৪৯দিন সমুদ্রে ভেসে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফিরে এল ইন্দোনেশিয়ান কিশোর

Main বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: সেপ্টে ২৫, ২০১৮ @ ২৩:৪৫

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ সত্যি এও যেন আর এক শঙ্করের কাহিনি। বিভূতিভূষন বন্দ্যোপাধ্যায়ের শঙ্কর ছিল এক কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার এই তরুণ একেবারে বাস্তব।সত্যি ১৯ বছরের কিশোর অ্যালদি নোভেল অ্যাদিল্যাং সমুদ্রের বুকে ভেসে থেকে প্রতি মুহূর্তে যেভাবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ঘরে ফিরে এলেন তা একেবারে অবিশ্বাস্য।

টাকা উপার্যনের জন্য অ্যাদিল মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার এই কঠিন কাজ বেছে নিয়েছিল। ইন্দোনেশিয়ায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য এক ধরনের কাঠের ভেলা সমুদ্রে ভাসানো হয়। কাঠ দিয়ে তৈরি এই ভেলায় মাঝখানে একটি কাঠেরই কুঁড়েঘর বানানো হয়। রোদ, ঝড়, জল, বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে এই কুঁড়েঘরে আশ্রয় নেওয়া যায়।মালিকরা কোনও একজনকে দিয়ে সমুদ্রে পাঠিয়ে দেয় মাছ ধরতে। অ্যালদি ছিল এমনই একটি ভেলায়। ইন্দোনেশিয়ায় যাকে বলা হয়”রমপং”। এই রমপং-এ অ্যালদি আলো জ্যালানোর কাজ করত। আর ভেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেত। প্রতি সপ্তাহে মালিকের লোকজন ভেলা থেকে শিকার করা মাছ সংগ্রহ করে ডাঙায় নিয়ে যেত। সেই সঙ্গে ভেলায় ব্যবহৃত খাবার, জল, জ্বালানি সরবরাহ করত।

কিন্তু বিপত্তি ঘটে ১৪ই জুলাই প্রবল ঝড়ে ভেলার নোঙর ছিঁড়ে যাওয়ার পর। ভেলা তখন নিশানাহীনভাবে ভাসতে শুরু করে। ভয় পেয়ে যায় ১৯ বছরের কিশোর অ্যালদি। বাঁচার জন্য প্রাণপণে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু ঝড়ের গতি এতই তীব্র ছিল যে তখন তাকে উত্তর সুলাওয়েসি থেকে গুয়াম দ্বীপের দিকে হাজার কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। অচেনা পরিবেশে মাঝ সমুদ্রে ভেসে চলেছে বুঝতে পেরে কেঁদে ফেলে এই কিশোর। তখনও সে জানত না আর কোনওদিন তার ঘরে ফেরা হবে কিনা।

সমুদ্রে ভেসে থাকার সময় ১০টিরও বেশি জাহাজ পাশ থেকে চলে যায়। হাত নেড়ে অ্যালদি উদ্ধারের জন্য বললেও তারা কোনও কর্ণপাত করেনি। অবশেষে ৩১শে আগস্ট এমভি আরপিগগিও নামে পানামার একটি জাহাজ তাকে গুয়াম দ্বীপের কাছ থেকে উদ্ধার করে। কারণ জাহাজটি তখন জাপানেই যাচ্ছিল। জাহাজের ক্যাপ্টেন যখন অ্যালদিকে উপকূল রক্ষীবাহিনীর কাছে নিয়ে যায় তখন তারা ওই কিশোরকে জাপানের তোকুয়ামাতে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন।

এরপর ৬সেপ্টেম্বর অ্যালদিকে জাপানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার প্রাথমিক চিকিৎসার পর ইন্দোনেশিয়ার দুতাবাসের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। জাপানে ইন্দোনেশিয়ার কন্স্যুলেট জেনারেল ওসাকা মির্জা নুরহাইদাত যিনি অ্যালদিকে দেশে ফিরিয়ে আনেন তিনি জাকার্তা পোস্টকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানান অ্যাদিলের বিভীষিকাময় মুহূর্তের কথাগুলি।

৪৯টি দিন যে কিভাবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হয়েছে এই কিশোরকে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। কাঠের সেই ভেলা ভেসে চলেছে। চারিদিকে শুধুই জল আর জল। আছে তিমি কিংবা আরও অজানা অচেনা ভয়ানক জলজ প্রাণীর ভয়। তার মধ্যে খিদের জ্বালা, প্রাণের ভয়, আর তৃষ্ণা। বাধ্য হয়ে এক সময় অ্যালদি ভেলার কুঁড়ে ঘরের কাঠ খুলে নিয়ে তা ভেঙে টুকরো টুকরো করে কেটে নিয়ে তা জ্বালিয়ে সমুদ্র থেকে মাছ ধরে তুলে সেই আগুনে পুড়িয়ে খেত। আর নিজের গায়ের জামা সমুদ্রের জলে ভিজিয়ে নিয়ে তা নিংড়ে মুখের মধ্যে ঢেলে তৃষ্ণা মেটাত। আর প্রতি মুহূর্তে ভয় তাড়া করে বেড়াত। আর তখন সে চিৎকার করতে থাকত।

মির্জার কথায়, “অ্যালদিকে উদ্ধারের ঘটনাটা ছিল খুব কঠিন আর বিপজ্জনক। পানামার জাহাজটিকে দেখে গায়ের জামা খুলে তা নাড়তে থাকে। প্রথমদিকে, জাহাজের ক্রু তাকে দেখেনি, তাই অ্যালদি তার রেডিওটিকে ফ্রিকোয়েন্সিতে নিয়ে যায়। সৌভাগ্যক্রমে, জাহাজের ক্যাপ্টেন সংকেত ধরতে পারে। বুঝতে পা্রে, কেউ সাহায্যের জন্য আবেদন করেছে। তখন তিনি ঘুরে যান।কিন্তু সেই সময় ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক ছিল, তাই জাহাজটি অ্যালদির কাছে পৌঁছতে খুব বেগ পেতে হচ্ছিল। জাহাজটি অবশেষে তাকে সাহায্য করার জন্য একটি দড়ি ছুঁড়ে দেয়, কিন্তু দড়িটি অ্যালদির রোমপং-এর কাছে পৌঁছায়নি। মির্জা বলেন, “অ্যালদি তারপর দড়িটি ধরার জন্য সমুদ্রের মধ্যে ঝাঁপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যখন তরঙ্গ ও বায়ু তাকে ঠেলে দিল।ছেলেটির শরীরে বল ছিল না। ফলে দড়িটি খুঁজে পেতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। এইসময় জাহাজের ক্রু তার হাত ধরতে পেরেছিল,” বলেন মির্জা।এভাবেই বেঁচে ফিরে আসেন ইন্দোনেশিয়ার কিশোর।

সর‍্যি কথায় বলে না-“রাখে হরি মারে কে”।

ছবি-জাকার্তা পোস্ট

Published on: সেপ্টে ২৫, ২০১৮ @ ২৩:৪৫


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

45 − 36 =