দিলীপ ঘোষের “চ্যালেঞ্জ” গ্রহণ করে কেশিয়াড়িতে ঢুকে শুভেন্দু অধিকারী দেখালেন তিনি সত্যিকারের “বাপের বেটা”

Main রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা– বাপ্পা মন্ডল                                                     ছবি-বাপন ঘোষ

Published on: ডিসে ২৩, ২০১৮ @ ২৩:৫২

এসপিটি নিউজ, কেশিয়াড়ি, ২৩ ডিসেম্বরঃ খুব বেশিদিন হয়নি কেশিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলে গিয়েছিলেন- “যদি বাপের বেটা হয় তাহলে শুভেন্দু অধিকারী কেশিয়াড়িতে এসে কেশিয়াড়ি দখল করুক।” রবিবার শুভেন্দু অধিকারী কেশিয়াড়িতে এসে এক রুদ্ধদ্বার কর্মী বৈঠক করেন। সেখানে বাইরের কারও প্রবেশাধিকার ছিল না। একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে তিনি যে চুপ করে বসে থাকার নেতা নন তা কিন্তু আজ কর্মীসভায় দাঁড়িয়ে দলের সমস্ত কর্মীদের সেটা ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছেন।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ২১টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২০টি দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।কেবল মাত্র কেশিয়াড়ি দখল করেছে বিজেপি। এই পঞ্চায়েত সমিতির ২৫টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস ১২টিতে জয়ী হয়েছে। এখনও এই পঞ্চায়েত সমিতি গঠিত হয়নি। তাই কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত গঠনের দাবিতে গত ১২ই ডিসেম্বর বিজেপি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল। আর সেখানেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাজ্য সরকার ও পুলিশের প্রতি বেশ আক্রমনাত্মক ছিলেন।

পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী প্রার্থীর নিরিখে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিজেপি। সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেশিয়াড়িতে এসে সাংগঠনিক ক্ষমতা তুলে দেন রাজ্যে পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হাতে। উদ্দেশ্য ক্ষমতা ফিরিয়ে এনে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করা। আর সেই প্রসঙ্গে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সেদিন হুমকি দিয়েছিলেন- “কংগ্রেস ভেঙেছেন, সিপিএম ভেঙেছেন, বিজেপিকে ভাঙতে চাইলে সরকার ভেঙে দেবো।”

বক্তব্যের শুরুতেই দিলীপ ঘোষ সেদিন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন-“দিদি শুভেন্দু অধিকারীকে কেশিয়াড়ি দখলের দায়িত্ব দিয়েছে্ন। যদি বাপের বেটা হয় তাহলে শুভেন্দু অধিকারী কেশিয়াড়িতে এসে কেশিয়াড়ি দখল করুক না।” দিলীপের হুঙ্কার-“কেশিয়াড়ি আমরা যে কোনভাবেই রক্ষা করব।”

সেই সভার ঠিক ১১ দিন বাদে ্সেই কেশিয়াড়িতেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে গেলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর চোখ যে এখন কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি সেটা কেশিয়াড়ির সমস্ত স্তরের সব দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা জানেন।আর জানেন বলেই তারা এই বিষয়অটি নিয়ে চর্চা শুরু করেছেন। অনেকে তো এই কথাও বলতে শুরু করেছেন- বিজেপির রাজ্য সভাপতি তো এখানে এসে ভীমরুলের চাকে ঢিল ছুঁড়ে দিয়ে গিয়েছে। শুভেন্দু অদঝিকারী এমন এক ধরনের নেতা, সাংগঠনিক কাজে কেশিয়াড়িতে তাঁর সঙ্গে পেরে ওঠার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কোথায়? আগে বিজেপিকে সেটা খুঁজে বার করতে হবে। তা না করে শুভেন্দু অধিকারীকে “বাপের বেটা” বলে খোঁচা দিয়ে ঠিক করেননি। এরপর বিজেপি কেশিয়াড়ি নিজেদের দখলে রাখতে পারবেন তো? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

সেটা যে একেবারেই সঠিক তা কিন্তু ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। রবিবার কেশিয়াড়ির রবীন্দ্রভবনে এই বৈঠক হয়। দলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য-সহ বুথ ও অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীরা এই বৈঠকে সামিল হয়েছিলেন। রবীন্দ্রভবন ছিল একেবারে কানায় কানায় ভর্তি। তা না হলে সেদিন যেভাবে বিজেপি শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁর পিছনে সিবিআই লেলিয়ে দেওয়ার কথা বলে গিয়েছিল তারপর অবলীলায় শুভেন্দু অধিকারী অত্যন্ত হালকা মেজাজে হাসতে হাসতে কর্মীদের একত্রিত করে বা করার শপথ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে গেলেন সেই কেশিয়াড়িতে। তা নিয়েও কিন্তু গুঞ্জন ছড়াতে শুরু করেছে। তবে কি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল?

কিভাবে কেশিয়াড়ি বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে সেই গুটি কি তবে এদিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকেই ঠিক হয়ে গেল? প্রশ্ন কিন্তু উঠতে শুরু করেছে। কেশিয়াড়ির তৃণমূল নেতৃত্বদের তিনি বার্তা দেন- সবাইকে একসাথে হয়ে কাজ করতে হবে। দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে এলাকায় কাজ করতে হবে ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ সব নেতা, কর্মী, সমর্থকদের নিয়ে। এদিনের সভায় প্রবেশ এতটাই কঠোর ছিল যে এদিন প্রতিনিধি কার্ড দেখিয়ে বৈঠক স্থলে ঢুকতে হয়েছে তৃণমূলের নেতা কর্মীদেরও।শুভেন্দুর মিশন কেশিয়াড়ি যে অচিরেই সাফল্য পেতে পারে তার ইঙ্গিতও কিন্তু এদিন মিলল যখন দেখা গেল কেশিয়াড়ির বিবদমান দুই তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রাক্তন ব্লক সভাপতি জগদীশ দাশ ও তৃণমূল নেতা ফটিকরঞ্জন পাহাড়ি পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে শুভেচ্ছা জানান। তাই শুভেন্দু দেখিয়ে দিলেন যে তিনি সত্যিকারের “বাপের বেটা”।

Published on: ডিসে ২৩, ২০১৮ @ ২৩:৫২

 

 

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 1 = 2