শ্রীলঙ্কায় চার্চ-হোটেল সহ আটটি স্থানে পরপর বিস্ফোরণে হত ২০৭, আহত ৫০০

বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: এপ্রি ২১, ২০১৯ @ ২২:৫৬

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ শ্রীলঙ্কায় রবিবার ইস্টার উপ্লক্ষ্যে তিনটি চার্চ এবং চারটি হোটেল সমেত মোট আটটি জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ হয়। এই ঘটনায় ৩৫জন বিদেশি সহ ২০৭জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৫০০জন। পুলিশের মুখপাত্র রুবেন গুণশেখরা এই ঘটনার কথা জানিয়েছেন। ছটি বিস্ফোরন একই সময় সকাল ৮টা৪৫মিনিটে ঘটেছে। বাকি দু’টি বিস্ফোরন দুপুর দুটো থেকে আড়াইটের মধ্যে কলম্বোয় ঘটে। ২০০৯ সালে তামিল বিদ্রোহী সংগঠন লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই) খতম হয়ে গেছিল। এরপর এটাই সবচেয়ে বড় হামলা।

প্রথম বিস্ফোরণ কলম্বোর কোচ্চিকড়েতে অবস্থিত সেন্ট অ্যান্টনী চার্চে হয়, এরপর তেগোম্বোর কটুওপিটিয়া অবস্থিত সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ এবং বট্রিটকলোয়ায় অবস্থিত চার্চে হয়।এছাড়া কলম্বোর ফাইভ স্টার হোটেল শাঙ্গরি লা, কিঙ্গসবেরী এবং সিনেমন গ্র্যান্ড-এও বিস্ফোরণ হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলম্বোর হোটেলে ঘটা বিস্ফোরণে প্রায় ৪৫জনের মৃত্যু হয়েছে। তেমনই তেগোম্বো চার্চের বিস্ফোরণে ৯০ জন এবং বট্রিটকলোয়ায় ২৭জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমকে গুনশেখরা জানান, “এখনই আমরা এটা বলতে পারব না সব বিস্ফোরনই আত্মঘাতী ছিল। যদিও তেগোম্বোর চার্চের বিস্ফোরণে আত্মঘাতী হামলার মতো মনে হয়েছে।” এর আগে এক আধিকারিক জানিয়েছেন এক আত্মঘাতী হামলাকারী সিনেমন হোটেলের রেস্টুরেন্ট উড়িয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেট মিটিং ডাকলেন

শ্রীলঙ্কা প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমসিঙ্ঘে ঘটনার খবর নিতে ক্যাবিনেট মিটিং ডাকলেন। শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংস্কার মন্ত্রী হর্ষ ডিসিলভা ট্যুইট করে বলেন-জরুরী মিটিং-এর জন্য আমি এবং প্রতিরক্ষমন্ত্রী কোচ্চিকড়ে রওনা দিচ্ছি। খুব শীঘ্রই সরকার এই পরিস্থিতির উপর বিস্তারিত জানাতে বক্তব্য পেশ করবে। অর্থ মন্ত্রী মঙ্গলা সমরবীরা ট্যুইট করে বলেন-“এটা মনে হয় যে এটা হত্যা, দুষ্টতা এবং বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য খুব পদ্ধতিগতভাবে সম্পন্ন করা হয়।” সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অস্থায়ীভাবে নিষ্ক্রীয় করে দেওয়ার পাশাপাশি দেশজুড়ে কার্ফু নামানো হয়েছে।

পুলিশ-ডাক্তারদের ছুটি বাতিল

বিস্ফোরণের পর পুলিশ অফিসারদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ছুটিতে থাকা ডক্তার-নার্সদের ডিউটিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।সোমবার ও মঙ্গলবার সরকারি স্কুল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৌদ্ধ সিংহল এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব

এ পর্যন্ত কোন সন্ত্রাসী সংগঠন হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে, এটি বিশ্বাস করা হয় যে গত কয়েক বছরে দেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)র শিকড় বিস্তার হয়েছে। গত বছর শ্রীলংকার বৌদ্ধ সিংহলী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ২018 সালের মার্চ মাসে সরকারকে জরুরি অবস্থা এনে দিতে হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী মোদি নিন্দা জানিয়েছেন

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মৈত্রিপালা সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমসিংহের সাথে কথা বলেছেন। ঘটনাটি টুইট করে নিন্দা জানিয়েছেন। মোদি বলেন, আমাদের এলাকায় বর্বরতার কোনও স্থান নেই। ভারত দৃঢ়ভাবে শ্রীলঙ্কার জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি মৃতের পরিবারের পাশাপাশি আহত এবং আহতদের প্রতি সমবেদনাও প্রকাশ করে।

কিছু দেশ জানাল সমবেদনা

  • মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্যুইট করে লেখেন- “চার্চ এবং হোটেলের উপর সন্ত্রাসী হামলার জন্য জানাই আমার সমবেদনা। আমরা যে কোনও উপায়ে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছি।”
  • রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই আক্রমণটিকে নিষ্ঠুর ও ত্রুটিপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শ্রীলংকান প্রতিপক্ষকে সাহায্য করার বিষয়ে পুতিন জানিয়েছেন।
  • ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা বলেন, “আমি ঘটনার শিকার হওয়া মানুষজনের প্রতি সমবেদনা জানাই। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একসাথে দাঁড়াতে হবে, যাতে কেউ ধর্মীয় কাজ করার সময় ভয় না পায়।”
  • ট্যুইট করে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, “আমি ইস্টার ডে শ্রীলংকায় সন্ত্রাসী হামলঙ্কে অব্যবহার্য বলে ঘোষণা করছি। শ্রীলঙ্কা ভাইদের আমার বিষাদ জানাই। দুঃখের সময় পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার পাশে আছে।”
  • মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ বলেন, “আমি শ্রীলংকায় হামলার খবরে মর্মাহত হয়েছি। দুঃখের এই মুহূর্তে আমরা শ্রীলংকার জনগণের সঙ্গে আছি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের সমর্থন করবো।”

একটি ফুটো আক্রমণে 120 নাবিক নিহত হয়

এর আগে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় একটি হামলা হয়েছিল। এই আক্রমণটি এলটিটিই দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল। এই হামলাকে ‘দিগমপাঠনা বোমা হামলা’ নামে পরিচিত। এলটিটিই একটি বোমা ভর্তি ট্রাক নিয়ে ১৫টি মিলিটারি বাসের উপর হামলা চালিয়েছিল। সেদিন ১২০ জন নাবিক মারা যায়।

10 বছর আগে এলটিটিই-এর শেষ হয়

লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই) 1976 সালে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। উত্তর ও পূর্ব শ্রীলংকার তামিল ইলম (তামিলদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র) তৈরির উদ্দেশ্য ছিল। 1983 থেকে ২009 সাল পর্যন্ত শ্রীলংকা গৃহযুদ্ধের দৃঢ়তায় ছিল। ২5 জানুয়ারি, ২009 এ, এলটিটিইয়ের চূড়ান্ত এলাকা মুল্যাইতিবু জয়ী হয়। ২009 সালের 16 মে, রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজপক্ষ 26 বছরের গৃহযুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং এলটিটিই-কে শেষ করেন।

Published on: এপ্রি ২১, ২০১৯ @ ২২:৫৬


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 48 = 56