Published on: ফেব্রু ২১, ২০১৯ @ ২৩:৫৩

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 2 =