থাই এয়ারলাইন্স কি কলকাতায় তাদের দীর্ঘ ৬০ বছরের পরিষেবা বন্ধ করতে চলেছে, উদ্বেগ প্রকাশ করলেন টাফি’র অনিল পাঞ্জাবি

Main কোভিড-১৯ দেশ বিদেশ বিমান ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

সরকার যদি এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উড়ানে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় তাহলে ১৫ ডিসেম্বর থেকে কলকাতায় থাই স্মাইল তাদের উড়ান পরিষেবা চালু করে দেবে।

 Published on: নভে ১১, ২০২১ @ ২৩:৪১
Reporter: Aniruddha  Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১১ নভেম্বর:   দেশের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর কলকাতা অর্থাৎ দমদম বিমানবন্দর ক্রমেই কি পিছিয়ে পড়তে চলেছে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে? এই প্রশ্ন এবার উঠতে শুরু করেছে। অসাধারণ এই বিমানবন্দর সবদিক থেকে এগিয়ে থাকলেও আজ এই বিমানবন্দর থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তের বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে করুণ চেহারা ধরা পড়েছে। কোভিড পরিস্থিতির পর বিশ্বখ্যাত থাই এয়ারলাইন্স যারা দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে কলকাতায় পরিষেবা দিয়ে আসছিল এবার তারা কি বিদায় নিতে চলেছে? এই প্রশ্ন তুলে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি। তাঁর কাছে যেখবর এসেছে তা সত্যিই খারাপ।

থাই এয়ারলাইন্স তাদের বহু স্টাফকে তুলে নিয়েছে

টাফি’র চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন- “এখনও সরকারিভাবে কোনও ঘোষণা না করলেও থাই এয়ারলাইন্স ইতিমধ্যে তাদের সমস্ত স্টাফকে উঠিয়ে নিয়েছে, তাদের বদলি করে দিয়েছে। এরই মধ্যে থাই স্মাইল ঘোষণা করে দিয়েছে যে এখানকার সরকার যদি এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উড়ানে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় তাহলে তারা ১৫ ডিসেম্বর থেকে পরিষেবা চালু করে দেবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। কেননা, যে সমস্ত ইউরোপিয়ান ফ্লাইট আসবে বলে ঠিক করছিল এক্ষেত্রে তাদের কাছেও একটা খারাপ বার্তা পৌঁছবে, তারাও আর এখানে আর আসবে না।”

কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল

টাফি’র অনিল পাঞ্জাবি এসপিটি-কে একান্ত সাক্ষাতকারে বলেন- “কোভিড পরিস্থিতির পর থেকেই সারা বিশ্বজুড়ে এয়ারলাইন ব্যবসা বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। আর তারই জের টেনে থাই এয়ারলাইন্স তাদের পরিষেবা বন্ধ করে দিতে চলেছে বলেন একটা খবর শোনা যাচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতিতে বহু ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে, সেইসময় যত টিকিট বিক্রি করতে হয়েছে তা বাতিল করতে হয়েছে। লোকজনদের তা ফেরত দিতে হয়েছে।লক্ষ লক্ষ কর্মী আছে সারা বিশ্বজুড়ে, অনেক ক্ষতি হয়েছে। একটা সময় তো খুবই খারাপ জায়গায় চলে গেছিল, যদিও থাই সরকার সাহায্য করেছে। আস্তে আস্তে এখন তারা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।”

কলকাতা থেকে কেন তারা পরিষেবা তুলে নিতে চাইছে

“দেশে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই-এর সঙ্গে তুলনা করলে কলকাতা থাই এয়ারলাইন্সের ব্যবসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশে পিছিয়ে আছে। সেক্ষেত্রে তারা মানচিত্রে দেখতে পাচ্ছে যে কলকাতায় উড়ান দৈনিক আছে, ভালোই যাচ্ছে কিন্তু সেই তুলনায় লাভ নেই অর্থাৎ মুম্বই, দিল্লির মতো লাভ নেই। আমি একটা জিনিস বেশ পরিষাকার বুঝতে পারছি দেখতে পারছি কিভাবে হিসাব করে তারা এই পরিষেবা এখান থেকে বন্ধ করতে চাইছে। তারা বিষয়টাকে হয়তো এভাবে দেখছে যে যদি আমি ১০০ প্যাসেঞ্জার নিয়ে যাই তাহলে আমার খরচ ৬০ হাজার টাকা আছে। যদি আমি থাই স্মাইল শুরু করি সেক্ষেত্রে আমার খরচ চার হাজার টাকা হয়। প্যাসেঞ্জার ততটাই পাবে। সেক্ষেত্রে কম প্যাসেঞ্জার পেলে লোকসানো কম হবে। তারা পুরো হিসাব-নিকাশ  করে দেখেছে এই মুহূর্তে কল্কাতায় পরিষেবা চালু রাখার জন্য পরিস্থিতি অনুকূল নয়। বিশেষ করে থাই এয়ারলাইন্স পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে। যেখানে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই যতটা না সুযোগ আছে।” বলেন টাফি’র চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি।

থাই এয়ারলাইন্সের বিকল্প তবে কি থাই স্মাইল হতে চলেছে

“সেক্ষেত্রে তাদের থাই এয়ারলাইন্সের বিকল্প এয়ারলাইন আছে থাই স্মাইল। ওকে বলবে যে আপনার স্লট এখানে থাকবে আপনি ফ্লাইট অপারেট করুন। যা এখনও কথা হয়েছে তাতে একটা জিনিস পরিষাকার হয়ে গেছে যে থাই এয়ারলাইন্স তাদের পরিষেবা তুলে নিতে চলেছে কলকাতা থেকে। ৬০ বছরের যে যোগাযোগ ছিল তা এবার মুছে যেতে বসেছে। ৬০ বছর ধরে থাই এয়ারলাইন্স এখানে চলত। তারা পরিষেবা দিত। খুব ভাল চলছিল। অনেক সেক্টর ছিল। জাপান, ইউএসএ খুব ভালো কানেকশন ছিল। সিঙ্গাপুর, হংকং। এই মুহূর্তে সরকার যে সার্ভে করেছে যে হংকং ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে যে তাদের ফ্লাইট আরও ছ’মাস চলবে না। সিঙ্গাপুর কবে চালু করবে জানে না। ওরা এসব লক্ষ্য করেছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে আগে আমি বিক্রি করতে পারব না, সেক্ষেত্রে বড় ফ্লাইট আমি এখানে রেখে কি করব? সেক্ষেত্রে যদি করতেই হয়ে আমি ছোট ফ্লাইট চালাবো। এরকম ইন্ডিগো, স্পাইস জেট আসবে। এভাবভেই চলবে।” হতাশার সুরে বলেন অনিল পাঞ্জাবি।

জয়েন্ট পিটিশন দিতে চলেছে ট্রাভেল ও ট্যুরিজম সেক্টরগুলি

টাফি’র চেয়ারম্যান অনিল পাঞাবি বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তিনি মনে করেন অবিল্মবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। এজন্য প্র্যোজনে যা করারা তা করতে ট্রাভেল ও ট্রেড সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন- আমি মনে করি যদি মুম্বই, দিল্লি থাকতে পারে সেক্ষেত্রে আমাদের তো সেই সুযোগ আছে, যদি রাজ্য সরকার এক্ষেত্রে একটু উদ্যোগী হয় তাহলে খুব ভালো হয়। কারণ, আমার এখানে কলকাতায় একটাও ইউরোপিয়ান ফ্লাইট নেই এবার যদি এটাও চলে যায় তাহলে তো মাদের মুখ পুড়বে। আমাদের এই বিমানবন্দরে এত বড় পরিকাঠামো আছে, খুব ভালো কাজ করছে সেক্ষেত্রে সরকারকে একটু উদ্যোগী হয়ে থাই কনস্যুলেটকে বোঝাতে হবে। যে আপনার যাতে ক্ষতি না হয় সেদিক খেয়াল রেখে আপনারা এখান থেকে এই ফ্লাইট বন্ধ করবেন না। এক্ষেত্রে আমাদের এখানকার রাজ্য সরকার, থাইল্যান্ড সরকার, থাই এয়ারলাইন্স সকলের কাছে আবেদন করতে হবে। আমরা খুব শীঘ্রই একটা জয়েন্ট পিটিশন দিতে চলেছে। থাই কন্স্যুলেটকে লিখছি, রাজ্য সরকারকে লিখছি।”

Published on: নভে ১১, ২০২১ @ ২৩:৪১


শেয়ার করুন