স্বামী বিবেকানন্দের পাগড়ি, বাঙালির ‘রাজস্থান প্রেম নিয়ে অসাধারণ বললেন হিংলাজ দন রত্নু

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: নভে ১৬, ২০২২ @ ১২:২৮
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৬ নভেম্বর: পর্যটন-ভ্রমণ-বাঙালি এসবই যেন এখন সমার্থক হয়ে গেছে। দেশে হোক কিংবা বিদেশে আপনি যেখানেই বেড়াতে যান না কেন বাঙালির দেখা পাবেনই।তবে রাজস্থানের প্রতি বাঙালি যেন একটু বেশি নস্টালজিক।সুযোগ পেলেই তারা ছোটে রাজস্থান।রাজস্থানের প্রতি বাঙালির কেন এ ভালোবাসা, কেন তারা রাজস্থান একাধিকবার ভ্রমণ করেন-এসব নিয়ে অসাধারণ বলেছেন কলকাতায় রাজস্থান সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর এবং আরটিডিসি-র কলকাতার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হিংলাজ দন রত্নু। স্বামী বিবেকানন্দের পাগড়ি নিয়েও তিনি বলেছেন দারুন কথা।

বাঙালি একটি বেশি ভ্রমণরসিক। তারা ঘুরতে ভালোবাসে।রাজস্থান্তাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এর পিছনে বেশ কিছু দিক আছে। এক সময় রাজস্থানের রাজ পরিবারের সঙ্গে বাংলার বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আবার চলচ্চিত্রের মাধ্যমেও যোগ সূত্র স্থাপন হয়েছে রাজস্থানের।বাঙালির প্রাণপুরুষ সকলের আদর্শ স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গেও নিবিঢ় সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে রাজস্থানের। এসব কিছুই বাঙালিকে রাজস্থানের প্রতি ঘনিষ্ঠ হতে সহায়ক হয়েছে।

ঘর।রাজস্থানের মানুষের মনে গেঁথে আছেন স্বামীজী

হিংলাজ দন রত্নু সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে বাঙালির রাজস্থান প্রেম নিয়ে অসাধারণ কয়েকটি দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন- বাঙালিদের সঙ্গে রাজস্থানের সম্পর্ক আজকের নয়, একশো বছরেরও বেশি। একসময় রাজস্থানের রাজ পরিবারের সঙ্গে বাংলার বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় কারণ হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। আমরা মনে করি রাজস্থান হল স্বামীজীর দ্বিতীয় ঘর।রাজস্থানের মানুষের মনে গেঁথে আছেন স্বামীজী।বিশেষ করে আলওয়ারের মহারাজা মঙ্গল সিং এবং খেতড়ির মহারাজা অজিত সিং-এর সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতার কথা তো আজ সকলেই জানেন।

খেতড়ির মহারাজা অজিত সিং-এর সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের বন্ধুত্ব

খেতড়ির মহারাজা অজিত সিং-এর সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের বন্ধুত্বের কথা কোনওদিনই ভোলার নয়।হিংলাজ দন রত্নু যে কথা বলেছেন তা একেবারে সত্যি। রাজস্থান যে স্বামীজির দ্বিতীয় ঘর ছিল এবং খেতড়ির মহারাজার সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রমাণ মেলে তারঁরই লেখা এক চিঠিতে। 22 নভেম্বর, 1898 তারিখে মহারাজা অজিত সিংকে লেখা একটি চিঠিতে, বিবেকানন্দ লিখেছেন, “আপনার কাছে আমার মনের কথা খুলে বলতে আমার লজ্জা নেই এবং আমি আপনাকে এই জীবনে আমার একমাত্র বন্ধু হিসাবে বিবেচনা করি।”

আপনারা আরও জেনে আনন্দিত হবেন যে রাজস্থান থেকেই আমরা ঠাকুরের নরেনকে স্বামী বিবেকানন্দ হিসেবে পেয়েছিলাম। মাথায় পাগড়ি, গায়ে জাফরান পোশাক পরিহিত এক নবীন সন্ন্যাসীকে। আর সেটার জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত মহারাজা অজিত সিং বাহাদুরের কাছে।

বিবিদিশানন্দ থেকে বিবেকানন্দ-খেতড়ির মহারাজার পরামর্শ

নরেন্দ্রনাথ, শ্রীরামকৃষ্ণের একজন ভক্ত, ১৮৮ সালে একজন পরিভ্রমণকারী সন্ন্যাসী হিসাবে বেলুড় থেকে যাত্রা করেছিলেন। তাঁর ভ্রমণগুলি ছিল অন্যান্য সন্ন্যাসীদের মতো, “নির্দিষ্ট আবাস ছাড়া, বন্ধনহীন, স্বাধীন এবং তারা যেখানেই যান অপরিচিতদের মতো”। তাঁর একমাত্র সম্বল ছিল একটি “কমন্ডলু” (একটি জলের পাত্র), একটি লাঠি এবং তাঁর দুটি প্রিয় বই, ভগবদ্গীতা এবং খ্রিস্টের অনুকরণ। বিবিদিশানন্দ হিসাবেই তিনি খেত্রীর মহারাজা অজিত সিং বাহাদুরের সঙ্গে দেখা করেন। মহারা তার শিষ্য হয়ে ওঠেন। পরে তার পরামর্শেই নরেন্দ্র তার নাম পরিবর্তন করে স্বামী বিবেকানন্দ রাখতে এবং জাফরান পোশাক এবং পাগড়ি পরিধান করতে রাজি হন, যা তার ট্রেডমার্ক পোশাক হয়ে ওঠে।

স্বামীজীকে পাগড়ি বাঁধা দেখিয়েছিলেন মহারাজা অজিত সিং

আশ্চর্যজনকভাবে, নরেন্দ্র তার জীবদ্দশায় অজিত সিংয়ের সাথে মাত্র তিনবার সাক্ষাত করেছিলেন – ১৮৯১, ১৮৯৩ এবং ১৮৯৭ সালে – এবং এখনও তাঁর সাথে খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধন তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। বিচরণকারী সন্ন্যাসী হিসাবে তাঁর সময়কালে, মাউন্ট আবুতে তিনি প্রথম অজিত সিংয়ের সাথে  গ্রীষ্মকালীন ছুটি, খেত্রী হাউসে দেখা করেছিলেন। নরেন্দ্র এবং অজিত সিংয়ের সাথে তার দীর্ঘতম অবস্থান ছিল বলে জানা যায়, যিনি তাকে গরম আবহাওয়ায় থাকতে রাজি করেছিলেন। ১৮৯১ সালের ৪ জুন থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় কয়েক মাস নরেন্দ্রের অবস্থান ছিল, যার ফলে আজীবন বন্ধুত্ব ছিল। এই সফরের সময়ই অজিত সিং রাজস্থানের গরম বাতাস থেকে সুরক্ষা হিসাবে তাকে পাগড়ি পরার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং রাজস্থানী স্টাইলে পাগড়ি কীভাবে বাঁধতে হয় তা দেখিয়েছিলেন। নরেন্দ্র একজন দ্রুত শিক্ষানবিশ ছিলেন এবং পাগড়িটিকে তার স্থায়ী হেডগিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

বাঙালি পর্যটকদের সম্মান করি- হিংলাজ দন রত্নু

এমনই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে রাজস্থানের সঙ্গে বাংলার। স্বামীজীর সঙ্গে মহারাজা অজিত সিং-এর বন্ধুত্বের সম্পর্কের মতোই যা চিরস্থায়ী। হিংলাজ দন রত্নু বাঙালির রাজস্থান ভ্রমণ ও পর্যটন প্রীতি নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। তিনি বলেন-“বাঙালি পর্যটকদের যে বিশেষ দিক আছে, তা হল- এরা খুবই সচেতন। আমি মনে করি যে আসল পর্যটক যদি কাউকে বলতে হয়, তবে বাঙালি পর্যটককেই বলতে হবে। কারণ, কি জানেন! বাঙালি পর্যটকরা যারা রাজস্থান যায়, তারা ইতিহাস, কলা, সংস্কৃতি, মনুমেন্ট, সেখানকার রীতি-রেওয়াজ খুব সুন্দর ভাবে দেখে। শুধু তারা দেখে না, ছবিও তোলে। এমনকি তারা প্রতিদিন ডায়েরি লেখে। আজ আমের ফোর্ট দেখলাম, নাহারগড় দেখলাম, চিতোর দেখলাম। উদয়্পুর ফোর্ট, মেহেরনগড়, সোনার কেল্লা দেখলাম। এসব কিছু দেখে তারা ডায়েরিতে লিখে রাখে। লিখে রাখা এই সব বিষয় তারা তৃতীয় প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করে । এরা তিন প্রজন্মের পর্যটক তৈরি করে। আমি এইসব বাঙালি পর্যটকদের অত্যন্ত সম্মান করি। তারা রাজস্থান পর্যটনকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আমি এই কথা সবসময় বলে থাকি।বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বলেছি – বাংলা ও রাজস্থানের সম্পর্ক বহু দিনের।” রাজস্থান আজ সেইভাবে পর্যটনের বিকাশে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। আমি আশা করি, এর থেকে আরও ভালো হবে মনে করেন রাজস্থানের এই আধিকারিক।

দূরত্ব কোনওদিন ভালোবাসার পথ রোধ করতে পারে না-হিংলাজ

রাজস্থানে সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও গুজরাট থেকেও অনেকে বেরাতে যান। এই প্রসঙ্গ টেনে হিংলাজ বলেন-“রাজস্থানে ভ্রমণ করা পর্যটকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হল গুজরাট ও পশ্চিমবঙ্গ। এই দুই রাজ্যের মধ্যে এক থেকে দুই শতাংশ এদিক-ওদিক হতে পারে। আসলে গুজরাটের রাজস্থানের থেকে খুবই নিকটে অবস্থিত। এটি আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য। গাড়ি নিয়ে সড়ক পথেই মাত্র চার ঘণ্টার যাত্রায় গুজরাটি পর্যটকরা পৌঁছে যায় রাজস্থান। কিন্তু বাংলা থেকে যে সমস্ত পর্যটকরা যায় তারা অনেক দূরের পথ যাত্রা করে সেখানে পৌঁছয়। তারা দুই থেকে আড়াই হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে যায়।এখানেই পার্থক্য গড়ে দে বাঙালিরা। তারা বুঝিয়ে দিয়েছে যে দূরত্ব কোনওদিন ভালোবাসার পথ রোধ করতে পারে না। একেই বলে বোধ হয় প্রেম, যা বাঙালিরা দেখিয়েছে।”

Published on: নভে ১৬, ২০২২ @ ১২:২৮


শেয়ার করুন