জন্মদিনের অনুষ্ঠান না করে গরিব আর্ত মানুষের সেবায় ‘টোটো’ দত্তক নিলেন ছাত্রী

Main রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল                                                      ছবি-বাপন ঘোষ

Published on: সেপ্টে ১, ২০১৮ @ ২১:২০

এসপিটি নিউজ, মেদিনীপুর, ১ সেপ্টেম্বরঃ এই তো কয়েক দিন আগের কথা-মায়ের সঙ্গে মেদিনীপুর হাসপাতালে গেছিলেন দ্বাদশ শ্রেণির স্কুল ছাত্রী হৈমন্তিকা দাস, এলাকায় সে স্যান্ডি নামেই পরিচিত।

স্যান্ডি দেখে, হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুতেই টোটো পাচ্ছিলেন না। যাও বা পাওয়া যাচ্ছিল, তারা মোটা টাকা হাঁকাচ্ছিলেন। স্যান্ডির মনে সেদিন থেকেই এই ছবিটা নাড়া দিয়েছিল।

বাড়ি এসে স্যান্ডি রাতে ঠিক মতো ঘুমোতে পারেনি। শুধু ভেবেছেন-কি করা যায়, এদের জন্য? হঠাৎ তাঁর মাথায় একটা পরিকল্পনা দেখা দেয়। সে তখন ভাবে, এই সেপ্টেম্বর মাসেই সে তো ১৮ বছরে পা দেবে। আর বাড়িতে তো ঘটা করে জন্মদিন পালনের তোড়জোড় চলছে। জন্মদিন পালন না করে সেই টাকা দিয়ে যদি একটা টোটো দত্তক নেওয়া যায়, আর সেই টোটো যদি ২৪ ঘণ্টা দুঃস্থ আর্ত মানুষের সেবায় লাগতে পারে তাহলে কেমন হয়!

যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সকাল হতে না হতেই বাবার সামনে এসে হাজির বুদ্ধিমতী কিশোরী ছাত্রী সকলের প্রিয় স্যান্ডি। বাবাকে জানিয়ে দিলেন নিজের মনের কথা। সাফ জানালেন-না, ঘটা করে আমার জন্মদিন পালন করার চেয়ে দুঃস্থ-গরিব আর্ত মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানোটা সবচেয়ে জরুরী। যদি তুমি একটা টোটো আমার জন্য দত্তক নিতে পারো তাহলে ঐ অসহায় মানুষগুলি সময় মতো হাসপাতালে কিংবা ডাক্তারের কাছে পৌঁছতে পারবে।মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে চোখে জল এসে যায় বাবার।

সোনার দোকানে কাজ করে মেয়েকে পড়াশুনো শেখাচ্ছেন তিনি।সেই মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে গর্বে মাথা উঁচু হয়ে যায় অশেষ দাসের।দু’চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল জল।ভারাক্রান্ত গলায় বলছিলেন- তাঁর মেয়ে সমাজের আর পাঁচটা মেয়ের থেকে আলাদা। জন্মদিনের পার্টির হৈ হুল্লোড় ছেড়ে যে মেয়ে এই ধরনের মানবিকতার প্রকাশ ঘটায় তা সত্যিই আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বৈকি।

এরপর শুরু হয়ে যায় টোটোর খোঁজখবর।পাশের বাড়ির রাজু সোনার দোকানে কাজ করতেন। কিন্তু সেই কাজ করতে গিয়ে তার চোখের জ্যোতি কমে আসে, তাই সে এখন সোনার কাজ ছেড়ে টোটো চালায়। রাজুকে সব কথা খুলে বলে স্যান্ডির বাবা। এমন প্রস্তাবে রাজী হয়ে যান রাজু। টোটো দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে পূরণ হয় অলিগঞ্জ স্কুলের ছাত্রী স্যান্ডির। গাড়ির পিছনে লাগিয়ে দেওয়া হয় ব্যানার- “এই টোটোটি দুঃস্থ রোগীদের বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়া হয়।”

সত্যিই এক সাধারণ স্কুল ছাত্রীর এমন উঁচু মনের ভাবনার যে প্রকাশ ঘটল তা অত্যন্ত ভালো দিক। মেদিনীপুরের দুঃস্থ মানুষের সৌভাগ্য এমন একজন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

সত্যি,”এমন বন্ধু আর কে আছে”!

Published on: সেপ্টে ১, ২০১৮ @ ২১:২০

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + 6 =