মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথেই সাঁওতালি ভাষায় প্রাণীপালনের বই প্রকাশ করে এক নয়া ইতিহাস গড়ল এই বিশ্ববিদ্যালয়

দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-ডা. সৌমিত্র পন্ডিত

Published on: জানু ৪, ২০১৯ @ ১০:২৯

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৪ ডিসেম্বরঃ সারা দেশে এমন আর একটা রাজ্য আছে কিনা জানা নেই যেখানে সাঁওতালি, অলচিকি থেকে শুরু করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষায় ব্যবহার্য বই প্রকাশ করা হয়। বিশেষ করে সরকারি কিংবা সরকার অনুমোদিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা।পশ্চিমবঙ্গ একমাত্র রাজ্য যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় অলচিকি ভাষায় পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে। এমনকী তাদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশিত বলা যেতে তাঁর দেখানো পথে হেঁটেই এবার পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় সাঁওতালি ভাষায় প্রাণীপালনের বই প্রকাশ করে এক নয়া ইতিহাস গড়ল।যা সত্যিই অভূতপূর্ব বলে মনে করছে শিক্ষামহল।

“যে গতি থামার নয়- তাকে তুমি রোখার চেষ্টা কোরো না”- হ্যাঁ, সত্যি আবার তা প্রমাণ করল পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়।উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাসের হাত ধরে গবেষণা, সম্প্রসারণ ও খামার অধিকরণ, অধিকর্তা অধ্যাপক অরুণাশীষ গোস্বামীর স্মপাদনায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ করে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক উন্নতির লক্ষ্যে ‘আদিবাসী উপপরিকল্পনা’-প্রকল্পের মুখ্য পরিদর্শক ও সহ-অধিকর্তা খামার ডা. কেশব চন্দ্র ধারার পূর্ণ সহযোগিতায় এই প্রথম কোন লেখক ডা. বাবুলাল ডাঃ বাবুলাল টুডু, পরিযোজনা সমন্বয়, উত্তর ২৪ পরগনা, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র প্রকাশিত প্রথম বই-“আপাসুলঃ সাঁদেশ”- যা বাংলা অর্থ হল-“জীবন জীবিকার উপহার” যা প্রাণীপালন বিশেষ করে ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি ও শুকর পালনের দ্বারা সম্ভব সেই লক্ষ্যেই এই বই প্রকাশ।

পশ্চিমবঙ্গের তো বটেই সারা ভারত বর্ষের সমস্ত সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কাছে প্রাণীপালনের নানান দিক তুলে ধরতে এই প্রয়াস। আগামিদিনে এমন আরও বই প্রকাশের সম্ভাবনার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। এই বইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে উদ্বোধন হয়।

আমরা যারা প্রতিনিয়ত ভূমিহীন, প্রান্তিক চাষিদের খবর রাখি – অর্থাৎ এই বিশ্ববিদ্যালয় যার একটি শাখা হল- গবেষণা, সম্প্রসারণ ও খামার অধিকরণ- এই বিভাগটি তার কর্মকান্ড দিয়ে যেভাবে গ্রামীণ মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করে ফেলেছে তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। অধিকর্তা, অধ্যাপক অরুণাশীষ গোস্বামী ও সহ অধিকর্তা ডা. কেশব চন্দ্র ধারা সহ এই বিভাগের অন্যান্য আধিকারিক যে পরিশ্রম দিয়ে বিজ্ঞান-ভিত্তিক উপায়ে প্রানীপালনের মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখে এই বই প্রকাশ করেছেন তা আশা করি এক অনন্য সৃষ্টি।

লেখক ডা. বাবুলাল টুডু একজন সুদক্ষ লেখক এবং ডিএসসি প্রাপক অর্থাৎ আশা করা যায় এই “উপহার” সবাই সাদরে প্রহণ করবেন। আগামী দিনে আরও বই সাঁওতালি ভাষাতে প্রকাশ হবে এমনটাই আশা করলেন কেশববাবু।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস এই বইটি সম্পর্কে বলেন-“প্রাণী পালকদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত অভিজ্ঞতার সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটাতে পারলে বাড়বে উৎপাদন এবং সেই উৎপাদন হবে স্থিতিশীল। তাই প্রাণী সম্পদের স্থিতিশীল উৎপাদনের লক্ষ্যে অন্যতম প্রয়োজন প্রাণীপালকদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ভাবে প্রশিক্ষিত করা। এই মুহূর্তে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১/৭ শতাংশ। এই বিপুল জনসমষ্টির আর্থিক চাহিদা মেটানো এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। তাই আজকের দিনে ভাবতে হচ্ছে এমন এক দীর্ঘস্থায়ী উৎপাদনশীলতার কথা যা খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সুরক্ষিত রাখবে পরিবেশকে। সংরক্ষিত থাকবে প্রাকৃতিক সম্পদ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সচেতন ও সুকৌশল প্রয়োগ ব্যতীত যা অসম্ভব। এমন এক ‘অভাব’ ও ‘অভিযোগ’ এর সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের আর্থিক সহযোগিতায় এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে “আদিবাসী উপ পরিকল্পনার অধীন প্রাণীপালন। যেহেতু আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষই প্রাণীপালনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পশ্চিমবঙ্গের যে ৬টি জেলায় এই পরিকল্পনার কাজ চলছে সেখানে বনরাজ মুরগি, ছাগল ও শুকর বিতরণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও বিশেষ করে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির আদান-প্রদানে ভাষাগত সমস্যাকে কিছুটা হলেও সমাধান করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রাণী পালনের উপর সাঁওতালি ভাষায় ছোট পুস্তিকা “আপাসুলঃ সাঁদেশ” যার বাংলা তর্জমা “জীবন জীবিকা উপহার”।”তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন- বইটি প্রাণীপালকদের উৎসাহ এবং উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।”

Published on: জানু ৪, ২০১৯ @ ১০:২৯


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

35 + = 42