মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলেটজিকে কলকাতায় রাজস্থান সূচনা কেন্দ্রে নিয়ে আসার কথা দিলেন ‘সম্মানিত’ ধীরাজ শ্রীবাস্তব

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

হিংলাজ দন রত্নুর সঙ্কল্প এবং প্রহ্লাদ রাই গোয়েঙ্কাজির সাপোর্ট আর আপনা্রা সকলে পিছনে থাকায় কলকাতায় রাজস্থান সূচনা কেন্দ্র আবার তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে- ধীরাজ শ্রীবাস্তব

Published on: ডিসে ২৫, ২০২২ @ ২৩:৫৫
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৫ ডিসেম্বর: কলকাতায় রাজস্থান সূচনা কেন্দ্রে আজ রবিবার রাজস্থান ফাউন্ডেশনের কমিশনার ধীরাজ শ্রীবাস্তবকে সম্বর্ধিত করা হল। সম্বর্ধিত হয়ে সূচনা কেন্দ্রের সভাগৃহে দাঁড়িয়ে উপস্থিত মারোয়ারি সমাজের বিশিষ্টজনদের জানিয়ে দিলেন যে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটজিকে তিনি নিয়ে আসবেন। পাশাপাশি ধীরাজ শ্রীবাস্তব কলকাতায় রাজস্থান সূচনা কেন্দ্রের নতুন ভাবে সেজে ওঠার প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন- রাজস্থান সূচনা কেন্দ্র ও জনসংযোগ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিংলাজ দন রত্নুর সঙ্কল্প আর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অগ্রবন্ধু এবং গঙ্গা মিশনের অধ্যক্ষ প্রহ্লাদ রাই গোয়েঙ্কা-এর সমর্থন এটিকে আবার তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।

ধীরাজ শ্রীবাস্তবজি এমন একজন মানুষ যাকে সম্মানিত করতে পারে আমরা সকলেই খুবই আনন্দিত- হিংলাজ দন রত্নু

রাজস্থান ফাউন্ডেশনের কমিশনার এবং নয়াদিল্লিতে রাজস্থান সরকারের আবাসিক কমিশনার ধীরাজ শ্রীবাস্তব, প্রবাসী রাজস্থানীদের (মাড়োয়ারি) স্বার্থে উল্লেখযোগ্য কাজ করার জন্য কলকাতায় সম্মানিত হলেন। কলকাতায় গণেশ চন্দ্র এভিনিউতে অবস্থিত কমার্স হাউসে অগ্রবন্ধু এবং রাজস্থান তথ্য কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে, এই অনুষ্ঠানটি ২৫ ডিসেম্বর দুপুর ৩টায় অনুষ্ঠিত হয়। শাল, মেমেন্টো, ফোটো, মালা দিয়ে তাঁকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। রাজস্থান সূচনা কেন্দ্র ও জনসংযোগ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিংলাজ দন রত্নু বলেন- “রাজস্থান ফাউন্ডেশন এবং রাজস্থান সরকার সব সময় রাজস্থানের মানুষের জন্য কাজ করে চলেছে। তাদের সফল কাজের জন্যে আজ রাজস্থানের উন্নতি হয়েছে। আজ রাজস্থান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ধীরাজ শ্রীবাস্তবজি এমন একজন মানুষ যাকে সম্মানিত করতে পারে আমরা সকলেই খুবই আনন্দিত।”

আপনাদের মধ্যে এসে সম্মানিত হয়ে আমি আজ আনন্দিত-ধীরাজ শ্রীবাস্তব

এদিন কলকাতায় মারোয়ারি সমাজের থেকে সম্বর্ধিত হয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হন রাজস্থান ফাউন্ডেশনের কমিশনার এবং নয়াদিল্লিতে রাজস্থান সরকারের আবাসিক কমিশনার ধীরাজ শ্রীবাস্তব। কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে তিনি বলেন- সবচেয়ে প্রথমে এই উল্টো গঙ্গা বহানোর জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। আমি কোনো অতিথি নই যে আমাকে সম্মান প্রদান করা হচ্ছে। এমন সব মানুষ আমাকে সম্বর্ধনা দিচ্ছেন যেখানে আমার নিজেরই লজ্জা হচ্ছে। এ তো সত্যিই উল্টো গঙ্গা বইছে। রত্নুজি এতটা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এবং এখানে প্রহ্লাদজি যে কাজ করেছেন সেই সম্পর্কে আমার নিজের মত প্রকাশ করার ঊর্দ্ধে , আপনাদের মধ্যে এসে সম্মানিত হয়ে এতটাই আনন্দিত হচ্ছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। গোবর্ধন গাড়োদিয়া সাহেব,  আমাদের অখিল ভারতীয় মাহেশ্বরী সমাজের অধ্যক্ষ বুলাকি দাস মিমানি সাহেব, প্রহ্লাদ রাই সাহেব, এখানে উপস্থিত সকলকে রাজস্থান সরকারের সূচনা কেন্দ্রে আমি হৃদয় থেকে স্বাগত জানাচ্ছি।”

‘আপনাদের জন্যই তো আমি ব্যস্ত থাকি’

“বাস্তবে এই কর্মসূচি আপনাদেরই কর্মসুচি। যে ভাবনা থেকে এবং যে ধারা থেকে এর স্বরূপ প্রদান করা হয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি যদি আজ এখানে না আসতাম তা হলে নিজেকে কোনওদিন ক্ষমা করতে পারতাম না। আপনারা বলছেন যে আমি আমার ব্যস্ততম সময়ের মধ্যে থেকে সময় বের করে এখানে এসেছি। দেখুন, এসব হল বই-এর কথা। ব্যস্ততা কাদের জন্য? কেন আমি ব্যস্ত থাকি? আপনাদের জন্যই তো আমি ব্যস্ত থাকি।আপনাদের জন্যই যদি সময় বের না করি, তাহলে কাদের জন্য সময় বের করব, বলুন তো! আমি তো বই-এ পড়েছি যে এই যে পাগড়ি পরিয়েছেন যিনি এটা এক বড় দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবে আজ যে এই ভার অনুভব করছি যে সত্যিই আমার উপর অনেক দায়িত্ব বর্তেছে।” যোগ করেন ধীরাজ শ্রীবাস্তব।

তিনি বলে যান- “আজ যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যের সঙ্গে সম্বর্ধিত করেছেন সম্মানিত করেছেন তা আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের। আপনাদের উপর আমার বিশ্বাস আছে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের ভিশন নিয়ে আজ যে দায়িত্ব আমার উপর দেওয়া হয়েছে তা আমি শেষ বিন্দু পর্যন্ত পৌঁছবোই এ আমার আপনাদের কাছে আশ্বাস।”

“সারা বিশ্ব ও দেশে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। কথা হয়। রাজস্থানের যে অস্তিত্ব, মারোয়ারিরা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন – যে কোনও ক্ষেত্র, তা সে সাহিত্য, কলা, সংস্কৃতি, ভাষা একের পর এক আমাদের মারোয়ারি সমাজ দিয়েছে।”

‘আজকের রাজস্থানকে অশোক গেহলটজি দেশের অগ্রণী রাজ্যের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে’

ধীরাজ শ্রীবাস্তব বর্তমান রাজস্থানের কথা তুলে ধরে বলেন- “এই কলকাতা, যেখানে রাজস্থান থেকে মানুষ এসেছেন , এখানে মারোয়ারিরা তাদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছেন আর তার বদলে তাদের যা পাওয়া উচিত ছিল, তাদের নিজের রাজ্যে, নিজের ঘরে সেই সম্মান দেওয়ার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেদিন এক পরিস্থিতি ছিল যখন আপনারা আপনাদের ঘর ছেড়ে দূরদেশে চলে গিয়েছিলেন। তা সে শিক্ষাই হোক কিংবা ব্যবসা। যে কোনও কারণই হোক না কেন। আজ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন রাজস্থান রেগিস্তান নয়। আজকের রাজস্থানকে অশোক গেহলটজি দেশের অগ্রণী রাজ্যের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এমন সব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা এমন ভাবে করা হয়েছে যে সেখানে লোক লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছে।”

“কলকাতাকে যে মিনি রাজস্থান বলছেন এটা এমন নয়, আপনি যেখানে তাকাবেন সেখানেই এক মিনি রাজস্থান দেখতে পাবেন। আজ কলকাতা শহরে এমন এক বিল্ডিং সম্পত্তি আছে তা ভাবা যায় না। আজ এটা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না এটা দেখে, যা আবার তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। এটা রত্নুজির সঙ্কল্প এবং প্রহ্লাদজির সমর্থন আর আপনাদের সকলের ব্যাক-আপ ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। এখানে যে রাজস্থানের টিম তৈরি হয়েছে তারা নিঃসন্দেহে খুব ভালো কাজ করছে।আপনারা সকলেই যুক্ত আছেন।” যোগ করেন শ্রীবাস্তব।

রাজস্থানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া

“এই যে এক একটা সংস্থা আছে জাতি, ধর্ম, রঙ ভিত্তি করে তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই। রাজস্থানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। রাজস্থানের ভালো করা। তাই আমরা সকলে এক সঙ্গে মিলে যখন কাজ করি তখন শক্তি অনেক বেড়ে যায়। আর তখন যে হাত এক জোট হয় তখন শুধু রাজস্থান নয় রাজস্থানীদেরও উন্নতি হয়।”

৩০ শতাংশ বিনিয়োগকারী তো আমাদের রাজস্থানী

আপনাদের আমি বলব- আপনারা রাজস্থান ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট অবশ্যই খুলবেন। সেখানে দেখবেন যে যে নন রেসিডেন্সিয়াল রাজস্থানি বা এনআরআর পলিসি তাতে একটা বিষয় আমরা জোরপূর্ব্বক রেখেছি। কারণ ৩০ শতাংশ বিনিয়োগকারী তো আমাদের রাজস্থানী। তারা আমাদের ঘরে আসছে তাদের তো সম্মান তো দিতেই হবে। রাজস্থান একমাত্র রাজ্য যে তারা তাদের প্রবাসী ভাইদের জন্য একটা পলিসি উন্মোচন করেছেন। ধীরাজ শ্রীবাস্তবজিকে আসতে হবে না। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটজি আপনাদের কাজ করে দিয়েছেন। আমরা আপনাদের কাজ করে দিয়েছি। আপনারা যা বলবেন আমাদের সেই কথা শুনতে হবে।

আপনারাই তো আমাদের স্থায়ী রাজদূত-শ্রীবাস্তব

প্রবাসী রাজস্থানীদের সম্মান দিয়ে শ্রীবাস্তব বলেন- ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস পাশ করে তারা বিদেশে যায় রাজদূত হিসেবে। আপনারাই তো আমাদের স্থায়ী রাজদূত। আজ আপনারা যেখানে সেখানে তো আমাদের রাজ্যের নাম উচ্চারণ হয়। আমাদের কলা-সাহিত্য-সংস্কৃতি আপনাদের সকলের ঘরে পৌঁছে গেছে। আজ যে ভাষা তা আপনাদের জন্য এত প্রচার পেয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই প্রথা চলে আসছে।

রাজস্থান ফাউন্ডেশন পিছনে দাঁড়িয়ে থাকবে

“কলকাতায় যে লোক সংস্কৃতির অনুষ্ঠান হয়, আমি সেখানে একবার এসেছি। আমি প্রথম সেই অনুষ্ঠান দেখেছি। এটা আমরা পলিসিতে রেখেছি যে এমন যত অনুষ্ঠান হবে তাতে আমাদের সহযোগিতা থাকবে। দেশ হোক কিংবা বিদেশ আপনারা যেখানেই এধরনের অনুষ্ঠান করুন না কেন তাতে রাজস্থানী থাকলে সেখানে রাজস্থান ফাউন্ডেশন পিছনে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই বিশ্বাস ও সঙ্কল্পকে মান্যতা দেওয়ার জন্য আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আপনারা আজ যে নাগরিক সম্মান প্রদান করেছেন তাতে আমি খুব খুশি হয়েছে। মন খুব প্রস্নন হয়েছে। যখন কোনও মানুষ কাজ করে আর তার সম্মান করা হয় তখন খুব ভালো লাগে।” যোগ করেন ধীরাজ শ্রীবাস্তব।

‘রাজস্থানই আমার ঘর হয়ে গেছে’

নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন- “আপনাদের আর একটা কথা বলি- আমি এলাহাবাদের বাসিন্দা। রাজস্থান আমার কর্মক্ষেত্র। আমি রাজস্থান ক্যাডারের আইএএস। এখানেই আমি কাজ করি। ৩০ বছর ধরে যতদিন আমি রাজস্থানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি বাড়ি যাইনি। রাজস্থানই আমার ঘর হয়ে গেছে।”

‘আগামী বছর আন্তর্জাতিক মারোয়ারি সম্মেলন জয়পুরে করব’

একেবারে শেষে ধীরাজ শ্রীবাস্তব বলেন- “রাজস্থান ফাউন্ডেশন একেবারে মূর্ছিত অবস্থায় ছিল। সেখানে গেহলট সাহেবের স্বপ্ন ছিল তা তিনি সাকার করার জন্য এগিয়েছেন, দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন রাজস্থান করেছে। আগামী বছর আন্তর্জাতিক মারোয়ারি সম্মেলন জয়পুরে করব। এটা আমি অশোক গেহলটের তরফে আপনাদের জানালাম। একই সঙ্গে বলছি- যেখানে দাঁড়িয়ে আমি আজ সম্মানিত হলাম যা আপনারা বানিয়েছেন এই রাজস্থান সূচনা কেন্দ্র সেখানে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটজিকে নিয়ে আসব এবং সেদিন আপনাদের পক্ষ থেকে তাকে পাগড়ি পরাবো।

এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অগ্রবন্ধুর সচিব সন্দীপ গর্গ। গোটা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাজস্থান সরকারের সূচনা ও জনসংযোগ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিংলাজ দন রত্নু।

Published on: ডিসে ২৫, ২০২২ @ ২৩:৫৫


শেয়ার করুন