সুবর্ণজয়ন্তী ভেটেরিনারি পুনর্মিলন উৎসবে এসে মৎস্যমন্ত্রী বললেন- গরু চাষ হচ্ছে আমাদের বাঁচবার উপায়

Main দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জানু ১০, ২০২৩ @ ২৩:৫১
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১০ জানুয়ারি: মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) ও ফ্যাকাল্টি অব ভেটেরিনারি এবং অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস(বিসিকেভি ও ডব্ল্যুবিইউএএফএস)-এর সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব শুভ সূচনা হল। উদ্বোধন করেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি প্রাণী পালন নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন- এই বিষয়ের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে। এই শিক্ষা যত চড়াবে তত বেশি গ্রামের মানুষ আনন্দ পাবে। একই সঙ্গে তিনি গো-পালনের উপরেও জোর দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন- গরু চাষ হচ্ছে আমাদের বাঁচবার উপায়। এদিনের অনুষ্ঠানে একটি স্মরণিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

‘এই কলেজ আমাদের সবাইকে শিখিয়েছে’

মন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী বলেন- এই কলেজ আমাদের সবাইকে শিখিয়েছে। চাষিবাসী মানুষকে শিখিয়েছে। গ্রামের মানুষদের শিখিয়েছে। প্রায় অশিক্ষিত লেখাপড়া জানে না এমন অনেক মানুষকে শিখিয়েছে কেমন করে গো-পালন করতে হয়। কেমন করে ছাগল পালন করতে হয়। কেমন করে ভেড়া চাষ করতে হয়। কেমন করে হাঁস-মুরগি চাষ করতে হয়। কেমন করে শুয়োর চাষ করতে হয়।

‘গ্রাম বাংলায় গরু চাষ খুবই কমে গেছে’

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা শোনান মন্ত্রী। তিনি বলেন- “আমার মধ্য যৌবনে আমি গেছিলাম হরিণঘাটায়। সেখানে কত স্বাস্থ্যবতী গরু দেখলাম। সেই গরুগুলি দেখে আমার আনন্দ হল। বাইরে থেকে গরু এনে প্রথ জেনারেশনের সঙ্গে মিশালে সেই গরু অনেক পরিমাণে দুধ দেবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেই গরু চাষ কমে গেছে। গ্রাম বাংলায় গরু চাষ খুবই কমে গেছে। আমি সব জায়গায় যাচ্ছি, বলছি যে গরু চাষ হচ্ছে আমাদের বাঁচবার উপায়। এছাড়া আমাদের অন্য কোনও পথ নেই।বাঁচতেই হবে আমাদের। গরুর দুধ থেকে সমস্ত কিছুই আমাদের উপকার দেয়। এর কোনও বিকল্প নেই। এছাড়া ছাগল চাষ আস্তে আস্তে একটু একটু বাড়তে শুরু করেছে। তার সঙ্গে শুয়োর, চাষ বাড়ছে। হাঁস-মুরগি চাষ বাড়ছে।”

‘এই সেক্টরটাকে আমি বলি, অবহেলিত সেক্টর’

এই সেক্টরটাকে আমি বলি- অবহেলিত সেক্টর। কিন্তু এটা গোটা ভারতবর্ষকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি পড়েছি – গুজারাটের একটি ছেলে সে ইংল্যান্ডে গিয়ে পিএইচডি করেছে গরু চাষের উপর। সে ফিরে এসে গরু চাষ আরম্ভ করল গ্রামে গ্রামে। আস্তে আস্তে এগোতে এগোতে সে এমন জায়গায় এগোলো আমাদের সবাইকে চমকে দিল। তার নাম কুরিয়ান, আপনারা সবাই জানেন। কুরিয়ান গোটা ভারতবর্ষে বিপ্লব আনল। আমরা তার আমূল কিনে খাই। তার বাটার, দুধ, দই কিনে খাই। কিন্তু আমরা নিজে উদ্যোগী হচ্ছি না। কারণ, আমরা এই সেক্টরটাকে একটু পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত সেক্টর মনে করি।যোগ করেন মন্ত্রী।

গরুকে ভালোবাসলে গরুও কথা শোনে

গরু পালন কিংবা গরু চাষ নিয়ে আরও একটি ঘটনার সাক্ষী থাকার কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী বিপ্লব রায়। নিজের এক বন্ধুর কথা বলতে গিয়ে বলেন- আমার এক বন্ধু আছে। এমএ পাশ করা ছেলে। তার গোয়ালে অনেক গরু আছে। সে গরুকে ভালোবাসে।আর গরুও দেখলাম মাথা নাড়ে। আমি তাকে গোয়ালঘরকে আরও সুন্দর করে তৈরি করার কথা বললাম। নিজের ঘর যেভাবে সাজিয়েছিস ঠিক সেভাবে গোয়ালঘর তৈরি কর। গরুকে ভালোবাসলে গরুও কথা শোনে। এটা আমি শুনেছিলাম সেই ’৬৬ সালে।

বলতে থাকেন- তখন আমি বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনে বিদ্যামন্দিরে পড়াশুনো করতাম। তখন বিদ্যামন্দিরের ভিতরে থাকতাম। যে মহারাজের সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠ ছিলাম তিনি দুপুরবেলায় খাওয়া-দাওয়ার পর নিজের ঘরে ফিরে যান। হাতে লাঠি, টুক টুক করে হাঁটছেন।আমিও তাঁর সঙ্গে হাঁটছি। দেখলাম রাস্তার পাশে তিন-চারটে গরু দাঁড়িয়ে আছে। উনি গরুর কাছে গেলেন। গরুটি গলা তুলে দিল। মহারাজ লাঠি দিয়ে গুরুটিকে খুচিয়ে খুচিয়ে গলাটায় আদর করে দিলেন। তারপর বলে ওঠেন- কালী তোমার হয়েছে, এবার তুমি যাও। কালী আস্তে আস্তে চলে গেল। পরে গরুগুলি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি তাদেরও আদর করলেন। কিছু সময় পর দেখলাম কালী এগিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, মহারাজ ওই জায়গা দিয়ে যাবেন বলে। উনি বললেন- তুমি খুব দুষ্টু হয়েছো না, বলে আবার তাকে আদর করে দিলেন। দেখে বুঝলাম, গরু সে আমাদের মতো লেখাপড়া শেখেনি। কিন্তু সে আদর, ভালোবাসা বোঝে। কোন মানুষ তাকে ভালোবাসে এটা সে বোঝে।”

এই শিক্ষাটা যত বেশি ছড়িয়ে দেবেন, তত গ্রামবাংলা হেসে উঠবে

সব শেষে মন্ত্রী বলেন- “আমারও ভালো লাগছে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এসে। আপনারা সবাই শুধু আনন্দে নয়, এই শিক্ষাটা যত বেশি ছড়িয়ে দেবেন, তত গ্রামবাংলা হেসে উঠবে।গ্রামবাংলা আনন্দে হইচই করে উঠবে।গ্রামবাংলা ছটফট করবে। সেই আনন্দটা আপনারা গ্রামবাংলায় ফিরিয়ে আনুন। এক সঙ্গে এক তাল মিলিয়ে। এই প্রার্থণা জানাই আপনাদের সবার কাছে।”

আজ তারই একটি মিলন মেলা-ডা. শিবাজি ভট্টাচার্য

রিইউনিয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ডা. শিবাজি ভট্টাচার্য বলেন – যে দীর্ঘ যাত্রা পথ পেরিয়ে সেই ১৮৯২ সাল থেকে আজ অবধি যে বিজ্ঞান সাধনা এই পবিত্র ভূমিতে সাধিত হয়ে আসছে আজ তারই একটি মিলন মেলা। আজ ৫০ তম এই সুবর্ণ জয়ন্তী পুনর্মিলন উৎসবে আমরা এই মাটির এই সুন্দর পরিবেশে যারা অংশীদার আমরা সবাই সেই ভেটারেনিয়ান। আমরা কোনও না কোনও সময় বহু বছর আগে থেকে আজ অবধি আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রূপ বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যানিমাল এন্ড ফিশারিজ সায়েন্স তার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে আমরা কিন্তু ভেটেরিনারি পাশ করেছি। এবং আমরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছি।সারা দেশে এবং আমাদের রাজ্যের কোনায় কোনায় আমরা আছি। আজ এই পুনর্মিলন উৎসবে সকলকে স্বাগত জানাই।”

আমাদের দায়িত্ব অনেকখানি বেড়ে গেছে-ডা. সুনীত কুমার মুখোপাধ্যায়

রিইউনিয়ন অর্গানাইজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সুনীত কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন- “আমাদের ভেটেরিয়ানদের উপর অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেছে।এখন গোটা বিশ্বেই পরিবেশকে ভীষণভাবে ব্যবহার করার সময় এসেছে এবং সেটা ব্যবহার করতে গিয়ে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেসব জিনিসগুলি আসছে যে ইকো সিস্টেম তা ভেঙে পড়ছে আর সেটা ভেঙে পড়ার জন্য বিভিন্ন রকমের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। সেজন্য আজ আমাদের ভেটারিয়ানদের বিরাট ভূমিকা বেড়ে গেছে, এসব জেনোটিক ডিজিজ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, প্রাণীবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের দায়িত্ব অনেকখানি বেড়ে গেছে।সেখানে আমাদের ভেটারিয়ানদের এই ধরনের যে কোনও সমাবেশ, আলোচনার বড় ভূমিকা নিতে পারে। সব কিছু নিয়েই এই নতুন বিশ্বকে একটা সুন্দর জীবন্মুক্ত থাকতে পারি সেজন্য আমাদের যে চেষ্টা তাকে আরও বেগবান করবে এবং আরও ফলপ্রসু হবে এই আলোচনা সভার মাধ্যমে।

এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক চঞ্চল গুহ, ভারত সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগের কমিশনার ডা. অভিজিৎ মিত্র, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাণী সম্পদ ও ভেটেরিনারি সার্ভিসেসের ডাইরেক্টর ডা. যোগরাজ তামাং, রিইউনিয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডালিম কুমার নন্দী।অনুষ্ঠানের পতাকা তোলেন সবচেয়ে প্রবীণ প্রাণী চিকিৎসক ডা. মানবেন্দ্র নারায়ণ পোদ্দার। ৯৪ বছর বয়সে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি সুবর্ণজয়ন্তী পুনর্মিলন উৎসবের জৌলুষ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।

Published on: জানু ১০, ২০২৩ @ ২৩:৫১


শেয়ার করুন