ইবতিসাম রহমান
Published on: আগ ১২, ২০১৮ @ ২১:৪২
এসপিটি নিউজ, ঢাকা, ১২ আগস্টঃ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস-সহ আন্তঃমহাদেশীয় ৪টি ট্রেন সহ বাংলাদেশে ৩৪৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে।এরমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীদের অনেক চাপ থাকে। ট্রেনের টিকিট পাওয়া বেশ কঠিন।
বাংলাদেশ আন্তঃনগর ট্রেন ৮৬টি, মেইল এক্সপ্রেস এবং কমিউটার ট্রেন ১৩২টি ও লোকাল ট্রেন ১২৬টি। পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন ৮৬টি, মেইল এক্সপ্রেস এবং কমিউটার ট্রেন ১৩২টি ও লোকাল ট্রেন ১২৬টি। পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন ২৪টি, মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেন ২টি, লোকাল ট্রেন ২টি। বাংলাদেশে সর্বমোট ৪৬০টি রেল স্টেশন আছে।
রেলওয়েকে আধুনিক ও যুগোপযোগী যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সরকার বদ্ধপরিকর। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার রেলওয়ের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করে। রেল খাতের টেকসই উন্নয়ন এবং সেবার মানোন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রেল পরিবহন চাহিদা মেটাতে রেলপথ মন্ত্রণা্লয়ের অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং সরকারি রেলপথ পরিদর্শন অধিদফতর দায়বদ্ধ।
বর্তমান বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে ১৫ নভেম্বর, ১৮৬২ সালে দর্শনা-জগতি স্টেশনের মধ্যে তদানীন্তন ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ের ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে রেলের যাত্রা শুরু হয়। নিরাপদ ও তুলনামূলক কম খরচে পরিবহন সেবা প্রদানে বাংলাদেশ রেলওয়ে কাজ করছে। এছাড়া তুলনামূলক কম পরিবেশ দূষণ, স্বল্প জ্বলানি খরচ ও দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি কম হওয়ার সুবাদে রেলওয়ে অধিক জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যম। বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে জনসাধারণের যাতায়াত আরও সহজ হয় এবং পরিবহন ব্যয় বহুলাংশে হ্রাস পায়, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, শিল্পায়নের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে এবং দারিদ্র্য হ্রাসসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। কালের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় প্রশাসনিক সংস্কার ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে।
রেলওয়ে বর্তমান চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ খাতে উন্নয়নের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। সমন্বিত বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলওয়ে দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বা মূল চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। ইতিমধ্যে নতুন রেললাইন নির্মাণ, পুরনো রেললাইন পুনর্বাসন, মিটারগেজ লাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তর, লোকোমোটিভ, যাত্রীবাহী কোচ ও মালবাহী ওয়াগান সংগ্রহ ও পুনর্বাসন, সিগনালিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু সহ বেশ কিছু সাফল্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধিকতর জনবান্ধব হিসেবে চিহ্নিত করেছে। টেকসই উন্নয়ন অর্জনসহ ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের ধারাবাহিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, যুগোপযোগী জনপরিবহন মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রেলওয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আধুনিকীকরণের প্রোগ্রাম রেলওয়ের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ হল-
১) ৮৫৬কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ,
২) ১১১০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ,
৩) ৭২৫কিলোমিটার বর্তমান রেলপথ পুনর্বাসন,
৪) রেলসেতু নির্মাণ,
৫) লেভেল ক্রসিং গেট সহ অন্যান্য অবকাঠামোর মানোন্নয়ন,
৬) বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১০০টি লোকোমোটিভ, ৪টি রিলিফ ক্রেন,
৭) একটি লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ,
8) ১১২০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ,
৯) আধুনিক রক্ষণাবেক্ষন সরঞ্জাম সংগ্রহ,
১০) ৮১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন।
১১) বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ,
১২) দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানামারের নিকটে ঘুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক,
১৩) আখাউড়া থেকে লাক্সাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ এবং বর্তমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর,
১৪) খুলনা হতে মংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ,
১৫) বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ,
১৬) বাংলাদেশ রেলওয়ের কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া সেকশনের পুনর্বাসন এবং কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া নতুন রেলপথ নির্মাণ,
১৭) বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৭০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ,
১৮) বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চিনকী আস্তানা-চট্টগ্রাম সেকশনের ১১টি স্টেশনে বিদ্যমান সিগন্যালিং ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন ও আধুনিকীকরণ,
১৯) ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বর্তমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ,
২০) ঈশ্বরদি থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ,
২১) পাহাড়তলী ওয়ার্কসপের উন্নয়ন,
২২) দর্শনা-ঈশ্বরদী সেকশনের ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়ন,
২৩) বাংলাদেশ রেলওয়ের ২০০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ চলমান প্রকল্প রয়েছে।ছবি-অনিরুদ্ধ পাল
Published on: আগ ১২, ২০১৮ @ ২১:৪২