Published on: জানু ২৮, ২০১৮ @ ১৬:১২
এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ বিস্ফোরক ভর্তি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীদের ডেরায় ঢুকে পড়ে জঙ্গীরা বিস্ফোরন ঘটায়। তাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১০০ জন নিহত প্রায় ২০০ জনের মতো আহত হয়েছে বলে এএফপি সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। তালিবানরা হামলার দায় স্বীকার করেছে। আফগানিস্তান এর হাম্লাকে মানবতা বিরোধী বলে চিহ্নিত করেছে। গোটা বিশ্ব এই হামলার নিন্দা করেছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সোসাইটি হামলায় অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারকে ন্যাক্কারজনক আখ্যা দিয়েছেন।
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলাকারী তালেবানদের বিরুদ্ধে “সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা” নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যেীই নিয়ে দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানের শহরে বড় ধরনের হামলা হল।এক সপ্তাহ আগে কাবুলের একটি হোটেলে বোমা বিস্ফোরনে ২২জন নিহত হয়েছিল।অন্য আন্তর্জাতিক নেতারাও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াহিদ মাজরুহ সাংবাদিকদের বলেন, কাবুলে রবিবারের হামলা থেকে আমাদের ৯৫ জন মারা গেছে এবং ১৯১ জন আহত হয়েছে।আহতদের অধিকাংশই পুরুষ ছিলেন বলে তিনি জানান।
আফগানিস্তানের নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের দুর্দশা এবং দুঃখ প্রকাশের জন্য সাধারণ আফগানরা সোশাল মিডিয়াকে বেছে নিয়েছিল, কারণ তালিবান ও ইসলামিক স্টেট গ্রুপ কাবুলের উপর হামলা চালায় এবং বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আফগানিস্তান এখন সবচেয়ে মারাত্মক স্থানে পরিণত হয়েছে।টুইটারে তারা লিখেছেন, “আমরা কাবুলে এতটাই বিভ্রান্তির মধ্যে আছি যে, আমরা জানি না কিভাবে আমাদের নতুন দিন শুরু করব”।
“আমরা কি বাড়িতে থাকব বা কাজ করতে যাব, আমরা কি আমাদের বন্ধুদের সাথে দেখা করবো আর কান্নাকাটি করবো বা আমরা কি আশা করবো?” কাবুলে আমরা কীভাবে বাস করব? নাসর ড্যানেশ টুইট করেছেন: “বিস্ফোরণ ছাড়াই কাবুলে একটা দিন শুরু হচ্ছে, এটি একটি বিস্ময়কর বিষয় হবে। একদিন শুধুমাত্র এ ধরনের কল্পনা করা যেতে পারে।”ফেসবুকে নায়েদ কাদেরী লিখেছেন: “এটি সরকারের জন্য একটি বড় লজ্জার বিষয়, তারা বারবার মানুষকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। গরিব মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝার জন্য নেতাদের একটি পুত্র বা কন্যা হারাতে হবে।”
বিস্ফোরণটি শহরের এমন একটি জায়গায় ঘটেছে যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অফিস সহ বিদেশি দূতাবাসের অফিসও রয়েছে।বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে একশো মিটারের মধ্যে থাকা বাড়ির জানলা এবং কিছু নিম্নমানের কাঠামো ভেঙে গুড়িয়ে যায়।বিস্ফোরনের পর ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যায়-যেখানে মৃত মানুষের শরীরের অংশ, রক্ত এবং ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। আহতদের মধ্যে শিশুদেরও লক্ষ্য করা গেছে।
আফগান ও পশ্চিমি কর্মকর্তারা রাজধানীতে সাম্প্রতিক কিছু হামলার মধ্যে জড়িত থাকার সন্দেহে তালিবান-অনুমোদিত হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দোষারোপ করেছে।
আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মুখপাত্র নাসরাত রহিমি বলেছেন, হামলাকারীরা একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে নিকটস্থ জমহুরিয়াত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা পুলিশকে বলে নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতর ঢুকে পড়ে।আত্মঘাতী বোমারু অ্যাম্বুলেন্সটি কাবুলের নিরাপত্তাজনিত এলাকার অন্তত একটি চেকপোস্ট অতিক্রম করে।দ্বিতীয় চেকপয়েন্টে যাওয়ার পরই বিস্ফোরক ভর্তি গাড়িটি চিহ্নিত হতেই সেটা বিস্ফোরনে উড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানান নাসরাত রহিমি।রহিমি পরে পরে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, নিহতদের বেশিরভাগ ব্যক্তি বেসামরিক লোক। এই ঘটনায় চার সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তালিবান জঙ্গিরা কাবুলের ল্যান্ডমার্ক ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে হামলা চালায় এবং কমপক্ষে ২৫ জনকে হত্যা করে যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশি ছিল, সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এক সপ্তাহের মধ্যেই ফের বড় ধরনের হামলাটি ঘটে গেল।
তবে নিহতের সংখ্যা নিয়ে কিন্তু বিভ্রান্তি থেকেই যাচ্ছে, যেখানে আফগানিস্তানের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে য়াফগান সংবাদ মাধ্যমের দেওয়া তথ্যের পার্থক্য রয়ে গেছে। তবে রবিবার জারি করা একটি নিরাপত্তা সতর্কতায় সতর্ক করে দাওয়া হয়েছিল যে বিদেশিদের দ্বারা কাবুলের সুপারমার্কেট ও দোকানগুলোতে হামলা করার পরিকল্পনা করেছে আইএস জঙ্গিরা।
কাবুলে প্রাণঘাতী সন্ত্রাস করার জন্যকিছু বিদেশী সংগঠন আফগানিস্তানে তাদের উপস্থিতি পুনর্ব্যবহার করছে, পশ্চিমা সূত্র এএফপিকে এমনটা জানিয়েছে।
অক্টবরে কয়েকটি বোমা হামলায় ১৭৬জনের মৃত্যু হয়েছিল আফগানিস্তানে।এর আগে মে মাসে বোমার হামলায় কাবুলে নিহত হয়েছিল ১৫০জন। সব মিলিয়ে কাবুল হয়ে উঠেছে এখন এক “আতঙ্কের মৃত্যুপুরী”।
সূত্রঃ এএফপি ও বিবিসি
Published on: জানু ২৮, ২০১৮ @ ১৬:১২