লোকসভা ভোটে ৪১% মহিলা প্রার্থী দিয়ে সারা ভারতে এক নয়া ইতিহাস গড়লেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

দেশ রাজ্য লোকসভা ভোট 2019
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-অনিরুদ্ধ পাল

Published on: মার্চ ১৪, ২০১৯ @ ১৯:১৮

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৪ মার্চঃ যা এতদিনে কেউ করে দেখাতে পারেনি গত কয়েক বছর ধরে ঠিক সেটাই করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ২০০৯ সাল থেকে তিনি এই কাজ করে চলেছেন। মুখে অনেক দলই মহিলা সংরক্ষনের কথা বলে বেড়াচ্ছে ঠিকই কিন্তু কাজে করে দেখাচ্ছে শুধু কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ক্ষেত্রে তিনি অনায়াসেই দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিজেপি আর কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন। রাজ্যের মোট ৪২টি আসনের মধ্যে তিনি প্রার্থী তালিকায় স্থান দিয়েছেন ১৭জন মহিলাকে। যা হয়ে উঠেছে “দিদির প্রমীলা বাহিনী”।

মমতাই একমাত্র নেত্রী যিনি মহিলাদের প্রার্থী করে জিতিয়ে আনার “দাদাগিরি” দেখাতে পেরেছেন

১) ভাবুন ২০১৪ সালের কথা। দেশজুড়ে বইতে শুরু করেছে মোদি ঝড়। সব রাজনৈতিক দলই চুপসে যেতে শুরু করেছে। ১১৩ বছরের প্রাচীন দল কংগ্রেস পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারল না। কোথায় হারিয়ে গেল। আর সেই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে বীরদর্পে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছিলেন শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদি ঝড়কে রীতিমতো একার শক্তিতে রুখে দিয়েছিলেন তিনি।

২) আর সেই সঙ্গে জিতিয়ে এনেছিলেন দলের সব চেয়ে বেশি সংখ্যক প্রার্থীকে। যার মধ্যে মহিলা প্রার্থী ছিল উল্লেখযোগ্য। তাঁরা কারা ছিলেন? শুনলে অনেকেই এখন অবাক হয়ে যাবেন। যারা কোনওদিনই রাজনীতির ময়দানে সেভাবে দাপাদাপিই করেননি সেই সব মহিলারা। যার মধ্যে প্রথমেই চলে আসে বাঁকুড়া আসনে জেতা অভিনেত্রী মুনমুন সেনের নাম। এরপর বলতে হয় বালুরঘাটে জয়ী অর্পিতা ঘোষের নাম। এভাবে উঠে আসে জয়নগরে প্রতিমা মন্ডল, উলুবেড়িয়ায় সাজদা আহমেদ, হুগলিতে ডা. রত্না দে নাগ, আরাম্বাগে অপরূপা পোদ্দার, বর্ধমান দুর্গাপুরে মমতা সঙ্ঘমিতা, বঙ্গাঁআয় মমতা বালা ঠাকুর, বীরভূমে শতাব্দী রায়ের নাম।ছিল বারাসতের ডা. কাকলি ঘোষ দস্তিদারের নামও।

৩) এরা ওনেকেই কিন্তু জানতেন না যে তারা ভোটে জিতবেন। যদিও সেকথা তাঁরা এখন কেউ স্বীকার করতে চাইবেন না। কারণ তারা মনে করেন তাদের যখন দাঁড় করিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন জেতা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনও সংশয় ছিল না। কিন্তু বাস্তব বলছে সেটা কিন্তু অত সহজ ছিল না। যেখানে দেশের নানা প্রান্তে মোদি ঝড়ে যেভাবে বড় বড় রাঘব-বোয়ালরা ধরাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন ফলাফল প্রকাশের মুহূর্তে কিন্তু তাদেরও সেভাবেই টেনশন গ্রাস করেছিল। কিনতি নেত্রী নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্য্যা হওয়ায় দেখা গেল পরিস্থিতি একেবারে অন্যরকম হতে শুরু করেছে।

৪) এক একটা আসনের ফলাফল ঘোষণা হতেই সমর্থকদের মধ্যে হর্ষোল্লাস উঠতে দেখা যায়। তখন বোঝা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দূরদর্শী যেমন অনেক বেশি ঠিক তেমননই রাজনীতির ময়দানে দাঁড়িয়ে যে কোনও ধরনের শক্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা হোক কিংবা মোদি ঝড়ের ধাক্কা থেকে দলের প্রার্থীদের রক্ষা করা সবটাই তিনি অনায়াসে করতে পারেন। রাজনীতির রণাঙ্গনে দেখাতে পারেন “দাদাগিরি”ও। আর সেজন্যই ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ৫৪৩টি আসনের মধ্যে যে ৬১জন মহিলা সাংসদ সংসদে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল বাংলারই-১৪জন। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি আবার ছিল শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের-১১জন।

এবারও তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়েঁছেন- ১৭জন মহিলাই জিতবেন

১) গতবারের জয়ী সাংসদদের বসিয়ে দিয়ে সেখানে আবার নতুন মহিলা প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন মমতা। যার মধ্যে রয়েছে বসিরহাট। যেখান থেকে জিতেছিলেন ইদ্রিশ আলী। এবার সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে অভিন্ত্রী নুসরত জাহানকে। ঠিক তেমনই যাদবপুর থেকে জয়ী সাংসদ সুগত বসুকে ছুটি দিয়ে সেখানেও আর এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে দাঁড় করানো হয়েছে। ঝাড়গ্রামেও সাংসদ ঊমা সোরেনকে বসিয়ে দিয়ে সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে বীরবাহ সোরেন নামে এক নতুন আদিবাসী মহিলাকে। যিনি আবার স্কুল শিক্ষিকাও।

২) এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি আসনে মমতা মহিলা দের প্রার্থী করে রীতিমতো সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আসনগুলি হল- কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, কলকাতা দক্ষিণ। এই আসনগুলিতে এবার তিনি দাড় করিয়েছেন যথাক্রমে বিধায়ক মহুয়া চক্রবর্তী, রূপালী বিশ্বাস ও মালা রায়কে। মহুয়া আর মালার ক্ষেত্রে রাজনীতির অভিজ্ঞতা থাকলেও সেক্ষেত্রে রূপালী বিশ্বের মতো একেবারে একজন অল্পবয়সী রাজনীতির পাঠ না থাকা একজন মহিলাকে যেভাবে লোকসভা ভোটের মতো জায়গায় দাঁড় করালেন তা সত্যি কিন্তু তারিফ করার মতো বিষয়। আর সেটা যে মমতার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করছে সেটা বলাই বাহুল্য।

তথ্য কি বলছে

  • ১) ২০০৯ সালে সংসদে ৫৪৩জন সাংসদের মধ্যে মাত্র ৫৯ জন ছিলেন মহিলা। ২০১৪ সালে সেটা বেড়ে হয় মাত্র ৬১জন। বলা হয় যে সেটাই নাকি ভারতীয় সংসদের ইতিহাসে মহিলাদের উপস্থিতির হার সবচেয়ে বেশি ছিল-১১.২৩ শতাংশ। সবচেয়ে কম ছিল ১৯৭৭ সালে। সেবার মাত্র ১৯জন মহিলা সাংসদের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছিল।
  • ২) ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সব চেয়ে বেশি মহিলা সাংসদ উপস্থিত হয়েছিলেন। যার মধ্যে ১১জনই ছিলেন তৃণমূলের। যেখানে ২০০৯ সালে সংখ্যাটা ছিল ৯জন। সেখানে তামিলনাড়ু থেকে মাত্র একজন মহিলা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা এবং মেঘালয় থেকে একজনও মহিলা সাংসদ ছিলেন না।
  • ৩) ২০০৯ সালে মোট ৮,০৭০জন প্রতিদ্বন্দ্বির মধ্যে ৫৫৬জন ছিলেন মহিলা। ২০১৪ সালে সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বির সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৮,১৩৬জন। তার মধ্যে ৬৩৬জন ছিলেন মহিলা।
  • ৪) PRS Legislative Research যা দিল্লি ভিত্তিক একটি গবেষণামূলক সংস্থা-তারা বলছে যে মহিলা প্রার্থীদের স্ট্রাইক রেট কিন্তু পুরুষদের চাইতে ভাল। তাদের সমীক্ষায় ধরা পড়েছে সেটি। যেখানে দেখা গেছে নির্বাচনে মহিলা প্রার্থী জেতার স্ট্রাইক রেট ১০ শতাংশ হলে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৬ শতাংশ। সেখানে আরও দেখা গেছে পুরুষদের চেয়ে মহিলা প্রার্থীদের শিক্ষার হার বেশি। ৩২ শতাংশ মহিলা সাংসদ যারা পোস্ট গ্যাজুয়েট কিংবা ডাক্তার সেখানে ৩০ শতাংশ পুরুষ সাংসদ যাদের অতি সাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা।
  • ৫) মহিলা সাংসদদের বয়সের গড়ও কিন্তু দেখা গেছে পুরুষদের চাইতে অনেক কম। যেখানে মহিলা সাংসদদের গড় বয়স ৪৭ সেখানে পুরুষ সাংসদদের গড় বয়স ৫৪। দকজনও মহিলা সাংসদ নেই যাদের বয়স ৭০-এর উপর। অথচ সাত শতাংশ পুরুষ সাংসদ আছেন যাদের বয়স ৭০-এর উপর। PRS Legislative Research-এর সমীক্ষায় এই তথ্যও উঠে এসেছে।

Published on: মার্চ ১৪, ২০১৯ @ ১৯:১৮


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 6 = 3