লাল জামা খুলে গেরুয়া জামা পরে সিপিএমের হার্মাদরা এখন বিজেপিতে নাম লেখাচ্ছে-নেতাইয়ের শহীদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে কর্মীদের সতর্ক করলেন শুভেন্দু অধিকারী

রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা- বাপ্পা মণ্ডল        ছবি-রামপ্রসাদ সাউ

Published on: জানু ৭, ২০১৮ @ ২৩:২৭

এসপিটি নিউজ, নেতাই, ৭ জানুয়ারিঃ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষের মুখে মুখে ফেরে কথাটা-নন্দীগ্রাম, ছোট আঙারিয়া, নেতাই গণহত্যা কাণ্ডে নিহতদের পাশে আছে তৃণমূল কংগ্রেস। আছে্ন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর আছেন তাদের শুভেন্দু অধিকারী। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক শুভেন্দুকে পাশে পেয়ে এইসব এলাকার মানুষ শুধু স্বস্তিতেই নেই তারা আছেন নিশ্চিন্তে। আজ যেমন নেতাই গণহত্যার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুভেন্দু নেতাইবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন আমি নেতাই গ্রামে আসব।” একইসঙ্গে নেতাই গণহত্যার নিহত পরিবারগুলিকে তাঁর ভরসা,”আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন আহ্নাদের মোটা ভাতকাপড়ের অভাব আমি হতে দেব না।” শুভেন্দুর মুখে যখন এই কথা বেরোচ্ছে তখন মঞ্চের নিচে দাঁড়িয়ে এক প্রবীণকে বলতে শোনা গেল,”এই আমাদের আসল নেতা-বাপ কা বেটা, সিপাহী কা ঘোড়া। একদিন যে সিপিএম আমাদের রক্ষা না করে হত্যা করে মারতে চেয়েছিল আজ তৃণমূল কংগ্রেস সাধ্যমতো আমাদের রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।” শুভেন্দু সভায় দাঁড়িয়ে নেতাইবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, লাল জামা খুলে গেরুয়া জামা পরে সিপিএমের হার্মাদরা এখন বিজেপিতে নাম লেখাচ্ছেন। নন্দীগ্রামের খুনি লক্ষণ শেঠ এখন বিজেপি নেতা। নেতাই কেণ্ডের অভিযুক্তরাও যে কোনও সময় বিজেপিতে নাম লেখাতে পারেন।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড় থানার নেতাই গ্রামে সিপিএম নেতা রথীন দন্ডপাটের বাড়ি থেকে সিপিএমের সশস্ত্র হার্মাদবাহিনীর গুলিতে ৯জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। গুলিতে আহত হয়েছিল ২৮ জন।এই গণহত্যার অভিযোগ উঠেছিল সিপিএম নেতা অনুজ পান্ডে, ডালিম পাণ্ডে, চন্ডীকরণ, ফুল্লরা মণ্ডলের নেতৃত্বে সিপিএমের হার্মাদবাহিনীর বিরুদ্ধে।নেতাই গ্রামের সরস্বতী ঘোড়াই, ফুলকুমারী মাইতি, মিতালি আদক, আরতি মণ্ডল, শ্যামাপদ ঘোড়াই, ধীরেন সেন, সৌরভ ঘোড়াই, অরূপ পাত্র, ধ্রুব প্রসাদ গোস্বামী সিপিএমের হার্মাদ বাহিনীর গুলিতে মারা যায়। নেতাই গ্রামের সিপিএম নেতা দ্বারিকাপ্রসাদ পন্ডাও কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণপ্রসাদ রায় ঐ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করে সিপিএম ও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। তৎকালীন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী নেতাই গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।শুভেন্দুবাবুর সহযোগিতায় নিহত ৯জনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নেতাই গ্রামে তৈরি হয়েছে শহীদ বেদী। এদিন শহীদ বেদীর সামনে নেতাই গ্রামে শহীদ স্মৃতি তর্পন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।যেখানে অন্যান্যদের মধ্যে হাজির ছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, অনগ্রসর শ্রেণীকল্যানমন্ত্রী চূড়ামণি মাহাত, পশ্চিম মেদিনীপুরের সভাধিপতি উত্তরা হাজরা সহ অনেকে।

এদিন শুভেন্দুবাবু নেতাই গণহত্যায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ১০ হাজার টাকা ও আহত ২৮ জঙ্কে পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেন। সেইসঙ্গে গ্রামের দরিদ্র ২০০টি পরিবারকে শীত বস্ত্র হিসেবে কম্বল তুলে দেন।শুভেন্দুবাবু বলেন, নেতাই কাণ্ডে অভিযুক্ত অনুজ পাণ্ডে, ডালিম পাণ্ডে, ছোট আঙারিয়া কাণ্ডে তপন ঘোষ, সুকুর আলি, বেনাচাপড়া কাণ্ডে সুশান্ত ঘোষ, তরুণ রায়, ইন্তাজ আলিরা যে কোনও সময় গেরুয়া জামা পরে বিজেপিতে নাম লেখাতে পারেন। আপ্নারা সজাগ থাকবেন। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। অনুজ, ডালিমের মতো হার্মাদরা নেতাই কাণ্ডে বর্তমানে জেলে রয়েছে, ওরা যাতে জেল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সিপিএমের হার্মাদরা যেভাবে নেতাই গ্রামে গণহত্যা সংগঠিত করেছিল তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। একই সঙ্গে পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জঙ্গমহলের পরিবহন ব্যবস্থাকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার কথা বলেন।তিনি বলেন, এইচআরবিসি-পকে দিয়ে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহনের ডিপোর কাজ চলছে। সেখানে পর্যটক ও যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।জঙ্গমহলের প্রতিটি এলাকা থেকে সরকারি বাস পরিষেবা চালু হবে। তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কূড়মালি বোর্ড গঠন করে কুড়মী সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নয়নের কাজ করছেন। অলচিকি হফে সাঁওতালি ভাষায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করে পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে। শুভেন্দুবাবুর আহ্বান, আপনারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকুন। আপনাদের উন্নয়ন নিয়ে ভাবতে হবে না। তিনি আপনাদের দোরগোরায় উন্নয়ন পৌঁছে দেবেন।

সবশেষে শুভেন্দু অধিকারীর ভরসা-আপনাদের পাশে আমি যেমন আগে ছিলাম, আছি ও আগামী দিনেও থাকব। আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন নেয়াই গ্রামে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যাব।

Published on: জানু ৭, ২০১৮ @ ২৩:২৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + = 29