২০১৭-এ বেরিয়ে এল মোদীর “ডিজিটাল ইন্ডিয়া”র করুণ দশা, পোস্ট অফিসে দুর্ভোগের শিকার হওয়া মানুষের আর্ত্তি-প্রধানমন্ত্রী দেখে যান, আমাদের কি হাল

রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বেবী সরকার ও বাপ্পা মণ্ডল

Published on: ডিসে ২৯, ২০১৭ @ ২১:২৮

এসপিটি নিউজ, দুর্গাপুর ও মেদিনীপুর, ২৯ ডিসেম্বরঃ  ঢাল নেই-তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দার। না আছে পর্যাপ্ত কর্মী আর না আছে সঠিক ব্যবস্থা। কোথাও থাকে না ইন্টারনেটের লিঙ্ক, আবার কোথাও খারাপ হয়ে পড়ে আছে পাসবুক আপডেট যন্ত্র। গ্রাহকরা পোস্ট অফিসে গিয়ে হয়রানই নয় দিনের পর দিন নাকাল হয়ে বাড়ি ফিরছেন। দুর্গাপুরের মেইনগেটের তিন নম্বর পোস্ট অফিসের মতোই একই হাল হয়ে আছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বালিচক সাব পোস্ট অফিসের। ২০১৭-র এটাই কি তবে মোদীর “ডিজিটাল ইন্ডিয়া”? প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষই।তাঁরা বলছেন-প্রধানমন্ত্রী দেখে যান আমাদের কি হাল।

“ডিজিটাল ইন্ডিয়া”র নামে চলতি বছরে যেভাবে দেশ জুড়ে প্রচার হয়েছে সেদিকে তাকিয়ে মনে হতেই পারে দেশ বোধ হয় এবার অনেকটাই এগিয়ে গেল। কিন্তু আসলে কি তাই, সেটা দেশের পোস্ট অফিসগুলির দিকে তাকালেই চাক্ষুষ হবে আসল সত্যিটা কি। সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর প্রতিনিধিরা সেই “ডিজিটাল ইন্ডিয়া”র আসল স্বরূপটাই খুঁজে বার করে আনার চেষ্টা করেছে। এখানে কোনও গল্পকথা নয় একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তার হাল কতটা করুণ। সাধারণ মানুষ কিভাবে দিনের পর দিন দুর্ভোগের শিকার হয়ে চলেছেন। আসুন ঘুরে দেখে নিই সেই পোস্ট অফিসগুলির বর্তমান চেহারা।

দুর্গাপুরের মেইনগেটের ৩ নং পোস্ট অফিস।দীর্ঘদিন ধরে এখানে খারাপ হয়ে পড়ে আছে পাসবুক আপডেট যন্ত্র।এর ফলে সবচেয়ে বেশি হয়রান হচ্ছেন সিনিয়ার সিটিজেনরা। দীর্ঘদিন ধরে তাদের এমআইএস স্কিমে রাখা টাকার মাসিক সুদ আনতে গিয়ে দিনের পর দিন তাদের খালি হাতেই ফিরে যেতে হচ্ছে। “ডিজিটাল ইন্ডিয়া” গড়বার স্লোগান তুললেও এখন পোস্ট অফিসের গ্রাহক পরিষেবা যে কতটা খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে তা না দেখলে বোঝার উপায় নেই। এই পোস্ট অফিসে কমপক্ষে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক।একসময় এই পোস্ট অফিসে সবরকম সুবিধা পাওয়ার কারণে গ্রাহকরা এখানেই ছুটে আসতেন আর আজ সেই পোস্টঅফিসের বেহালদশা দেখে অতিষ্ট গ্রাহকদের “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি” অবস্থা-তাঁরা চাইছেন ভালোয় ভালোয় এখান থেকে টাকা তুলে অন্যত্র রাখতে।

গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে এই পোস্ট অফিসের বহু কর্মী কার্নিভাল এ ব্যাস্ত হয়ে পড়ার কারণেও এই পোস্ট অফিসে আর্থিক লেনদেন বন্ধ বলে অভিযোগ করেন পরাশর চ্যাটার্জী নামক এক গ্রাহক।তাঁর অভিযোগ, “এই পোস্ট অফিসে আর কিছু হয় না।আজ পাঁচদিন আমি টাকা পাওয়ার জন্য সমানে ঘুরছি।কিন্তু ফাঁকা পোস্ট অফিস।পোস্টমাস্টার নেই।”এই পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় তিনিও আসেন না দীর্ঘদিন।একজন অস্থায়ী পোস্টমাস্টারকেও শুক্রবার বেলা ১১ টা অবধি দেখা যায়নি।মোট ৮-৯ জন স্টাফ এই পোস্টঅফিসের।কিন্তু শুক্রবার বেলা ১১ টা অবধি দেখা মিলল মাত্র ৩ জনের।আর আর্থিক লেনদেন এর কাজ তো বন্ধ।শুধুই চিঠিপত্র আসা যাওয়ার কাজ করছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।অথচ দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বহু কর্মী ছাড়াও আশপাশের বহু এলাকার মানুষ এই পোস্টঅফিসে নিজেদের অনেক টাকা সঞ্চিত রেখেছেন।কি করবেন গ্রাহকরা? “ডিজিটাল ইন্ডিয়া” কি বলবে?

এবার যাওয়া যাক পশ্চিম মেদিনীপুরের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান বালিচক স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বালিচক সাব পোষ্ট অফিসে। এর উপরও আশপাশের বহু মানুষ নির্ভরশীল। এখানেও আছে প্রায় ২২ হাজার সেভিংস এ্যাকাউন্ট। অথচ দীর্ঘদিন ধরে পোষ্ট অফিসে প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ছে গ্রাহকদের ক্ষোভ।  “ডিজিটাল ইন্ডিয়া”র স্লোগান দিয়ে যেখানে মানুষকে দ্রুত পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, প্রচার করা হচ্ছে সেখানে কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে একেবারে উলটো। যে কোনো সামান্য কাজের জন্য কম করে প্রায় এক ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। তার উপর সারাদিনই লিঙ্ক না থাকায় মানুষ দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বালিচক সাব পোষ্ট অফিসের পোষ্ট মাষ্টার পার্থ গোস্বামীর কথায়, “আমরা বিএসএনএল অফিসে বারবার লিঙ্কের এই সমস্যাটি জানালে তাঁরা বলেন এটি নাকি আমাদের অফিসেরই সমস্যা। কিন্তু আমাদের এখানে কোনও ফল্ট আমরা দেখতে পাইনি।” বুঝে দেখুন, শুধুমাত্র লিঙ্ক না থাকায় মানুষকে কিভাবে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। সেখানে “ডিজিটাল ইন্ডিয়া” কিভাবে সম্ভব?

১০/১২ দিন হল চিঠিপত্র পাঠানোর জন্য সাধারণ রেজিস্ট্রি বন্ধ রয়েছে বার কোডের অভাবে। সকলকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে স্পিড পোষ্টে চিঠি পাঠাতে বাধ্য করা হচ্ছে। কয়েকদিন অন্তর এ সমস্যা লেগেই থাকে। বালিচকের পোষ্ট মাষ্টার পার্থ গোস্বামী বলেন, “আমরা ২০০০ হাজার বার কোডের আবেদন করলে ৫০০ পাই। ফলে এই সঙ্কট। আছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার এবং কর্মীর অভাবও।” এছাড়া প্রিন্টার খারাপ হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। ফলে মানুষ পাশ বইটাও প্রিন্ট করতে পারছে না। অপ্রতুল কম্পিউটার, তার উপর কম্পিউটারের ইউপিএসের ব্যাটারি ডাউন থাকায় বিদ্যুত চলে গেলেই কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।কি সাংঘাতিক অবস্থা একবার ভাব্লেই শিউরে উঠতে হয়। এরপরও কি আমাদের “ডিজিটাল ইন্ডিয়া”র খোয়াব দেখে যেতে হবে আমাদের?প্রশ্ন তুলছেন এইসব পোস্ট অফিসে এসে দীর্ঘদিন ধরে নাকাল হয়ে গিরে যাওয়া সেই সমস্ত গ্রাহকরা।

এভাবেই দিনের পর দিল সমস্যা লেগে থাকায় পরিশেবা না পেয়ে এলাকার মানুষ প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপরে এসব সমস্যাগুলির অবিলম্বে সমাধানের দাবি জানিয়ে আজ বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির এক প্রতিনিধিদল বালিচক পোষ্ট মাষ্টারের সঙ্গে স্বাক্ষাত করে ডেপুটেশন দেন এবং অবিলম্বে সমস্যাগুলির সমাধানে তাঁকে উদ্যোগ নিতে বলেন। কমিটির সহ সভাপতি ভারতরঞ্জন দে এবং যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী ও কালীশঙ্কর গাঙ্গুলী আজ পোষ্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে জানান, “অবিলম্বে এই সকল সমস্যাগুলির সমাধান না হলে এলাকার মানুষকে নিয়ে আমরা পোষ্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হব।”

Published on: ডিসে ২৯, ২০১৭ @ ২১:২৮


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + 3 =