শ্রদ্ধায়-স্মরণে

দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: আগ ১৩, ২০১৮ @ ১৭:৩০

এসপিটি নিউজ, ১৩ আগস্টঃ একটা মানুষ নিজের সিদ্ধান্তে কতটা অবিচল থাকতে পারে তা দেখিয়ে দিয়ে গেলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তৎকালীন ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সিপিএম যখন তাঁকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আস্থা ভোট দিতে নির্দেশ দেন তখন তিনি আপত্তি প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন-“স্পিকারের চেয়ারে বসে এ কাজ তাঁর পক্ষে করা সম্ভব নয়। তিনি দলের উর্ধ্বে।” এরপর দল তাঁকে বহিস্কার করে। ভুল স্বীকার করে দলে ফেরার সুযোগ থাকলেও তিনি তা করেননি। তিন শেষদিন পর্যন্ত বলে গিয়েছেন- তাঁর সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক ছিল।

তাই সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তে তাঁর পাশে ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এদিন যখন সিপিএম পার্টি তাঁর মরদেহে দলের পতাকা দিতে চান সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রেণু চট্টোপাধ্যায়। সিপিএম তাঁকে দল থেকে বের করে দিয়ে বুঝেছিল কী ভুল তারা করেছে। সেটা তারা কোনওদিন প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি। আজও যখন কান্তি গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে রবীন দেবকে এই প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁরা সকলেই কথার মারপ্যাঁচে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে সিপিএম নেতারা বা দল এমন ব্যবহার করলেও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু সারা দেশে সকল দলের নেতাদের কাছে আজও সমানভাবেই জনপ্রিয় থেকে গিয়েছেন।

১৯২৯ সালে আসামের তেজপুরে জন্ম। বাবা নির্মচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন হিন্দু মহাসভার নেতা। ১৯৬৮ সালে সিপিএম পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে জ্যোতি বসুই ছিলেন তাঁর সবচেয়ে বিশ্বাসভাজন মানুষ। ১৯৭১ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি বর্ধমান লোকসভা আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের জন্য সংসদে প্রবেশ করেন। ১৯৭১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১০ বার সাংসদ নির্বাচিত হলেও মাঝে শুধু একবার ১৯৮৪ সালে যাদবপুর লোকসভা আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হন। এরপর তিনি বোলপুর থেকে জয়ী হয়ে ১৯৮৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সাংসদ থাকেন। এরমধ্যে ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন সংসদের সেরা অধ্যক্ষ।

সংসদে অধ্যক্ষের আসনে থাকার সময় তাঁর একটি কথা সেসময় খুব গুরুত্ব পেয়েছিল। তিনি সাংসদদের প্রায়ই বলতেন- “মাথায় রাখুন, গোটা দেশ আপনাদের দেখছে।” নিজেকে বলতেন ছোট মানুষ।

আজ তাঁর মৃত্যুতে গোটা দেশের তাবড় তাবড় রাজনীতিবিদরা শোকাহত। এতটাই সম্মানীয় ব্যক্তি ছিলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্যুইট করেন-“প্রাক্তন সাংসদ ও অধ্যক্ষ শ্রী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ভারতীয় রাজনীতির একজন দিকপাল। আমাদের গণতন্ত্রকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। দরিদ্র এবং দুর্বলদের জন্যও ছিল তাঁর শক্তিশালী কন্ঠস্বর।” তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে লেখেন-“প্রাক্তন লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ(দা) চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু আমাদের জন্য বড় ক্ষতি। তাঁর পরিবার এবং কাছের মানুষদের প্রতি জানাই আমার গভীর সমবেদনা।”

রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী লেখেন-“অসাধারণ সাংসদ ছিলেন। দরিদ্রদের পাশে থাকতেন। সংসদের গণতন্ত্রকে আরও মজবুত করতে অধ্যক্ষ হিসেবে তাঁর অবদান ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ।” প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় লেখেন-“একজন বন্ধুকে হারালাম।” রাহুল গান্ধী লেখেন-“শুধু লোকসভার অধ্যক্ষই ছিলেন না তিনি ছিলেন একটা প্রতিষ্ঠান।”

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ লেখেন-“সংসদীয় রাজনীতিতে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। তাঁর দীর্ঘ সাংসদ জীবন লোকসভার ঐতিহ্য বাড়িয়ে তুলেছে।”  “সোমনাথদা (চ্যাটার্জী) আমার কাছে একজন বড় দাদা ছিলেন। আমাদের মতাদর্শ আলাদা ছিল কিন্তু এখনও, ‘৮৯ সালে আমি যখন প্রথম সংসদে প্রবেশ করি সেই সময় থেকে আমি দেখতে পাই যে তিনি কীভাবে প্রতিটি নিয়ম অনুসরণ করে বিষয় উত্থাপন করতেন। স্পিকার হিসাবে তাঁর মেয়াদ ছিল আমার জন্য একটি নির্দেশিকা।” বলেন লোকসভার অধ্যক্ষ সুমিত্রা মহাজন।

“তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট সংসদ সদস্য এবং মহান জ্ঞানের একজন মানুষ। একজন স্পিকার যিনি চেয়ারে বসে দীপ্তি যোগান। আমরা সেরকম একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে হারালাম। মানুষ তাকে স্মরণ করবে।” জানান প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি মহম্মদ হামিদ আনসারী।

“লোকসভার অধ্যক্ষ এবং তাঁর সংসদ সদস্য থাকার সময় বক্তৃতা হিসেবে তাঁর ভূমিকা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হবে, যারা রাজনীতিতে যোগ দিতে চায়। আজ, যখন সংসদে এই ধরনের অনুপ্রেরণার প্রয়োজন, তখন তার ক্ষতি অত্যন্ত হতাশাজনক হয়”, বলেন আরএস-এর ডেপুটি চেয়ারম্যান হরি্বংশ নারায়ণ সিং।

Published on: আগ ১৩, ২০১৮ @ ১৭:৩০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 47 = 54