ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের জন্য ২০২৩ আরও ভালো হবে- আশা করছেন টাফি’র চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি

Main কোভিড-১৯ দেশ বিদেশ বিমান ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: ডিসে ৩১, ২০২২ @ ২৩:১৭
Repoprter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৩১ ডিসেম্বর: কোভিড -১৯ মহামারী ২০২০-২১ দু’বছর ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পকে একেবারে শেষ করে দিয়েছিল। সেখান থেকে ২০২২ সালে ফের নতুন করে মাথা তুলে দাড়িয়েছে এই শিল্প। নতুন করে আশার আলো দেখা শুরু করেছে পর্যটন দুনিয়া। সম্প্রতি চীনের কোভিড পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে ভারত সরকার এশিয়ার ছ’টি দেশে ভ্রমণকারীদের ভারতে প্রবেশের সময় আরটি-পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে। এসব সত্বেও ২০২৩ ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের জন্য আরও ভালো হবে বলে আশা করছেন ট্রাভেল এজেন্টস ফেদারেশন অব ইন্ডিয়া বা টাফি’র চেয়ারম্যান (পূর্ব ভারত) অনিল পাঞ্জাবি। সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে ধরলেন ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের সামগ্রিক চিত্র। একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিলেন- সব দিক বিবেচনা করে নতুন বছর থেকে নতুন কয়েকটি বিভাগ খুলতে চলেছে, যেখানে সিনিয়র সিটিজেন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।

ট্রেন্ড ভালো আছে, লোকজন ভ্রমণ করছে

এসপিটি-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অনিল পাঞ্জাবি ইন্টারন্যালনাল ট্যুরিজম নিয়ে জানালেন কিছু গুরুত্বপুর্ণ কথা। “২০২০ থেকে যে লকডাউন হয়েছে তাতে পুরো বছর নষ্ট হয়ে গেছিলো। ২০২১ অক্টোবর থেকে দেড় বছর কিছু হয়নি। কিছু কিছু বর্ডার খোলা ছিল। এমারজেন্সি কিছু স্টুডেন্ট ছিল তারা ট্রাভেল করেছে। আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। এই বছর ২০২২ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে হাল ফিরেছে। বিজনেস ভাল শুরু হয়েছে। ২০২০ তে লকডাউন হয়েছে। ২০২১ কিছুটা স্টার্ট হয়েছে। বিশেষ করে ডোমেস্টিক। ২০২২ মার্চ-এপ্রিল থেকে ভালো বিজনেস স্টার্ট হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল স্টার্ট হয়েছে। ডোমেস্টিক উঠে গেছিল। এখন বিজনেস ভালো চলছে। ট্রেন্ড ভালো আছে। লোক যাচ্ছে। লোক মনে করছে, বাইরে যেতেই হবে। ভাড়া বেড়ে গেছে। এয়ারলাইন কম হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও ট্রাভেল খুব ভালো জায়গায় পৌঁছেছে। পুজো ভালো গেছে।”

ভারত এখন থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে

“তবে এই গত ১৫ দিন ধরে আবার কোভিড নিয়ে হইচই শুরু হয়ছে।দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি এই নিয়ে একটু চিন্তায় পড়ে গেছে। এর আগে বিশ্বকাপে খুব ভালো টিকিট বিক্রি হয়েছে। লোকে আবার একটু দ্বিধায় পড়ে গেছে। তারা ভাবছে আবার ওখানে গিয়ে যদি আটকে পড়ে। তাই তারা ভাবছে- সেখানে যাবে কি যাবে না! এরই মধ্যে ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে- ১ জানুয়ারি থেকে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং থেকে আবার আরটি-পিসিআর টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে ভারতে ঢুকতে হবে। ঠিক আছে ভারত এখন থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে যাতে কোভিডের দ্বিতীয় পর্যায় যতটা খারাপ হয়েছিল তেমনটা যাতে আর না হয়।”

খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে-অনিল পাঞ্জাবি

“তবে সেইসব দেশগুলিতে আমাদেরও কিছু লোক আছে, তারা যে খবর পাঠাচ্ছে তাতে বেশ বোঝা যাচ্ছে যাচ্ছে যে ওইসব দেশগুলিতে পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক। আতঙ্কিত হবার কোনও কারণই নেই। ইউরোপে লোক এসব নিয়ে একেবারেই ভাবছে না। আমেরিকা, কানাডা থেকে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে সবই স্বাভাবিক। তা আমি বুঝতে পারছি না, মাত্র ১ শতাংশ হচ্ছে তা নিয়ে এত আতঙ্ক ছাড়ানোর কি আছে! কিছু মানুষ এই নিয়ে অযথা প্যানিক ছড়াচ্ছে, যা কোনওভাবেই কাম্য নয়। তবে যে গুজব রয়েছে এটা যেন গুজবই থাকে। আশা করি, খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ট্রেন্ড খুবই ভালো আছে। গরমের ছুটিতে মানুষ ঘুরতে গেছে। শীতেও মানুষ বেরোচ্ছে। পুজোতেও সবাই ভালো ঘুরেছে। স্কুল বন্ধ আছে। নতুন বছরে পরীক্ষা শুরু হবে। আবার সকলে ভ্রমণের প্ল্যানিং করছে। স্কুলগুলি গ্রুপ নিয়ে যাবে। ট্রেন্ড ক্রমেই এগোচ্ছে।” যোগ করেন অনিল পাঞ্জাবি।

অনেক উড়ান আসছে, আরও নতুন কিছু আসার সম্ভাবনা আছে

“কোভিডের পর ডোমেস্টিক খুবই ভালো করছে। নিউ সেক্টর যুক্ত হয়েছে। ভিয়েতনাম যুক্ত হয়েছে। দুবাই পিক আপ করে গেছে। ফ্লাইট আসছে। মালয়েশিয়া খুব ভালো পিক আপ করছে। আমাদের ওখানে কনভেনশন ছিল। ৫০০ লোক গেছে। থাইল্যান্ড ভালোমতোই শুরু হয়েছে। থাই এয়ারওয়েজ ১ জানুয়ারি থেকে কলকাতা-ব্যাঙ্কক যাত্রা শুরু করছে। ইথিয়াদ আবার আসছে। হংকং-এর জন্য যে ড্রাগন এয়ারলাইন্স ছিল তাদের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে আবার যাতে শুরু করা যায়। তাদের বলা হয়েছে- আপনারা আবার চলে আসুন। ট্রাফিক আছে। বিজনেস আছে। আশা করছি, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম সেক্টর আরও বেটার হবে। সরকারও চাইছে কলকাতায় ইউরোপের ফ্লাইট আসুক। বিজনেস একটু বাড়ছে। আশা করছি, ২০২৩ তুলনামূলকভাবে ২০২০-২২১ সালের চেয়ে আরও ভালো হবে।”

মেডিক্যাল ট্যুরিজম এগোচ্ছে

“মেডিক্যাল ট্যুরিজম পিকআপ করছে। এখানে মেডিক্যাল ট্যুরিজমে ভালো আশা আছে। বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল থেকে বহু মানুষ আসছে। এখানে এসে তারা ট্রিটমেন্ট করছে। এখানে ডাক্তাররা ট্রাভেল এজেন্টদের নিয়ে কাজটা করছে। এখানে কিছু ডাক্তার, কিছু এয়ারলাইন-এর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী আছে। আমাদের যুক্ত করা হয়েছে। আমাদের এআর-ইএস রয়েছে। টাকা তো আসবেই। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা – মানুষজনকে চিকিৎসার বিষয়ে সঠিক গাইড করা। তাদের সাহায্য করা। তারা তো প্রতিবেশি দেশ থেকে আসছে। এখানে যারা আছে, যাদের শরীর খারাপ, তাদের ঠিক মতো গাইড করা। সঠিক ডাক্তার কে আছে, এসব তাদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভুটানের পাশাপাশি আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চল থেকেও অনেকে আসছে।” জানান টাফি’র চেয়ারম্যান।

হল সিনিয়র সিটিজেনদের সাহায্য করতে গঠিত হল নয়া টিম

“একই সঙ্গে আমরা একটি টিম তৈরি করছি, যাদের কাজ হল সিনিয়র সিটিজেনদের সাহায্য করা। এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে সিনিয়র সিটিজেন বাড়িতে একা আছে, তাদের যদি ব্যাঙ্ক যেতে হয়, কিংবা কোনও ডাক্তার দেখাতে যেতে হয় তখন তাদের এই টিম সাহায্য করবে। খুব শীঘ্রই এই টিম কাজ শুরু করতে চলেছে। একটু চার্জ বছরে নেবে, তার বিনিময়ে গোটা বছরে তার পাশে থেকে সাহায্য করবে। ভেলোরে কেউ যদি দেখাতে যেতে চায় ডাক্তার বুকিং করতে হয়ে সেটাও আমরা এখান থেকে করে দিয়ে থাকি। এই নতুন সেগমেন্টটা যুক্ত হচ্ছে।”

ভ্রমণে নয়া দিশা দেখাবে ‘ট্রাভেল নাও পে’ চালু

“ডোমেস্টিক অনেক ভালো হয়েছে। বহু মানুষ যাচ্ছে রাজস্থান, কাশ্মীর এখন বহু মানুষ যাচ্ছে। আমি একট নতুন স্কিম করেছি। ট্রাভেল নাও পে । যার মাধ্যমে মানুষ প্রতি মাসে টাকা জমিয়ে ঘুরতে যেতে পারবে। ছ’মাস আপনি পেমেন্ট করুন। কোনও সুদ ছারাই। ৬ মাসে আপনি পেমেন্ট করতে পারবেন। এটা এক লাখ জমা করতে পারেন। প্রথম ১০ হাজার দিয়ে শুরু করলেন। তারপর বাকি ৯০ হাজার টাকা বাকি ৬ মাসে বিনা সুদে জমা করতে পারেন।” বলেন অনিল পাঞ্জাবি।

“একই সঙ্গে বিদেশে পড়াশুনোর জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের গাইড করা যাচ্ছে। আপনার মাইন্ডে আছে- কি আপনি পড়তে চাইছেন, কোথায় পড়বেন, কি ধরনের কোর্স করতে চাইছেন কত টাকা ফিজ আছে, কত টাকা ছাড় পাবেন এসব কিছুই গাইড করা হবে।”

কলকাতা থেকে সরাসরি ইউরোপ ফ্লাইট শুরু করার চেষ্টা

এখন তো ইন্টারন্যাশনালে সব চেয়ে বেশি চাহিদা আছে থাইল্যান্ড, দুবাই। ভিয়েত্নাম খুব দারুনভাবে উঠে আসছে। ইন্দোনেশিয়ার বালি খুব ভালো করছে। ভিয়েত্নামে তো ইন্ডিগো যাচ্ছে। ইউরোপিয়ান ফ্লাইটকে আনাতে হবে। এখন এয়ার ইন্ডিয়া এখান থেকে দিল্লি হয়ে নেদারল্যান্ড, ইস্তাম্বুল যাচ্ছে। আমরা চাইছি এটা যাতে সরাসরি কলকাতা থেকে চালু করা যায়।

অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই

“চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং যারা যেতে চাইছেন কিংবা যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছেন তাদের উদ্দেশ্যে জানাই- আপনারা কেউ অযথা চিন্তা করবেন না।এখান থাকে আপনারা যখন ওইসব দেশগুলিতে যাবেন ত্খন স্বাভাবিক যাত্রীদের মতোই যেতে পারবেন। শুধুমাত্র ওইসব দেশ থেকে ফেরার সময় একটা আরটি-পিসিআর টেস্ট আপনাকে করাতে হবে। তার রিপোর্ট এয়ার সুবিধা পোর্টালে আপলোড করতে হবে। এটা শুধুমাত্র একটা সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসাবেই নেওয়া হয়েছে। কেন এটা করেছে, আমি বুঝতে পারছি। এটা খুবই ভাল সিদ্ধান্ত। এখানে ভয়ের কোনও কারণ নেই। খালি প্রোটোকল মেনে চলো আর সতর্ক থাকো। এটা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।”

Published on: ডিসে ৩১, ২০২২ @ ২৩:১৭


শেয়ার করুন