এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ বিবিসি ওয়াইল্ডলাইফ শো’তে তুলে ধরা হবে সেই রাজবংশের কাহিনি যারা এখন বান্ধবগড়ে রাজত্ব চালাচ্ছে। স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো ভারতের সেই স্থানে বান্ধবগড় ন্যাশনাল পার্কে পড়ে থেকে রাজ ভেরা নামে সুন্দর বাঘের সঙ্গে নানা মুহূর্ত কাটিয়েছেন। প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁর কার্যকলাপ। কিভাবে তিনি তার শাসন চালান গোটা এলাকায় সেটাই প্রত্যক্ষ করেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক। ফিরে গিয়ে তিনি পাঁচটি পর্বে তুলে ধরেছেন ব্রতিশ সংবাদপত্র ডেইলি মেইল-এর অনলাইন সংস্করণে। যেখানে বান্ধবগড়ের রাজ ভেড়াকে তারা আখ্যা দিয়েছেন “টাইগার কুইন অফ ইন্ডিয়া” অর্থাৎ ভারতের ব্যাঘ্র রানী বলে।তিনি কি দেখলে, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
রাজ ভেরা এক বাঘ রাজবংশের শাসক যাকে দেখলে মনে পড়ে যাবে এক শতাব্দী পিছনের সেই সময়ের কথা। একজন সম্পূর্ণ পূর্ণবয়স্কা মহিলা বাঘ, পাঁচ বছরের এই বাঘিনী এখন পাঁচ বছর বয়সের এক অত্যন্ত শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ বাঘ। তার সঙ্গে বাড়ছে রাজ ভেড়ার কন্যা সোলো যে তার খুব কাছেই থাকে নিজের এলাকার মধ্যে।
তারা যেখানে থাকে সেই স্থান ভারতের বিখ্যাত বান্ধবগড় ন্যাশনাল পার্ক নামে বিখ্যাত। দিল্লি থেকে ৫০০ মেইল দক্ষিণে। এই পার্কটি গড়ে উঠেছিল ১৯৬৮ সালে। পার্কটিকে দেখভালের দায়িত্বে আছে বন দফতরের রক্ষীরা, যারা প্রতিনয়ত হাতির পিঠে চেপেই এলাকার উপর নজর রাখেন।
স্থানীয় ধ্রুব সিং এই এলাকার বাঘেদের দীর্ঘ ইতিহাস জানেন। রাজ ভেরা বাস করে এখন বান্ধবগড় জঙ্গলের দূর্গে। প্রাচীন এই শহর একসময় মহারাজাদের শাসিত ছিল। ব্রিটিশ সাংবাদিককে তিনি যা বলেন তা হল- এই ব্যাঘ্রানীর শাসন চালানোর পন্থা খুব অভিনব। যেহেতু তিনি এখন এখানকার একমাত্র শাসক। এখানে তার শাসন চলে। তার শাসনের মূল লক্ষ্য হল বনকে পরিবেশমুখী করে তোলা। তাতে কেউ যাতে কোনওভাবে গোটা অরন্যের ক্ষতিসাধন করতে না পারে রাজ ভেড়া সেটাই দেখভাল করে। সেখানে যারা বসবাস করেন সকলেই রাজ ভেরার শাসন মেনে চলেন।
বান্ধবগড়ের পাহাড়ি এলাকায় দুর্গের কাছে সে তিনটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী শাবকের জন্ম দেয়। তার কাজ হলে দের প্রাপ্তবয়স্ক করে তোলা এবং স্বাধীনতার স্বাদ দেওয়া। সে তাদের সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। তার শাবকদের জন্মের এক সপ্তাহ পর থেকেই চোখ খুলে যেতেই তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়। টানা আট সপ্তাহ ধরে তারা মায়ের দুধ পান করে। এরপর তারা মেয়ের দুধ ছাড়ে।
মা রাজ ভেরার সঙ্গে লড়াইয়ে মেয়ে সোলো (মাটিতে গড়াচ্ছে)।
ধীরে ধীরে তারা বাড়তে থাকে আর চার সপ্তাহ পর থেকে তাদের দেহের ওজন বাড়তে থাকে। এক মাস পর থেকে রাজ ভেরা তার শাবকদের স্বাভাবিক খাবার দিতে থাকে। সেই সঙ্গে সে টানা ছ’মাস পর্যন্ত দুধ সরবারহ করে যায় শাবকদের। কিন্তু দুঃখের বিষয় বহু শাবক প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে ওঠার আগেই নানাভাবে শিকার হন। কখনও তারা দুর্গটনা কিংবা পুরুষ বাঘের আক্রমনে অথবা চোরাশিকারিদের দ্বারা আবার কখনও মানুষ আক্রমনকারী থেকে শুরু করে খারাপ আবহাওয়া আবার কখনও লেপার্ডের শিকার হয় এইসব শাবকরা।
আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে শাবকরা। তারা আশপাশের সমস্ত এলাকা চষে বেড়ায়। মায়ের কাছে এই সময় লড়াই করার সহজাত প্রবৃত্তিগুলি শিখে নেয়।এরপর রাজ ভেড়া নিজের এলাকার বাইরে যায় না। আট বর্গ মেইল এলাকা জুড়েই চলে তারা শাসন।
রাজ ভেরার কন্যা সোলোর বয়স এখন তিন বছর। সোলো এখন মাঝেমধ্যেই চলে আসে তার মা রাজ ভেড়ার শিকার ধরার এলাকায়। যেখানে অনেক ধরনের প্রানী আছে। কখনও রাজ ভেড়া আর সোলো অর্থাৎ মা-মেয়ে মুখোমুখি হয় যখন মা রাজ ভেরা গোপনে কোন প্রাণী শিকার করে আর খুব কাছ থেকে সোলো তা নজর রাখে। স্বাভাবিকভাবে সোলো মায়ের কাছে খুব কাছে চলে আসে। কিন্তু মা রাজ ভেরা তা মেনে নিতে চায় না, তুমি এখন বড় হয়েছো তুমি নিজের খাবার নিজের জোগাড় করে নাও। এটা আমি আমার পরিবারের জন্য করেছি। এখানে তুমি তাকাবে না।ভাবে-ভঙ্গিমায় এমন ইঙ্গিত করে রাজ ভেরা।কিন্তু সোলো তা শুনবে কেন তাই রাজ ভেরার কাছ থেকে তা কেড়ে নেয় সোলো।
রাজ ভেড়া তখন একটু পিছিয়ে যায় মেয়ের কাজ দেখে। মেয়ে এখন তার শত্রু। প্রথমবারের মতো শুরু হয় রাজ ভেরার সঙ্গে মেয়ে সোলোর লড়াই। যে লড়াই ঘিরে গোটা অরন্যের পশুপাখিরা তটস্থ হয়ে পড়ে। সকলেই দর্শকের ভূমিকায় রাজবংশের দুই নারীর লড়াই দেখতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে চলে লড়াই। কিন্তু রাজ ভেরা তার পূর্ণ শক্তি দিয়ে সোলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সোলোও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। নিজেকে রোল করে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। অবশেষে রাজ ভেরাই জিতে যায় লড়াইয়ে। ধীরে ধীরে ফিরে যায় সোলো। কিন্তু যাওয়ার সময় সে প্রতিজ্ঞা করে যায় আবার সে মায়ের এলাকায় ফিরে আসবে।
জঙ্গলের ভিতর রাজ ভেরার বোন বিবা ও তার এক ভাই বিশ্রামের মুহূর্তে।
বর্তমানে সে এখন আরও বেশি অভিজ্ঞ আর শক্তিশালী। একই সময় রাজ ভেরা তার ছোট বোন বিবার তিনটি বড় শক্তিশালী শাবককে মেরেছে তারা চলে এসেছিল রাজ ভেরার এলাকার মধ্যে। একদিন তার মা ও ভাই ঘুমোচ্ছিল সেই ফাকে বিবা সেখানে গিয়ে একজন প্রাণীকে মেরে ফেলে। এরপর সে প্রাণীটিকে খেয়ে ফেলে।
বিবা এইদিক থেকে খুব ভাগ্যবান, কারণ-গোটা বান্ধবগড়ে এমন একজনও নেই যে তাকে বিরক্ত করে। পুরুষ বাঘরা তার এলাকায় যায় না। বিবার বয়স যখন ১৭ তখন সে নিজের এলাকা খুঁজে নেয়। ছয় মাসের মধ্যে তা একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে যায়। রাজ ভেরা এখন তার তিন সন্তানকে নিয়ে চলে। যখন আমরা রাজ ভেরার প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হই সেই মুহূর্তটা ছিল খুব সুন্দর। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ডেইলি অনলাইনকে বলছিলেন থিও ওয়েবের ডিরেক্টর।তবে এও আশা করা হচ্ছে যে রাজ ভেরার অবর্তমানে বান্ধবগড়ের শাসনভার তুলে নেবে সোলো। সোলো এখন নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলছে।কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ বিবিসি, ডেইলি মেল অনলাইন, থিও ওয়েব। ছবি সৌজন্যেঃ বিবিসি/থিও ওয়েব