SAFE WILDLIFE:পর্যটন হ্রাস গণ্ডার সংরক্ষণে নয়া চ্যালেঞ্জগুলিকে সামনে নিয়ে এসেছে

Main কোভিড-১৯ দেশ বন্যপ্রাণ বিদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। মানুষের পাশাপাশি এখন বন্য জীবজন্তুও নিরাপদ নয়। তাদের বিষয়েও নজর রাখা শুরু হয়েছে। সারা বিশ্বে এরকম একাধিক ন্যাশনাল পার্ক আছে। যেখানে রয়েছে নানা প্রজাতির জীবজন্তু। এই সময়ে তারা কেমন আছে। সেই খবর আমরা বিভিন্ন সূত্র ধরে জানার চেষ্টা করেছি। সংবাদ প্রভাকর টাইমস ‘সেফ ওয়াইল্ডলাইফ’ শিরোণামে এক ধারাবাহিক প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজ চতুর্থ পর্ব।

Published on: মে ৪, ২০২০ @ ২৩:৫০
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ:  এ এক নয়া সমস্যা নিয়ে এসেছে বন্যপ্রাণীদের জীবনে। সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তখন বিশ্বের একাধিক জাতীয় উদ্যানগুলি আরও কঠিন সমস্যার মুখে পড়েছে। পর্যটনের দুঃসময় এখন গণ্ডার সংরক্ষনে নতুন চ্যালেঞ্জগুলিকে সামনে নিয়ে এসেছে। ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস এই বিষয়ে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা দু’টি দেশের গণ্ডার সংরক্ষণের উপর আলোকপাত করেছে। তারা দেখানোর চেষ্টা করেছে এই লকডাউনের সময় ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এই দু’টি দেশের গণ্ডাররা।

সংরক্ষণবাদীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে বন কর্মীদের সুনির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে যাতায়াত, বন্যজীবনে পর্যটন হ্রাস এবং বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থলের আশপাশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দারিদ্র্যের মাত্রা বৃদ্ধি চোরা শিকা্রীদের কাজকে উৎসাহিত করেছে। লকডাউনের এই সময়ে যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে গণ্ডারদের আবাসস্থলগুলিতে বিশেষ নজরদারি করা হয়েছে। গণ্ডার সংরক্ষণ ও সুরক্ষার স্থিতি সম্পর্কে আরও জানার জন্য, ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস পাঁচটি বিদ্যমান প্রজাতির গন্ডার সংরক্ষণের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে টেক্সাস ভিত্তিক দাতব্য ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশনের (আইআরএফ)-এর ভারপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সিসি সিফার্টের সাথে কথা বলেন।

COVID19 এবং গণ্ডারের শিং

  • COVID-19 মহামারী বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে চলেছে। ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর থেকে নিরাময়ের পথ খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, ঐতিহ্যবাহী বা “বিকল্প” ওষুধ চিকিৎসকরা বিশেষত চিন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য পশুর অংশ ব্যবহার করে প্রতিকারের প্রচার চালাচ্ছেন। ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশন সূত্রে, এমন খবর পাওয়া গেছে যে চিন এবং লাওসের অবৈধ গণ্ডার-শিং বিক্রেতারা এখন কোভিড -১৯ এর চিকিত্সা ও প্রতিরোধের জন্য ওষুধে গণ্ডারের শিং ব্যবহারের পক্ষে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে এ ধরণের দাবি সমর্থন করার মতো কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। মৃত কেরাটিন কোষ দ্বারা তৈরি, গণ্ডারের শিং মানুষের চুল এবং নখ থেকে আলাদা নয়। চিন ও ভিয়েতনামে গণ্ডার শিংয়ের কালোবাজারি ব্যবসায়ের সাথে জড়িত থাকার কারণে সেখানে বড় ধরনের ফৌজদারী সিন্ডিকেট যুক্ত হয়েছে। সংরক্ষণবাদীরা আশঙ্কা করছেন যে COVID-19 নিরাময়ের এমন মিথ্যা দাবি ইতিমধ্যে গন্ডার শিকারের কাজকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • “অবৈধ বাজারগুলিতে গন্ডারের শিংয়ের চাহিদা বরাবরই বন্য গণ্ডারের জন্য আতঙ্কের কারণ। এমন খবরও পাওয়া গেছে যে চিনা জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন কোভিড -১৯ এর ওষুধ হিসাবে ভালুকের পিত্তের নির্যাস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে যা বন্যজীবী পাচারকারীদের গণ্ডারের শিং খুঁজতে উত্সাহিত করেছিল ভুল ত্রুটিযুক্ত চিকিত্সা হিসাবেও, “- সিসি সিফার্ট বলেন।
  • পাঁচটি গন্ডার প্রজাতির মধ্যে বন্য জাভান গণ্ডার এবং সুমাত্রার গণ্ডারের জনসংখ্যা ১০০-রও কম। কিন্তু কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নেটিভ আবাসে নির্মম হারে শিকারের কারণে উভয় প্রজাতিই আজ মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এখন, এই দুটি প্রজাতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। গণ্ডার শিকারীরা প্রাথমিকভাবে ভারতীয় গন্ডার এবং আফ্রিকার (কৃষ্ণ ও সাদা গন্ডার) দুটি প্রজাতির গণ্ডারের প্রতি মনোনিবেশ করে থাকে।

লকডাউনে ভারতে গণ্ডারের সুরক্ষা

ভারতীয় গণ্ডারকে বৃহত্তর এক-সিং যুক্ত গণ্ডারও বলা হয়। প্রায় 3,600 এরও বেশি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে ভারতের আসামে  কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে এই প্রজাতির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিত্ব করে। বর্তমানে সেই সংখ্যা 2,413টি। তবে চোরা শিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় পার্কে গণ্ডার শিকারের ঘটনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।

যদিও এতসব ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও গণ্ডার চোরা শিকারীদের বাড়বাড়ন্ত কিভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশনের বক্তব্য পরিষ্কার। তারা বলছে- “২৫ শে মার্চ ভারতে দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হয়েছিল,  বন্যজীবনজীবী কর্মকর্তাদের উপর গণ্ডারদের সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বন্যজীবন ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ভারত সরকার জরুরি সেবা হিসাবে বিবেচনা করে। অসমের প্রায় 2,650 বৃহত্তর এক-শিংযুক্ত গণ্ডার সেখানে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত রয়েছে, কারণ বনকর্মীরা এখানে সারা সপ্তাহজুড়ে দিন-রাত তাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।”

কাজিরাঙায় সাম্প্রতিক গণ্ডার শিকারের প্রয়াসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন- “লকডাউন চালু হওয়ার পর থেকে কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ও তার আশপাশে গণ্ডার হত্যার জন্য কমপক্ষে দু’টি প্রচেষ্টা হয়েছে। তবে, সেখানে কেবল বনরক্ষী বা পুলিশ কর্মীরাই অতিরিক্ত সচেতন নন, স্থানীয় লোকজনও লকডাউনের সময় গণ্ডার রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। তারাই কড়া নজর রেখে চোরা শিকারীদের গ্রেফতারের রাস্তা সুগম করেছে।”

আফ্রিকায় গণ্ডারের পক্ষে কঠিন সময়

হাজার শতাব্দী আগে আফ্রিকার প্রান্তরে কালো ও সাদা উভয় গণ্ডার ছড়িয়ে পড়েছিল, তবে সাম্প্রতিক দশকে তাদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে মূলত শিকারের কারণে। আগে জনসংখ্যার আকার ছিল 5,500 এরও বেশি, তবে পরবর্তীতে সংখ্যাটা 18,000 এর কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে, দ্রুত পর্যটন শিল্পের অর্থায়ন এবং সংরক্ষণের সফল প্রচেষ্টার ফলে আফ্রিকার দেশগুলিতে গণ্ডার সংরক্ষনে সাহায্য করেছে।

তবে, মহামারীর মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশে পর্যটকদের অনুপস্থিতিতে আফ্রিকান গণ্ডাররা এখন কী করছে?

এর উত্তর দিতে গিয়ে আইআরএফ-এর ভারপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সিসি সিফার্ট জানান- “আফ্রিকাতে সংরক্ষণ এবং সংরক্ষণের প্রচেষ্টাগুলি প্রায়শই পর্যটন আয়ের সাহায্যে অর্থায়িত হয়। কোভিড-১৯ এর ফলে পর্যটন অবরুদ্ধ এবং পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কঠিন পরিস্থিতি উপস্থিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় আয় ব্যতীত তাদের অন্যভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় লকডাউনের সময় গণ্ডার শিকারের ঘটনা হ্রাস পেয়েছে। আর এজন্য তাদের দেশের সরকারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সেখানে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী যেভাবে নজর রাখা শুরু করেছে তাতে চোরা শিকারীদের বাড়বাড়ন্ত কমেছে।

পর্যটন প্রবাহের অনুপস্থিতি উদ্বেগের কারণ

লকডাউনগুলি ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা উভয় দেশেই গণ্ডার পর্যটন শিল্পকে বিকল করে দিয়েছে। হঠাৎ এই পরিবর্তন কিভাবে গণ্ডার সংরক্ষণকে প্রভাবিত করছে, তা নিয়ে সিফার্ট জানান তাঁর বক্তব্য। বলেন- “কাজিরাঙায় পর্যটন মরসুম সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শেষ হয় যখন এই অঞ্চলে প্রাক-বর্ষা শুরু হয়। আসামের বন্যপ্রাণী অঞ্চলে পর্যটন হ্রাস পেয়েছে যেহেতু লকডাউনটি কার্যকর হতেই বহু মানুষের আয় থমকে গিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পরিস্থিতি অবশ্য ভিন্ন। সেখানে অর্থনীতি, ব্যবসা ও চাকরি আজ মহাসংকটের মুখে দাঁড়িয়েছে। তাই সেখানে সহজে সবকিছু মিটবে না। এদের কাছে তাই গণ্ডার পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা

পর্যটক এবং গাইডরা প্রথাগতভাবে অরণ্যে একটা দায়ত্ব পালন করে থাকে। তাদের উপ্সথিতি চোরা শিকারীদের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এখন এই লকডাউনের সময় তাদের অনুপস্থিতিতে চোরা শিকারীরা যাতে সেই সুযোগ না পায় তার জন্য বনকর্মীদের বিশেষ নজর রাখতে হবে। আর এজন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পলন করতে হবে কিন্তু রেঞ্জারদেরই।

Published on: মে ৪, ২০২০ @ ২৩:৫০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

36 + = 38