আজ কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে এলে কি ফল লাভ হয়, জেনে নিন

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: সেপ্টে ১৪, ২০২৩ at ২৩:১৭
লেখকঃ প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

এসপিটি নিউজ, তারাপীঠ (বীরভূম), ২৬ আগস্ট: করোনা আজ বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে তারাপীঠে কৌশিকী অমাবস্যা উদযাপিত হচ্ছে। এই অমাবস্যায় তারাপীঠে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। ভিড় সামলাতে বিশাল সংখ্যায় রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে তারাপীঠে। থাকছে বীরভূমের বিভিন্ন মন্দির থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবীর দল। অমাবস্যা লেগেছে আজ ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ পুজো শুরু হয়েছে।  পরের দিন সকাল ৬টা বেজে ২৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে অমাবস্যা ছেড়ে যাবে। এই কৌশিকী অমাবস্যা ঘিরে তারাপীঠে এত আয়োজন, এত মানুষের সমাগম। এবার তারাপীঠে বিদেশি ভক্তদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে রাশিয়া থেকে এসেছেন অনেক ভক্ত। তাই প্রশ্ন জাগে, কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে কেন এত ভক্ত সমাগম হয়? এই কৌশিকী দেবীই বা কে?

এই দিনে তারাপীঠে এলে কি ফল লাভ হয়

এই দিনে পুজো দিতে আসার কারণ হিসাবে কথিত আছে যে সাধক বামাক্ষ্যাপা বাবা তারাপীঠে পঞ্চমুণ্ডি আসনে শ্বেতবৃক্ষ্মূলের তলায় বসে ১৮৬৮ খ্রিঃ ভাদ্র মাসের কৌশিকি অমাবস্যায় ৩০ বছর বয়সে সিদ্ধিলাভ করেন। বিশ্বাস, এই দিনে যদি কোনও ভক্ত তারাপীঠে এসে তারা মায়ের পুজো করেন, জীবিত কুণ্ড কিংবা দ্বারকা নদীতে স্নান করেন, শ্মশানে যজ্ঞ করেন তাহলে তার মোক্ষলাভ হয়। কুম্ভমেলার ফল লাভ হয়।সাংসারিক অশান্তি, রোগ-শোক, ব্যাথা-বেদনা দূর হয়। এই বিশ্বাসের উপর ভর করে এই দিন ভারতের বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্র থেকে বহু সাধু-সন্ন্যাসী, অঘোরী সাধক, নাগা সাধকের পাশাপাশি বহু তান্ত্রিক যোগীরা যেমন আসেন তেমনই লক্ষ লক্ষ ভক্তেরও সমাগম হয় তারাপীঠে।

ভক্ত সমাগমের কারণ কি? কৌশিকী দেবী সম্পর্কে কি বলছে পুরাণ

এখন মনে প্রশ্ন জাগে – কৌশিকী অমবাস্যায় কেন এত ভক্ত সমাগম হয়? এই কৌশিকী দেবীই বা কে? এই প্রশ্নের জবাবে বলি- শ্রীশ্রী চণ্ডী মার্কেণ্ডেয় পুরাণে, শ্রীমদদেবীভাগবদ থেকে জানা যায়, এক সময় শুম্ভ-নিশুম্ভ দৈত্যের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে সমস্ত দেব-দেবী স্বর্গ ছাড়তে বাধ্য হলে সকলে তখন মা তারা, মহামায়া, দেবী দুর্গা অর্থাৎ পার্বতীর স্মরণাপন্ন হন। তখন দেবী পার্বতীর নিজ দেহ কোশ থেকে এক পরমা সুন্দরী দেবী মূর্তি আবির্ভূতা হন। এই দেবী মূর্তি ছিল সিংহবাহনা, অষ্টভুজা, শুভ্রবসনা ও সুবর্ণকান্তিযুক্ত। তিনি শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করে স্বর্গরাজ্যে দেব-দেবীদের প্রতিস্থাপন করেন। নিজ দেহ কোশ থেকে দেবী পার্বতী আবির্ভূতা হয়েছিলেন বলে দেবীকে বলা হয় কৌশিকী দেবী।

এরপরেও প্রশ্ন জাগে, ভাদ্র মাসের অমাবস্যাতেই কেন কৌশিকী দেবী আবির্ভূতা হলেন? এই দিনেই কেন সাধক বামাক্ষ্যাপা বাবা সিদ্ধিলাভ করলেন?

কৌশিকী অমাবস্যা নিয়ে নানা মত

  • সনাতনী শাস্ত্র কিংবা মার্কেণ্ডেয় পুরাণ বা দেবীভাগবদ থেকে জানা যায় যে আষাঢ় মাসে উল্টো রথের পর শ্রাবণ মাসের শয়ন একাদশী তিথি হতে ভগবান বিষ্ণু যোগ-নিদ্রায় শায়িত থাকেন। এই সময় দেবী জগদম্বাও নিদ্রা যান। এই সময়কালকে বলা হয় অকাল সময়। এই সময় দেব-দেবীদের পুজো করার সময় সাধু-সন্ন্যাসীরা ভাদ্র অমাবস্যায় কুশ উৎপাদন করে। সেইজন্য এই অমাবস্যাকে বলা হয় কুশকপাতন্দী অমাবস্যা যা পরবর্তীতে তা কৌশিকী অমাবস্যায় রূপান্তরিত হয়।
  • অন্যমতে দেখা যায়, হিমালয়ে আদি মানবগোষ্ঠী কুশিক জাতি বৌদ্ধদেবী নৈরাক্ষদেবীকে হিন্দুরা কালিকা জ্ঞানে পুজো করেন। যেহেতু কুশিক জাতি কালিকা দেবীকে পুজো করেছিলেন , সেইজন্য দেবীর নাম কৌশিকী।

সাধক বামা ক্ষ্যাপা বাবার আগে আরও একজন এইদিনে সিদ্ধিলাভ করেন

কথিত আছে, তারাপীঠে শ্বেতবৃক্ষ্মূলের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে ঋষি বশিষ্টদেব প্রথমে এবং কলিযুগে তার অবতার সাধক বামাক্ষ্যাপা বাবা কৌশিকী অমাবস্যার দিন সিদ্ধিলাভ করেন। যেহেতু অশুভ শক্তি শুম্ভ-নিশুম্ভকে কৌশিকী দেবী বিনাশ করেছিলান সেইজন্য এই দিনে মায়ের পুজো দিলে বা আরাধনা করলে মনে অশুভ ভাব দূরীভূত হয়। শুভ শক্তি জাগ্রত হয়। রোগ-শোক দূর করে মায়ের কৃপা লাভ করে। সাধক এই দিনে কৃপা লাভ করে। সাধক এই দিনে পশ্যাচার, বীরাচার থেকে সাত্বিক ভাবে উত্তোরণ ঘটে। সেইজন্য এই দিন লাখ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে থাকে।

লেখকঃ তারাপীঠ মন্দিরের সেবাইত, গবেষক ও তীর্থভূমু তারাপীঠ গ্রন্থের রচয়িতা

Published on: সেপ্টে ১৪, ২০২৩ at ২৩:১৭


শেয়ার করুন