২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপঃ গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে থাকতে পারেন সেরা এই ৮ জন

খেলা বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: জুন ৪, ২০১৮ @ ১৯:২৮

এসপিটি স্পোর্টস ডেস্কঃ বিশ্বকাপে খেলতে আসা বহু খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে ‘গোল্ডেন বুট’ জেতার। এর আগের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জেতা এমন অনেক খেলোয়াড়কে এবারও দেখা যাবে প্রতিযোগিতায় লড়তে। এমন হয়েছে যাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী হয়েছিল সকলে, দেখা গেছে তাঁর ভাগ্যে গোল্ডেন বুট আর জেতা হয়নি। গত বিশ্বকাপের কথাই ধরুন, সবাই ভেবেছিল মেসি জিতবে গোল্ডেন বুট। কিন্তু শেষ হাসি হেসে গেল কলম্বিয়ার জেমস রড্রিগেজ। যদিও ২০১০ সালের গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন জার্মানির টমাস মূলার।

এই বছর একাধিক প্রতিযোগিতায় নতুন নতুন ফুটবলার উঠে এসেছে। যারা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। বিশ্বকাপের আসরে নামার আগে তাঁরাও কিন্তু মেসি-নেইমার-রোনাল্ডোদের বার্তা দিয়েছেন “হাম কিসিসে কম নেহি”।তাই এবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটের দাবিদার আটজন। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এই আটজনের মধ্যেই লড়াই হতে পারে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দুর্লভ সম্মান লাভের জন্য।দেখে নেওয়া যাক কারা এই আট ফুটবলার-

৮) এডিনসন ক্যাভানি (উরুগুয়ে)

চলতি মরশুমে খুব ভালো ফর্মে আছেন উরুগুয়ের এই ফুটবলার। ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজি-র হয়ে এ  মরশুমে ৪০টি গোল করছেন।বার্সেলোনার লুই সুয়ারেজের সঙ্গী ক্যাভানি জাতীয় দলের সব সময়ের সম্পদ। লা সেলেস্টাতে তাঁর ৪২টি গোল আছে। যদিও ক্যাভানি বিশ্বকাপে একমাত্র খেলোয়াড় নয় যিনি সর্বোচ্চ গোলের আশা করেন। কারণ, সেখানে আরও অনেক ভালো দল আছে।

এবার কি তবে একটু অন্য রকম আশা করা যেতে পারে? এই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ এ-তে তাদের সঙ্গে আছে রাশিয়া, সৌদি আরব ও মিশর। এরা কেউই সেরকম ভারী দল নয়। এদের রেকর্ডও অতো মজবুত নয়। তাই, ক্যাভানির মতো খেলোয়াড়ের গ্রুপ পর্যায়ের খেলায় গোল করার মজা নেওয়ার মতো সুযোগ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। যা তাকে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে রাখবে।

৭) হ্যারি কেন (ইংল্যান্ড)

একমাত্র কারণ হ্যারি কেন তালিকায় অনেক নীচের দিকে আছেন। যদিও এ মরশুমে তাঁর ৪৩টি গোল আছে। তবে তিনি তাঁর খেলা খেললেও দল হিসেবে ইংল্যান্ড কিন্তু তেমন একটা আহামরি নয়। তাছাড়া এর আগের বিশ্বকাপ গুলির দিকে তাকালে বোঝা যাবে যে প্রতিযোগিতায় শুরুটা ভালো করেও তারা নক-আউট পর্যায়ে এসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে অনেকের আশা, এবার সেই বাধা কাটতে চলেছে।

ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডের দিকে লক্ষ্য রাখলে সেখানে সৃজনশীলতার একটি সাধারণ অভাব বোধ করা যেতে পারে। তবে অধিনায়ক হিসাবে এবার কেনের কাঁধে গোটা দায়িত্ব।যেখানে জেমস ভার্ডি ও রহিম স্টার্লিংরা তাঁকে কতটা সাহায্য করেন তাঁর উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। গ্রুপ পর্যায়ে একটি লক্ষ্য – দলকে গ্রুপে এক নম্বর করা। যা পরিস্থিতি তাতে দল জিততেও পারে আবার হারতে পারে।যেখানে দল ৬-০ ব্যবধানে জয়ী হতে পারে আবার 0-0 ড্র করতে পারে।

৬) ইসকো (স্পেন)

ইসকো রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়। সেখানে তাঁকে পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসেবে দেখা যায়।কিন্তু জাতীয় দলের ক্ষেত্রে সেটা কিন্তু একেবারে আলাদা কাহিনি।

মার্চ মাসে এক প্রস্তুতি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৬-১ গোলে চূর্ণ করে স্পেন। যে ম্যাচে আর্জেন্টাইন ডিফেন্সকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন স্প্যানিশ ফুটবলার ইসকো। স্প্যানিশ ফুটবলের নিজস্ব স্টাইল ‘তিকিতাকা’ ঘরানায় বল নিয়ে আর্জেন্টাইন রক্ষনভাগকে ফালাফালা করে দিয়ে হাটট্রিক করেন ইসকো।সেই খেলা তিনি যদি বিশ্বকাপেও খেলেন তাহলে কিন্তু গোল্ডেন বুটের দাবিদারের তালিকায় তাঁর নামও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

৫) অ্যান্টনি গ্রিজম্যান (ফ্রান্স)

অ্যান্টনি গ্রিজম্যান ফ্রান্স দলের এক নির্ভরযোগ্য ফুটবলার। এবারের বিশ্বকাপে শক্তিশালী দলের তালিকায় অবশ্যই থাকবে ফ্রান্স। যেখানে গ্রিজম্যানের মতো খেলোয়াড় আছে সেখানে ফ্রান্স তো চাইবে আরও একবার বিশ্বকাপের ট্রফিতে হাত রাখতে। এ মরশুমে গ্রিজম্যান ২৯টি গোল করেছেন। বিশেষ করে ফ্রান্সের জার্সি গায়ে দিয়ে বল নিয়ে ছুটলেই সমর্থকরা নিশ্চিত হয়ে যান।কারণ, তখন জ্বলে ওঠেন গ্রিজম্যান। আর সমর্থকরাও ভেবে নেন দল এবার গোল পাবেই।

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে তাঁর ভবিষ্যত নিয়ে তিনি এখন চিন্তা করতে চান না। এখন তাঁর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হল বিশ্বকাপ।সেখানেই তিনি ফোকাস দিতে চান। দলের দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হলেন এমবিঅ্যাপে। যার সঙ্গে বোঝাপড়ায় ফ্রান্সের আক্রমন ভাগ আরও ধারালো হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মিডফিল্ডে, তিনি পাচ্ছেন কান্তে এবং পোগবাকে। ফলে এ থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে ফ্রান্স এবার কিন্তু ধারে ও ভারে কোনও অংশেই কম যাবে না। ফরাসিরা এবার তাই আশায় থাকতেই পারেন। যেখানে গ্রিজম্যান আছেন একেবারে সেরা ফর্মে।

গ্রিজম্যান কি করতে পারেন তা তিনি দেখিয়েছেন ইউরো কাপে। সারা টুর্নামেন্টে দাপিয়ে খেলে শেষে ফাইনালে গিয়ে বিশ্রিভাবে হেরে যান। তবে প্রতিযোগিতায় গ্রিজম্যান কিন্তু ৬টি গোল করেছিলেন।

৪) লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)

গোল্ডেন বুটের দাবিদারের তালিকায় মেসি অত্যন্ত শক্তিশালী এক নাম। যদিও তিনি নিজের মুখে জানিয়েছেন এবার তারা ফেবারিট নয়। আসলে চাপ নিয়ে খেলাটা আর্জেন্টিনার ধাতে নেই। চাপের মুখে তারা বরাবরই চুপসে থাকে। এই ইতিহাস তাদের আছে। এক্ষেত্রে তারা ব্রাজিল কিংবা জার্মানির মতো নয়।

তবে এটাও ঠিক যে এবার স্যাম্পোলির অধীনে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার জন্য একেবারে সক্ষম বলা যায়। শেষ পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতার কঠিন বাধা টপকে যেতে পারবেন কিনা সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আরও একটা বিষয়, মেসি নিজের লক্ষ্যে এবার সফল হবেন কিনা সেটা তাঁর উপরই নির্ভর করছে।

কারণ, তাঁর দলে এমন সব খেলোয়াড় আছে যারা বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের দক্ষতা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন। যার মধ্যে আছেন অ্যাগুয়েরা ও দিবালা। ইউরোপিয়ান ফুটবলের এই দুই সুপারস্টারকে পাশে পাবেন মেসি। যা তাঁকে তাঁর সেরা খেলাটা খেলতে সাহায্য করবে।

গত কয়েক বছরে মেসি স্ট্রাইকারের জায়গা থেকে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের মতো জায়গাতেও খেলে আরও অনেক কিছু করেছেন। যা প্রতিপক্ষ দলকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

চলতি মরশুমে বার্সেলোনার হয়ে ৪৪টি গোল করেছেন। তিনি আছেন ‘হোয়াইট হট ফর্মে’। তবে তাঁর গোল্ডেন বুট পাওয়াটা অনেকখানি নির্ভর করছে সতীর্থদের খেলার মানের উপর।

৩) ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (পর্তুগাল)

এই মরশুমে ৪৩টি গোলের লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে রোনাল্ডোকে বিচার করাটা মূর্খামি হবে। রোনাল্ডো এমন মাপের খেলোয়াড় যিনি পেনল্টি বক্সের ভিতর কিংবা তার আশপাশে যে কোনও মুহূর্তে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন।

অনেকে বলতে পারে ক্লাব ফুটবলে রোনাল্ডো যে ধরনের সতীর্থদের পান সেটা দেশের জার্সিতে হয় না। এটা ঠিক, কিন্তু এটাও তো ঘটনা যে দেশের জার্সি গায়ে দিয়েই কিন্তু রোনাল্ডো ২০১৬ ইউরো জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন। কাজেই বিশ্বকাপেও যে তাঁর দল পর্তুগাল তেমন কিছু করবে না কে বলতে পারে।

মেসি ছাড়াও, রোনাল্ডো মিডফিল্ডের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করেন না এবং এটা হয়তো তার সবচেয়ে বড় শক্তি হতে পারে। পর্তুগালের কিছু মৌলিক মিডফিল্ডার আছে যারা নিয়মিত পাস প্রদান করতে পারে্ন, যারা হলেন অ্যাদ্রিয়ান সিলভা,বার্নার্ডো সিলভা এবং উইলিয়াম কার্ভালহো – এবং অ্যাদ্রিয়ান সিলভা তাদের পাশে অন্য স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবেন।

বিশ্বকাপ জিতলে অবশ্যই রোনাল্ডোকে ব্যালন ডি’অর দেওয়া হবে এবং তার লক্ষ্য পূরণে আরো বেশি অনুপ্রেরণার প্রয়োজন হবে? এখন সেদিকেই তাকিয়ে রোনাল্ডো ভক্তরা।

২) নেইমার (ব্রাজিল)

দুর্দান্ত কাম-ব্যাক হয়েছে নেইমার জুনিয়ারের। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ক্রোশিয়াকে খেলার শুরুতেই গোল দিয়ে যেভাবে দলকে এগিয়ে দিয়েছেন তিনি তা দেখে সকলেই তাঁর তারিফ করতে শুরু করেছেন। ফুটবল বিশ্বকে একটা বার্তা তিনি দিয়ে রাখলেন যে “আমি কিন্তু পুরোপুরি তৈরি হয়েই বিশ্বকাপের আসরে নামছি।” ফরাসি চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি গোল করেছেন ২৭টি। আসলে চোটের জন্য সেভাবে খেলতে পারেননি তিনি।

ইশকোর মতো, নেইমারও কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অনেক ভালো খেলেছেন।কয়েক মাস বিশ্রামে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে যেভাবে তরতাজা হয়ে তিনি মাঠে নামছেন তাতে কিন্তু তাঁর কাছে আরও অনেক বেশি গোলের প্রত্যশা থাকছে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে।

গ্যাব্রিয়েল জেসাস, উইলিয়ান এবং কুটিনহোর সঙ্গে যৌথ আক্রমণে নেইমার কিন্তু আরও বেশি ধারালো হয়ে উঠবে। তাকে সাহায্য করার জন্য দলের সব বিখ্যাত খেলোয়াড়রা মুখিয়ে আছে। সেদিক থেকে দেখলে নেইমারের জন্য এই বিশ্বকাপ ও ব্যালন ডি’অর-এর মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

নেইমার যদি গোল্ডেন বুট জিতে নিতে পারেন এবং ব্রাজিলকে ট্রফি জিততে সাহায্য করেন তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় আশ্চর্যজনকভাবে প্রবেশ করতে পারে্ন এবং মেসি এবং রোনাল্ডোর ছায়া থেকে মুক্ত হতে পা্রবেন, যেমনটা তিনি সবসময় চেয়েছেন।

১) টমাস মূলার (জার্মানি)

এবারের বিশ্বকাপে সেরা গোল স্কোরার হিসেবে বিশেষজ্ঞদের প্রথম পছন্দ জার্মানির টমাস মূলার। তাঁকে নিয়ে আশার আলো দেখছেন অনেকেই। যদিও এবার তাদের দলকে সম্ভাব্য বিজয়ী দল হিসেবে দেখা হলেও প্রস্তুতি ম্যাচগুলিতে সেভাবে ছাপ ফেলতে পারছে না জার্মানি। ইতিমধ্যে তারা অস্ট্রিয়ার কাছে দুই গোলে পরাজিত হয়েছে।

তবে জার্মানির একটা বড় গুন হল তারা প্রয়োজনের সময় নিজেদের আসল খেলাটা বের করে আনে।চাপের মুখে তারা ভালো খেলে ম্যাচ বের করে নিয়ে যায়। আর সেই জায়গায় টমাস মূলার যে বড় ভূমিকা নেবেন তা নিয়ে দলের সকলেই একমত।  জাতীয় দলের কাছে মূলারের অপরিহার্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না।

চলতি মরশুমে ১৬টি গোল নিজে করেছেন এবং অন্য ১৬টি গোলে সহায়তা করেছেন। বাঁদিকে মার্কো রেউস এবং লিপজিগের টিমো ওয়ার্নারকে নিয়ে মূলারের আক্রমণ হবে অনেক ধারালো। দল এখন সেদিকেই তাকিয়ে। এই ত্রিমূর্তি যদি নিজেদের সেরা ফর্মে থাকে তবে সেদিন প্রতিপক্ষের দুর্দিন ঘনিয়ে আসবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা।

Published on: জুন ৪, ২০১৮ @ ১৯:২৮

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

80 + = 85