কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে গিয়ে শক্তি ও পুণ্যলাভ করতে চান-তাহলে এই রীতিগুলি মেনে চলুন

এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায় (তারাপীঠ মন্দিরের অন্যতম সেবাইত)

Published on: সেপ্টে ৮, ২০১৮ @ ১১:১২

এসপিটি, ৮ সেপ্টেম্বরঃ  কৌশিকি অমাবস্যা  কেন বিখ্যাত। এদিন কেন এত মানুষের সমাগম হয়ে থাকে তা নিয়েই এই প্রতিবেদন। অনেকেই আসেন তারাপীঠে, কিন্তু তারা জানেন না এদিনের প্রকৃত মাহাত্ম্যের কথা। এদিন তারাপীঠে এসে পুজো দিয়ে কোথায় কোথায় দর্শন করতে হয়, কিভাবে লাভ করতে হয় পুণ্য, এমনকি জন্ম-মৃত্যুর হাত থেকে কিভাবে রক্ষা মিলতে পারে অর্থাৎ নির্বাণ লাভ হবে এসব কিছুই আলোকপাত করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এদিন বামাক্ষ্যাপাবাবা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন-তাই এই অমাবস্যার যোগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।আজ রাত ১টা ৫১ মিনিটে লাগছে অমাবস্যা।কাল রাত ১১টা ৪০মিনিটে ছেড়ে যাবে

জয় মা তারা বলে বামা নৃত্য করছে

কাশী থেকে ফিরে এসে বাবার মহাশ্মশানের সাধনা বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে। ক্রমে ক্রমে বামার বয়স তখন ৩২ বছর। বামা প্রত্যহ শ্বেতশিমুল বৃক্ষে বসেন। একদিন ব্রজবাসী ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে যখন তারাপীঠ থেকে অন্তর্হিত হন তার চার বছর পর ব্রজবাসী কৈলাসপতির ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী- এক ঘোর অমাবস্যার সন্ধ্যায় শ্বেতশিমুল বৃক্ষ যা ক্রমশ শুকিয়ে আসছিল সেই বৃক্ষের গোঁড়ায় বামার ভাস্বর জ্যোতিতে প্রজ্জ্বলিত হয়ে একসময় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। ধুম উদ্গীরণের সঙ্গে সঙ্গে আগুনের লেলিহান শিখা সমগ্র মহাশ্মশানকে জ্যোতিতে উদ্ভাসিত করে তুলল। শ্মশানের সাধুসমাজ তা প্রত্যক্ষ করল। সেই লেলিহান শিখা সমগ্র চণ্ডীপুর ছাড়িয়ে চারপাশের কবিচন্দ্রপুর, কামদেবপুর, নামোকান্দা, রাঘববাটি (কড়কড়িয়া) তারাপুর, জয়সিংহ পুর, সাহাপুর, কুলিডাঙা, সরলপুর, কাঁদার গ্রামবাসীরা পরদিন প্রত্যক্ষ করতে মহাশ্মশানে এল। এসে তাঁরা দেখলেন- বামা চিমটা হাতে জয় মা তারা ধ্বনি দিয়ে আনন্দে নৃত্য করছে। কারণ, ক্ষ্যাপাবাবা সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছে।

দেবী পার্বতীর দেহ হতেই দেবী কৌশিকীর আবির্ভাব

দীক্ষাগুরু ব্রজবাসী কৈলাসপতির ভবিষ্যৎবাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে। ক্ষ্যাপাবাবা এখন বাকসিদ্ধ পুরুষ। ক্ষ্যাপাবাবা যেদিন সিদ্ধ হলেন সেদিন ছিল ভাদ্রমাসের অমাবস্যা- যে অমাবস্যাকে কৌশিকী অমাবস্যা বলা হয়। দেবী দুর্গার অপর নাম কৌশিকী। চণ্ডী হতে জানা যায়- দেবী কৌশিকী তথা পার্বতী শুম্ভ-নিশুম্ভ অত্যাচারের হাত থেকে দেব-দেবীদের রক্ষা করতে এবং শুম্ভ-নিশুম্ভ দ্বারা স্বর্গ হতে বিতাড়িত দেব-দেবীদের স্বর্গে পুনর্বাসন দিতে দেবী কৌশিকীর রূপ ধারণ করেছিলেন। এ সম্পর্কে চণ্ডীতে একটি কাহিনি আছে।

স্বর্গ উদ্ধারে দেবমণ্ডলীর স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে দেবী নিজ দেহ কোষ থেকে এক উজ্জ্বল জ্যোতি বের করে পরমাসুন্দরী দেবী মূর্তিতে রূপান্তরিত হলেন এবং নিজ দেহ কোষ থেকে আবির্ভূত হলেন সেই দেবীর নাম হল কৌশিকী। যার গায়ের রঙ তপ্ত কাঞ্চনের মতো স্বর্ণাভ। দেবী পার্বতীর দেহ থেকে কৌশিকী দেবী উদ্ভূত হওয়ার পর পার্বতী দেবীর গায়ের রঙ হয়ে গেল কালো এবং তাই পার্বতী দেবী হিমালয় কালিকা নামে পুজিতা হতে থাকলেন।ওই দিন মা অত্যাচারী শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করে দে্ব-দেবীদের তাদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং অশুভ শক্তি পরাজয়ের মধ্যে শুভ শক্তির বিজয় ঘোষণা করেছিলেন। কৌশিকী অমাবস্যাতে বামাখ্যাপাবাবা সিদ্ধ হয়েছেন।

এই তিন স্থানে না গেলে তারাপীঠ দর্শন অসম্পূর্ণ

তিনি এখন বাকসিদ্ধ পুরুষ। তাঁর মুখের কথা বেদবাক্যের মতো সত্য হচ্ছে। বহু মানুষ তাঁর কাছে যেমন পার্থিব জিনিস পেতে আসছে তেমনি অপার্থিব বস্তুর জন্যও ধরনা দিচ্ছে। বিশেষ করে ভাদ্র মাসের অমাবস্যা তিথিতে ভক্তরা বেশি করে আসছে। এই অমবস্যায় বামাখ্যাপাবাবার সিদ্ধিলাভের কথা কেবলমাত্র ব্রজবাসী বাবা ভবিষ্যৎবাণী করে গিয়েছিলেন এবং তাঁর কথা মতো শ্বেতশিমুলবৃক্ষের তলে পঞ্চমুণ্ডির আসনে যেখানে মায়ের চরণচিহ্ন আছে সেই জায়গা হচ্ছে বামাক্ষ্যাপাবাবার সিদ্ধিলাভের জায়গা। এখানে কেবলমাত্র বামাক্ষ্যাপাবাবা কেন সাধক বশিষ্টদেব থেকে সাম্প্রতিককালের খ্যাতনামা সাধকরা সিদ্ধিলাভ করেছেন। তাই তারাপীঠে যে সমস্ত ভক্ত আসেন তাঁরা যেমন মন্দিরে তারামায়ের পূজা দেন তেমনি ভক্তিভাবে ১) শ্বেতশিমুল তলা, ২) পাদপদ্ম (মায়ের চরণ যেখানে বিরাজিত), ৩) পঞ্চমুণ্ডির আসন– এই তিনটি একই জায়গায় অবস্থান করছে, তারা এই জায়গাও দেখে থাকেন। মায়ের পূজা দেওয়ার পর সিদ্ধিলাভের জায়গা তথা মায়ের আদি অবস্থানের ক্ষেত্র না দেখলে তারাপীঠ দর্শন ও পুজো সম্পূর্ণ হয় না।তাই ভক্ত সাধারণ মায়ের মন্দির ও বামার সিদ্ধিলাভের জায়গা প্রত্যক্ষ করে থাকেন।

এই নিয়ম পালনেই সম্ভব অলৌকিক অপার্থিব শক্তিলাভ ও পুণ্যলাভ

বামার সিদ্ধিলাভের জায়গা হিসেবে এবং ভাদ্রমাসের কৌশিকী অমাবস্যা তিথি সিদ্ধিলাভের দিন হিসেবে ক্রমে ক্রমে পরিচিত হওয়ার পর বর্তমানে প্রায় কয়েক লক্ষ ভক্ত এদিন পুজো দিতে তারাপীঠে আসেন। মানুষের বিশ্বাস- সাধু-সন্ন্যাসী, তান্ত্রিক, সেবাইত, পূজারীদের মতো ওইদিন তারামায়ের পুজো, সিদ্ধক্ষেত্র দর্শন, শ্মশানে হোমযজ্ঞ প্রত্যক্ষ কিংবা সম্পাদন ও দ্বারকা নদীতে অবগাহন কিংবা জীবিতকুণ্ড জলস্পর্শের মধ্যে ভক্তগণ এক অলৌকিক অপার্থিব শক্তির অধিকারী হতে পারেন এবং এমনকি নির্বাণ তথা জন্ম-মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষাও পেতে পারেন। অবশ্য তারামাকে প্রত্যক্ষ করতে মা বলেছেন- “যদি কোনও ভক্ত কায়মনোবাক্যে তিন লক্ষ তারামা নাম জপ করে তাহলে সে আমার দেখা পাবে।” কিন্তু অধিকাংশ আমরা কায়মনোবাক্যে মা-কে ডাকার পরিবর্তে তারা মা মাতৃমন্ত্র গণনা করি তাই মাতৃদর্শনও আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি না। তাই অকৃত্রিম ভক্তি ও বামার মতো নিষ্ঠা ও বিশ্বাস নিয়ে কৌশিকী অমাবস্যা পর্যবেক্ষণ করলে মাত্র একদিনেই কুম্ভ মেলার ফল লাভ হয়।। সেই বিশ্বাসে ভক্তিবাদীরা এবং দেখার জন্য কৌতূহলী মানুষ ভিড় করেন। বর্তমানে যে ভিড় ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

ছবি-দেবানন্দ পাইন

Published on: সেপ্টে ৮, ২০১৮ @ ১১:১২

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

80 + = 88