Published on: অক্টো ৫, ২০২৩ at ১৯:৫৮
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ: একটা ঘটনা ঘটেছে। এজন্য বিপর্যস্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের একাংশ।সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে গতকাল থেকে সমানে দেখানো হচ্ছে বিপর্যস্ত এলাকার ছবি। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি যেখানে প্রভাবিত হয়েছে সেই ছবি বেশি করে প্রচার করার ফলে একটা আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক এবং পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং-এর স্বাভাবিক জায়গাগুলিকে দেখানো হচ্ছে না। সেইসব জায়গাগুলিকেও যদি দেখানো হয় তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যায়, গোটা সিকিম এবং দার্জিলিং-এ পরিস্থিতি আজ কেমন।
সিকিম সরকারের পর্যটন এবং অসামরিক বিমান পরিবহন দফতর থেকে একটি অ্যাডভাইজরি জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-
- তিস্তা নদীতে বন্যার কারণে সৃষ্ট অভূতপূর্ব জরুরী পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, সিকিম ভ্রমণের পরিকল্পনা করা সমস্ত পর্যটকদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে তাদের ভ্রমণ স্থগিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
- আরও, মাঙ্গান জেলায় আটকে পড়াদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে কারণ রাজ্য সরকার 6 অক্টোবর 2023 থেকে শুরু হওয়া সমস্ত সম্ভাব্য সাহায্য এবং সমর্থন প্রসারিত করার আশ্বাস দিয়েছে আবহাওয়া পরিস্থিতির সাপেক্ষে।
- অধিকন্তু, এটি জানানো যাচ্ছে যে লাচুং এবং লাচেন অঞ্চলে আটকে থাকা সমস্ত পর্যটক নিরাপদ এবং এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিকূল খবর পাওয়া যায়নি।
উঠে এল একাধিক প্রশ্ন
সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর পক্ষ থেকে ফোনে একাধিক ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্টস, হো্টেলিয়ার্সদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল।আমরাও জানতে চেয়েছি, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম যেভাবে প্রচার করছে, তাহলে কি পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গেল? পর্যটকরা কি তাহলে খুবই বিপদের মধ্যে আছে? গোটা সিকিমেই কে এখন একই চেহারা? এই সব প্রশ্নগুলি সামনে চলে এসেছে। এরপরই আমরা আসল সত্যটা জানার জন্য ফোন করি দার্জিলিং এবং সিকিমের কয়েকজন হোটেল ব্যবসায়ীকে। তারা যা ফোনে জানালেন এবং আজকের ছবি পাঠিয়ে যা দেখালেন তাতে আমাদের মনে হয়েছে যে এই সংবাদ ভ্রমণপ্রেমী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই হবে। কারণ, তিস্তার হড়পা বান এবং মেঘবিস্ফোরণের ফলে সিকিমের একটা বড় অংশে এবং দার্জিলিং-এর কিছু অংশে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ঠিক কি ঘটেছে
সিকিম এক্সপ্রেসের সূত্র অনুযায়ী, উত্তর সিকিমের চুংথাং থেকে কালিম্পং জেলার তিস্তা বাজার পর্যন্ত একাধিক স্থানে 14টি সেতু, রাস্তার গঠন এবং সম্পত্তি ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে সিকিম দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় 10 জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং সিংটামের কাছে বারডাং ক্যাম্পে নিযুক্ত 22 জন সেনা সদস্য সহ প্রায় 80 জন নিখোঁজ বলে জানা গেছে। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দিনভর বিভিন্ন স্থানে তিস্তা নদীর পানিতে আটকে পড়া অসংখ্য মানুষকে উদ্ধার করেছে।
চলছে উদ্ধার কাজ
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে আজ সকাল থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনী পর্যটক এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের কাছে টেলিফোন সংযোগ বিস্তৃত করছে, নিখোঁজ 22 জন ভারতীয় সেনা সদস্যের জন্য অনুসন্ধান অভিযান অব্যাহত রয়েছে৷ইতিমধ্যে, ত্রিশক্তি কর্পসের সৈন্যরা উত্তর সিকিমের চুংথাং, লাচুং এবং লাচেন এলাকায় আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিক এবং পর্যটকদের চিকিৎসা সহায়তা এবং টেলিফোন সংযোগ প্রসারিত করছে।সিংটামের কাছে বরদাংয়ে জলাবদ্ধতার নীচে ডুবে থাকা যানবাহনগুলিকে খনন করার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চলছে। নিখোঁজদের খোঁজে এখন তিস্তা নদীর ভাটির এলাকায় নজর দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নিখোঁজ হওয়া 23 জনের মধ্যে 4 অক্টোবর সন্ধ্যায় একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
টাফি’র অনিল পাঞ্জাবির প্রতিক্রিয়া
ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া বা টাফি’র ন্যাশনাল কমিটির সদস্য অনিল পাঞ্জাবি বলেন, “সিকিমে মেঘবিস্ফোরণ এবং তিস্তার হড়পা বানের জেরে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে, ভারতীয় সেনা এবং স্থানীয় প্রশাসন তৎপরতার সাথে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে। বিপর্যস্ত এলাকার বাইরের অন্যান্য এলাকায় পর্যটকদের প্রতি নজর রাখা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার উদ্যোগী হয়েছে। একই সঙ্গে ভারত সরকার এখন উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে নজর দিয়েছে। ফলে, এতবড় ঘটনার পরেও সেনা পাঠিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রয়াস জারি রাখা হয়েছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই সিকিমের পরিস্থিতি ভাল হয়ে যাবে। এজন্য পর্যটকদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।”
ETAA –র কৌশিক ব্যানার্জির প্রতিক্রিয়া
এন্টারপ্রাইজিং ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বা ETAA -এর পূর্ব ভারতের চেয়ারম্যান কৌশিক ব্যানার্জি বলেছেন- “সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের কয়েকটি অঞ্চলে সাম্প্রতিক মেঘ বিস্ফোরণের বিষয়ে, এটি একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। আমার মতে, এই বন্যার ফলে নদী তীরবর্তী মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আমাদের সরকার এবং সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে এবং আমি সমস্ত পর্যটক এবং স্থানীয় জনগণকে শান্ত থাকার এবং আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমাদের ETAA সদস্যরা আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে যেকোনো সহায়তার জন্য সর্বদা উপলব্ধ।”
“সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের সংকট একটি বড় উদ্বেগের বিষয়, একাধিক ফ্রন্টে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মিডিয়ার জন্য পরিস্থিতির সঠিক এবং নিরপেক্ষ কভারেজ প্রদান চালিয়ে যাওয়া অপরিহার্য যাতে জনসাধারণ উন্নয়ন সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত হয়। আমরা ETAA-তে ক্ষতিগ্রস্তদের কষ্ট লাঘবের যে কোনো প্রচেষ্টাকে সমর্থন করব।”
হোটেল ব্যবসায়ী অনির্বান চ্যাটার্জির প্রতিক্রিয়া
অভিযান হোটেলস এন্ড হসপিটালিটি প্রাইভেট লিমিটেদের ডাইরেক্টর অনির্বান চ্যাটার্জি সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে আজকের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন।তার দার্জিলিং এবং গ্যাংটক দুটি জায়গাতেই দুটি করে মোট চারটি হোটেল আছে। সিকিমের পরিস্থিতি নিয়ে যেভাবে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে তা নিয়ে বিরক্ত অনির্বান এদিন বলেন- উত্তর সিকিমে মেডলির কাছে রাস্তা ভেঙে গিয়েই বিপর্যয় ঘটিয়েছে। কিন্তু বাকি সিকিম ঠিক আছে। গ্যাংটকে আমাদের হোটেলে এই মুহূর্তে মোট ১৪ জন পর্যটক রয়েছেন।আজ সকাল থেকে রাস্তা মেরামতের কাজ দ্রুত গতিতে শুরু হয়েছে। উদ্ধার কাজ চলছে পুরোদমে। প্রশাসন দারুনভাবে তৎপর।আশা করছি, দু’একদিনের মধ্যে রাস্তা ঠিক হয়ে যাবে।তাছাড়া, আজ সকাল থেকেই এখানে আবহাওয়া পরিষ্কার। গ্যাংটক ও দার্জিলিং-এর ছবিতেই সেটা পরিষ্কার।
হোটেল ব্যাবসায়ী দেবজ্যোতি ব্যানার্জির প্রতিক্রিয়া
দার্জিলিং-এর আর এক হোটেল ব্যাবসায়ী দেবজ্যোতি ব্যানার্জি একই কথা জানালেন।দার্জিলিং-এর লেবং-এ বাদামতমে ইকোলাক্স মাউন্টেন মিস্ট হোটেলের কর্ণধার বলেন- লেবং-এ আজ সকালে দারুন আবহাওয়া ছিল। দার্জিলিং-এ কোনও অসুবিধা নেই। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। সামনে পুজো। তাই, নিশ্চিন্তে চলে আসুন দার্জিলিং। প্রশাসন অত্যন্ত তৎপর থাকায় পর্যটকদের কোনও অসুবিধা হওয়ার সম্ভাবনাই নেই।
ট্যুর অপারেটর প্রশান্ত মাঝির প্রতিক্রিয়া
অঙ্কুর ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেডের ডাইরেক্টর প্রশান্ত মাঝি বলেন, আমরা আগামী দু’তিনদিন অপেক্ষা করব। আশা করব, এর মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কারণ, এবারের পুজোয় দার্জিলিং এবং উত্তরবঙ্গে বহু পর্যটক বুকিং করেছেন। তাই পরিস্থতির উন্নতি হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
Published on: অক্টো ৫, ২০২৩ at ১৯:৫৮