উপাচার্য শূন্য পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, সঙ্কটের মুখে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

Main দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জুন ১, ২০২৩ @ ২৩:৪৬

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১ জুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি সত্ত্বেও আজও পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে “সার্চ কমিটি” গঠনের মধ্য দিয়ে উপাচার্য নিয়োগ হল না। ফলে অস্থায়ী উপাচার্য দিয়েই কাজ হয়ে এসেছে। এবার সেই অস্থায়ী উপাচার্য গতকাল ৩১ মে অবসর নেওয়ায় ফের নতুন করে উপাচার্য শূন্য হয়ে গেল এই বিশ্ববিদ্যালয়। ফইলে এক গভীর সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শিক্ষকদের একটা বড় অংশ।ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের একাংশ জানিয়েছেন- গতকাল ৩১ মে ২০২৩ অধ্যাপক তপন কুমার মন্ডলের অবসর গ্রহণের দিন ছিল, আজ তাই কোনও উপাচার্য এখনও পর্যন্ত নিয়োগ হয়নি। ফলে আজ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য্যহীন ছিল।

তাদের কথায়- শুরুটা হয়েছিল ২০২০ সালে তখন উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস, তার অবসরের পর বেশ কিছুদিন “উপাচার্যহীন” ছিল বিশ্ববিদ্যালয় । দুঃখের বিষয় যেখানে রাজ্য সরকারের “সার্চ কমিটি” গঠনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হয়, সেখানে ব্যতিক্রমী হল এই বিশ্ববিদ্যালয়। যার কোন “সার্চ কমিটি” নেই, ফলস্বরূপ কিছু আধিকারিক তাদের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তারা নানান পদে বসতে বেশ পারদর্শী। আজকের দিনে তাই স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন হচ্ছে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটি মূলত উপাচার্য, নিবন্ধক, অধ্যক্ষ, ডিআরইএফ ও নানান পদগুলো এখনও পর্যন্ত অস্থায়ী শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাই নিয়ম বহির্ভূতভাবে নানান পদে অ্যাক্টিং অর্থাৎ অস্থায়ীভাবে কিছু অযোগ্য শিক্ষকদের একচেটিয়া স্বজনপোষণের মধ্য দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। যা শিক্ষাক্ষেত্রকে তো কলুষিত করছে, সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার মান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যে র‍্যাঙ্কিং সিস্টেম তাকে তলানিতে পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম-নীতি না মেনে উপাচার্য অর্থাৎ অধ্যাপক তপন কুমার মন্ডলের নিয়োগ হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যহীন হওয়ায় নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে।

ইতিহাসের পাতা খুঁজলে আমরা অবশ্যই দেখতে পাবো, এক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান যা “বেঙ্গল ভেটেনারি কলেজ” নামে জগত বিখ্যাত ছিল। নানান ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সে তার ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলছিল। বর্তমানে ১৯৯৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের বুকে সেই ঐতিহ্যবাহী কলেজ রূপান্তরিত হল “পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়” নামে। পশ্চিমবঙ্গে এই একটাই বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রাণী চিকিৎসা ও প্রাণিবিজ্ঞান অনুষদ , দোহপ্রযুক্তিবিদ্যা এবং মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ নিয়ে অনেকটা পথ অতিক্রম করে এসেছে। পরিকাঠামোগত অপ্রতুলতা থাকলেও ঐতিহ্য এবং শিক্ষা ব্যবস্থার  খামতি কোনদিনও ছিল না। তার প্রমাণ মেলে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপকরা নানান স্তরে তাদের কর্মনিপুণতা দিয়ে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করে চলেছে ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের অভিযোগ- আজ আমরা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে এক অন্ধকারময় দিক দেখতে পাচ্ছি, কারণ এই ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান “উপাচার্যহীন”।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের দীর্ঘদিনের দাবি স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হোক, স্থায়ী অধিকারীরা বিভিন্ন পদে আসুক তবেই সঠিক পরিচালন সম্ভব হবে । না হলে উপাচার্য তার নিজের ক্ষমতা বলে অযোগ্য ব্যক্তিকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ করার ফলে যে অচল অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে, এই অচল অবস্থা আগামী কয়েক বছরের তা কাটবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাঙ্গে উন্নতি স্থিমিত হয়ে গেছে। সিনিয়ারিটি মেইনটেইন না করে যেভাবে অযোগ্য ব্যক্তিগুলোকে বিভিন্ন পদে অধীনস্থ করা হচ্ছে, যা শিক্ষক মন্ডলীদের মধ্যে বিভ্রান্তির বাতাবরণ তৈরি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও অভিযোগ, কতিপয় শিক্ষক, আধিকারিক পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তারা যেহেতু অস্থায়ী তাই নিজের ইচ্ছামত নিয়্মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক, দুর্নীতিগ্রস্ত কাজ করে চলেছেন। এর আশু সমাধান প্রয়োজন, তবেই আবার এই বিশ্ববিদ্যাল্যের গৌরব আগামী দিনে ফিরে আসবে। তাই আজকের বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য হীন তা কিছুদিনের মধ্যেই কেটে উঠুক এবং স্থায়ী কেউ আসুক এবং বিশ্ববিদ্যালয় অচল অবস্থা এবং বিভিন্ন পদে স্থায়ী আধিকারিক আসুক এবং পঠন-পাঠনের উন্নতি হোক শিক্ষা, গবেষণা এবং সম্প্রসারণের কাজ যেন আগের মত চলে এটা আশা করা যায়।

Published on: জুন ১, ২০২৩ @ ২৩:৪৬


শেয়ার করুন