Steve Irwin: ছয় বছরে জন্মদিনে উপহার পেয়েছিলেন ১২ ফুট লম্বা পাইথন, ৫৭তম জন্মদিনে গুগল জানাল শ্রদ্ধা

বন্যপ্রাণ বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ২২, ২০১৯ @ ১৮:২৩

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ মাত্র ছয় বছর বয়সে জন্মদিনে বাবা বব এবং মা লিন আরউইন তাঁকে ১২ ফুট লম্বা স্ক্রাব পাইথন দিয়েছিলেন। সেইসময় থেকে তিনি সরসৃপ সম্পর্কে ধারণা করতে শুরু করেন। নয় বছর বয়সে কুমিরের রক্ষনাবেক্ষন শুরু করেন। এই সময় থেকে তিনি ভয়ানক সরিসৃপ নিয়ে নাড়াচারা করতে শুরু করেন। তাদের সঙ্গে থাকা সবই করতে থাকেন। এমনকী এই সময় পিতার তৈরি পার্কে যাতে লোকালয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কুমিরগুলিকে নিয়ে এসে রাখতে পারেন এই শর্তে বিনা পারিশ্রমিকে বিশাল আকারের কুমিরগুলিকে কুইন্সল্যান্ডের পার্কে নিয়ে এসেছিলেন।এভাবেই জীবনের প্রথম দিকে সরিসৃপদের সঙ্গে থাকা তাদেরকেও নিজের মনে করা শুরু করেন স্টিভ রবার্ট আরউইন।আজ তাঁর ৫৭ তম জন্মদিনে গুগল শ্রদ্ধা জানাল “ক্রোকোডাইল হান্টার” স্টিভ রবার্ট আরউইন-কে। সংবাদ প্রভাকর টাইমস এই বিশ্ব সেরা মহান প্রকৃতিপ্রেমিককে জানাল নত মস্তকে স্যালুট। আমরাও পাঠকের দরবারে তুলে ধরলাম স্টিভ আরউইনের সম্পর্কে কিছু কথা।

আজ অষ্ট্রেলিয়ায় যা “অষ্ট্রেলিয়া জু” নামে পরিচিত সেটা স্টিভ আরউইন দায়িত্ব নেওয়ার আগে পর্যন্ত একটি পারিবারিক পার্ক ছিল মাত্র। সেটি গড়েছিলেন তাঁর বাবা বব এবং মা লিন আরউইন। যেখানে সরিসৃপের মধ্যেই বড় উঠতে থাকেন স্টিভ। পরে তিনি এখানেই সরিসৃপ এবং বন্যপ্রাণ বিষয়ক এক টিভি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ১৯৯১ সালে পার্কের এক প্রদর্শনী চলার সময় সেখানেই টেরি রাইন্সের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথম দেখাতেই দু’জনের মধ্যে প্রেম হয়। একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেন। পরের বছর ১৯৯২ সালেই তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। টেরি সেইসময় বলেছিলেন- “আমি ভেবেছিলাম এই পৃথিবীতে তার মতো কেউ নেই। তাঁকে বলা হয় টারজান। জীবনের চেয়েও বড় একজন মহানায়ক।” তাদের দুই সন্তান। মেয়ে-বিন্ডি স্যু আর উইন এবং ছেলে-রবার্ট ক্ল্যারেন্স “বব” আর উইন। বিন্ডি নাম দেওয়া হয় আরউইনের দুটি প্রিয় প্রাণী বিন্ডি যা নোনান জলের কুমির এবং স্যু যা একটি স্ট্যাফোর্ডশায়ার বুল টেরিয়ার। ২০০৪ সালের মে মাসে যার মৃত্যু হয়।

আর তাদের হানিমুন অর্থাৎ মধুচন্দ্রিমায় কুমির ধরার দৃশ্য নিয়ে তৈরি বিখ্যাত টিভি শো- “দি ক্রোকোডাইল হান্টার” যা স্টিভের জীবনে এক মাইলস্টোন হয়ে যায়। এর পর থেকেই তিনি সকলের কাছে “ক্রোকোডাইল হান্টার” নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এই শোটি এতই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে সিরিজটি বিশ্বের ১৩৭টি দেশের প্রায় ৫০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এই শো-তে স্টিভের উচ্ছ্বসিত এবং উদ্যমী অষ্ট্রেলিয়ান বাচনভঙ্গী চিরাচরিত খাকি শর্টশ এবং ক্যাচফ্রেস ক্রিকি বিশ্বজুড়ে সকলের নজর কেড়ে নেয়।যা দেখে স্টিভের তারিফ করেছিলেন স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরা। তিনি বলেছিলেন-স্টিভ ছিলা একজন জন্মগত সমন্বয়কারী।

আরউইন ছিলেন একজন প্রকৃতিবিদ পরিবেশ সংরক্ষনবা্দী মানুষ। যিনি কথায় আর মুখে পরিবেশ নিয়ে বড় বড় বুলি আওড়ানোর চেয়ে উত্তেজনাকরা অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে পরিবেশবাদকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে হেঁটেছে আমৃত্যু। তাঁর কাছে সংরক্ষণ ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল খুব পরিষ্কার। তিনি বলতেন-“আমি নিজেকে একজন ওয়াইল্ডলাইফ ফাইটার বলে মনে করি। আমার লক্ষ্য বিশ্বে বিপন্ন প্রজাতিগুলিকে রক্ষা করা। এজন্য তিনি অষত্রেলিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচুর জমি কেনেন যা ন্যাশনাল পার্কের মতো বলে অভিহিত করেন। তিনি মানুষের কাছে একটা বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে মানুষ যদি নিজে থেকে চায় তবে পরিবর্তন আনা সম্ভব। বিপন্ন প্রজাতিকে রক্ষা করা সম্ভব।শুধু সবাই মিলে একটু চেষ্টা করুন। এই পৃথিবীকে রক্ষা করুন। ওদের অর্থাৎ ওই বিপন্ন প্রাণিগুলির কথাও আপনারা ভাবুন।”

এজন্য তিনি কচ্ছপের খোল এবং তিমির স্যুপ না কেনার জন্য মানুষের কাছে আবেদন রাখেন যাতে পশুনিধন বন্ধ করা যায়। প্রতিষ্ঠা করেন কনজারভেশন ফাউন্ডেশন যা পরবর্তীকালে ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ারিয়র্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড নেমে রূপান্তরিত হয়।তাঁর মৃত্যুর পর কেউ তাঁকে “আধুনিককালের নূহ” আবার কেউ বা “প্রাকৃতিক ইতিহাসবিদ” বলে সম্মান জানিয়েছেন।

অষ্ট্রেলিয়ার প্যাসেঞ্জার ট্রেন “দি ঘান”-এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ২০০৪ সালে স্টিভকে নিযুক্ত করা হয়। যে ট্রেনটি অ্যাডিলেড থেকে মধ্য অষ্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল এলিস স্প্রিংস পর্যন্ত যাতায়াত করত।এইসময় ট্রেন  লাইনটিকে উত্তরাঞ্চলীয় তীরের ডারউইন পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়।কুইন্সল্যান্ড সহ সমগ্র অষ্ট্রেলিয়ার পর্যটনের প্রসারে বড় ভূমিকে রেখে গেছেন স্টিভ আরউইন। যার ফলে ২০০২ সালে সেরা পর্যটনস্থল হিসেবে কুইন্সল্যান্ড সকলের নজর কেড়েছিল।

২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গ্রেট ব্যারিয়র রিফে ডুব সাঁতার দেওয়ার সময় একটি স্টিং-রে বার্ব তাঁর বুক ফুটো করে হুল ফোটালে মৃত্যু হয় স্টিভের। আমরা সকলেই এই মহান প্রকৃতিবিদকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।

ছবি-গুগল

Published on: ফেব্রু ২২, ২০১৯ @ ১৮:২৩


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + 3 =