বাংলা ভাষীদের জন্য সুখবর- উদ্বোধন হল ‘জীবাতু’ অডিও বুকের

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ১৩, ২০২৪ at ১১:১৭

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১২ ফেবরুয়ারি: সারা বিশ্বে বাংলা ভাষী বৈষ্ণবদের জন্য খুব সুন্দর উদ্যোগ নিয়েছে গৌড়ীয় মঠ। সোমবার ১২ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তাদের প্রধান কার্যালয়ে উদ্বোধন করা হল ‘জীবাতু’ অডিও বুকের। গৌড়ীয় মঠ ও ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে এদিন এই অডিও বুকের উদ্বোধন করেন গৌড়ীয় মঠের আচার্য্য ও সভাপতি শ্রীমৎ  ভক্তি সুন্দর সন্ন্যাসী মহারাজ।

জীবাতু অডিও বুক সম্পর্কে বললেন শ্রীমৎ ভক্তি মধুসূদন মহারাজ

বাগবাজারে গৌড়ীয় মঠের সম্পাদক শ্রীমৎ ভক্তি মধুসূদন মহারাজ  এই প্রসঙ্গে বলেন- “আজ আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি- গৌড়ীয় মঠ ও মিশনের প্রতিষ্ঠাতা ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদের ১৫০তম জন্মোৎসব ত্রিবর্ষকাল ধরে উদযাপন করছি। সেই উপলক্ষে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে একটি কর্মসূচি হল –এই ‘জীবাতু’ অডিও বুকের উদ্বোধন। জীবাতু শব্দের অর্থ হল জীবের আহার। এখানে জীব অর্থে আত্মা – মনের খাবার তো অনেক রয়েছে কিন্তু আত্মার কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত তা ভক্তি সিদ্ধান্ত প্রভুপাদ আমাদের দিয়ে গেছেন। সেই বস্তুগুলি নিয়েই আমরা এই অডিও বুক প্রস্তুত করেছি।

এই অডিও বুকের মধ্যে ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সময় উনি ১৮ বছর- ১৯১৮ থেকে ১৯৩৬ সাল বিপুলভাবে প্রচার করেছিলেন সারা বিশ্বব্যাপী ভারত ছাড়া বিদেশেও। সেই সময় তার একটা মুখ্য দিক ছিল প্রকাশনা। প্রায় সাতটি বিভিন্ন ভাষাতে –যেমন- বাংলা, হিন্দি, ইংরাজি, ওড়িয়া, অসমীয়া ভাষায় প্রকাশ করেছিলেন। তিনি কোনওটা মাসিক, কোনওটা পাক্ষিক, কোনওটা সাপ্তাহিক আবার কোনওটা ত্রৈমাসিক ভাবে বের করতেন। তার মধ্যে মুখ্য হল- বাংলা গৌড়ীয়  এবং আর একটি দৈনিক নদিয়া প্রকাশ। এটি প্রতিদিন বের হত। সেখানে যে সমস্ত বিষয় বস্তুগুলি প্রকাশিত হত তার থেকে আমরা মূলতঃ চারটি ভাগ তুলেছি।

১) সেইসময় প্রভুপাদের সঙ্গে বিভিন্ন মনীষীদের সঙ্গে কথপোকথন।

২) বিভিন্ন ভক্তের জীবনী, সেইসময় যা প্রকাশিত হয়েছে।

৩) বিভিন্ন ইভেন্ট অর্থাৎ মঠ-মন্দির উদ্বোধন হোক বা  এক্সিবিশন হোক কিংবা মহাপ্রভু চৈতন্য পাদপীঠ হোক –এইরকম যে সমস্ত ইভেন্টগুলি বা মন্দির উদ্বোধন করেছেন মহাপ্রভুর জন্মস্থান করতে গিয়ে, সেইসময় বাংলার গভর্নর অ্যান্ডারসনকে নিয়ে গেছেন ১৯৩৫ সালে মায়াপুরে। এই যে ইভেন্ট এগুলি নিয়ে একটা পার্ট ।

৪) আর একটা হচ্ছে আর্টিকেল- ফিলোজফিক্যাল বা অর্থাৎ দর্শন ভিত্তিক যে সমস্ত প্রবন্ধ। এই চারটি বিষয় নিয়ে আমাদের মুখ্যত অডিও বুক।

চৈতন্যের বানীকে ছড়িয়ে দেওয়ার পুরোধা ছিলেন ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ- শ্রীমৎ  ভক্তি সুন্দর সন্ন্যাসী মহারাজ

গৌড়ীয় মঠের আচার্য্য ও সভাপতি শ্রীমৎ  ভক্তি সুন্দর সন্ন্যাসী মহারাজ বলেন- “আজকে ভারতবর্ষের মধ্যে প্রাচীন একটা ধারা –এটাকে বৈষ্ণব ট্র্যাডিশন বলা যায়। সেই বৈষ্ণব ঐতিহ্যকে মুখ্যতঃ চৈতন্যদেব যেভাবে তুলে ধরেছিলেন চৈতন্যদেবের সময় সেই বৈষ্ণব ট্র্যাডিশনটাকে যেভাবে ছেঁকে সারাংশটাকে বের করেছিলেন মহাপ্রভু সেই সারাংশটাকে প্রচার করবার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি হলেন ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর। বঙ্গ থেকে বঙ্গের বাইরে ভারতবর্ষের গ্রামে-গঞ্জে এবং পরে বিদেশের মাটিতে সেই প্রাচীন সংস্কৃতি ভক্তি-যোগের সংস্কৃতি এবং চৈতন্যদেবের ভাবধারার সংস্কৃতি মহাপ্রভুর যে বানী ছিল ‘পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম সর্বত্র সঞ্চার হইবে মোর নাম’ পৃথিবী পর্যন্ত নগরাদি গ্রামে আমার এই ভক্তি আন্দোলন বিশুদ্ধ ভক্তি-যোগ পরম্পরাটা ছড়িয়ে পড়বে। তার পুরোধা ছিলেন ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ। যাকে আজকের দিনে বিশ্ব নেতা বললে কোনও অত্যুক্তি হয় না। তিনি যখন অন্তর্ধান লীলা প্রকাশ করেন তখন অমৃতবাজার প্ত্রিকায় সেটা খবর আকারে সেটা প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল যে তিনি একজন ‘ওইয়ার্ল্ড লিডার’ ছিলেন ভক্তি মুভমেন্টকে সর্বত্র প্রসারিত করবার ক্ষেত্রে। “

“তিনি যেসকল উপায় অবলম্বন করেছিলেন প্রচার করতে গিয়ে তার মধ্যে একটা উপায় হচ্ছে বিভিন্ন ভাষায় পত্র-প্ত্রিকা নিউজ পেপার বের করা। সেই সময় এই নিউজ পেপার ছাপিয়ে প্রকাশ করা একটা  কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু তিনি নিজের থেকে তিনটি প্রেস- মায়াপুর, কৃষ্ণনগর এবং কলকাতায় স্থাপন করে তিনি চৈতন্যের বানী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। মানুষের খাবার, আজকে আমরা ‘জীবাতু’ বলে যেটা অডিও বুক প্রকাশ করছি প্রকৃতপক্ষে আজকের দিনে মানবের যে অস্থির অবস্থা, অশান্তিময় অবস্থা এবং মানবচিত্ত বিক্ষিপ্ত বললে কোনও ভুল হয় না। এক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান আমরা মনে করি- প্রভুপাদও তাই বলেছেন- ভৌতিক খাদ্য বা আহারের সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিক আহারের প্রয়োজন রয়েছে। আধ্যাত্মিক আহার দেওয়ার জন্যই যারা শুনতে ভালোবাসেন যারা বাংলা ভাষী তাদের জন্য আমরা প্রথমেই এই উদ্যোগটা নিয়েছি। “

“এটা প্রভুপাদের স্মৃতি বর্ষ- ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আমরা এই উদ্যোগটা নিয়েছি। প্রভুপাদেরই লেখা আর্টিকেল, তাঁরই দেওয়া ভাষণ , প্রভুপাদেরই সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন প্রভু, নেতা, পন্ডিত যারা সমাজে এবং বিভিন্ন প্রদেশের রাজা বর্ধমানের রাজা, ত্রিপুরার রাজা, মহীশুরের রাজা, মহিমগঞ্জের রাজাসব রাজন্যবর্গ প্রভুপাদের কাছে এসে নত হয়েছিলেন । মদন মোহন মালব্য, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, সেইসময়ের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব তারাও প্রভুপাদের সিদ্ধান্তে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সেই প্রভুপাদের বানী, প্রভুপাদের সঙ্গে তাদের কথোপকথন সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে সহজ ভাষায় আমরা ‘জীবাতু’ নাম দিয়ে এই অডিও বুক প্রচার করার উদ্যোগ নিয়েছি। আপনাদের সহযোগিতা থাকলে আমার মনে হয় মানব কল্যাণ হবে। বিশ্ব মানবের দ্বারে দ্বারে পৌঁছবে এবং প্রভুপাদের উদ্দেশ্য তথা মিশনটা সার্থক হবে।“

সারা বিশ্বে ২৩৪ মিলিয়ন বাংলা ভাষীর কাছে পৌঁছে যাবে এই অডিও বুক –ড. সুমন্ত্র রুদ্র  

এই অডিও বুক সম্পর্কে ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের ডাইরেক্টর ড. সুমন্ত্র রুদ্র বলেন- এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে ২৩৪ মিলিয়ন বাংলা ভাষীর বাংলা পডকাস্ট পাওয়া খুব মুশকিল হয়। তাই এদের জন্য গৌড়ীয় মিশনের সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। একটা পডকাস্টের মাধ্যমে ২৩৪ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছতে পারব। একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কম্যিউনিকেশন। নদিয়া প্রকাশ এবং গৌড়ীয় থেকে এই নতুন পডকাস্ট  চ্যানেল তৈরি হয়েছে তার মাধ্যে গোটা বিশ্ব জানাতে পারবে। ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ একটা বিরাট বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই গৌড়ীয় বৈষ্ণব আর চৈতন্য ভাবনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। যেটা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই যে ‘জীবাতু হয়েছে এটা একটা একটা দারুন গবেষণার ফল। খুব দুর্লভ সংগ্রহ যা শতাধিক বছরের পুরনো লেখাগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে। ওই গুলিকে স্ক্যান করে, ডিজিটাইজড করে ওনার নেতৃত্বে কাজ করছিলাম। বিষয়বস্তু একেবারে সঠিক। বাংলা দিবসও হয়েছে রাষ্ট্র সংঘের অনুমোদিত। এটাই আমরা বাংলা অডিও বুকে তুলে ধরতে চাইছি।

বৃন্দাবনে গৌড়ীয় মঠের শাখা মঠ শ্রীবিষ্ণু চৈতন্য মঠের অধ্যক্ষ্য ভক্তি ভাস্কর ভারতী মহারাজ বলেন-  “প্রভুপাদের ১৫০তম জন্মজয়ন্তী  উদযাপনের যে ত্রিবর্ষব্যাপী মহোৎসবের আয়োজন গৌড়ীয় মিশন থেকে নেওয়া হয়েছে  তার একটি অংশ এদিনের অডিও বুকের উদ্বোধন। প্রভুপাদের ব্যক্তিত্ব তাঁর  বৈশিষ্ট্য, সমাজের জন্য আজও মঙ্গলদায়ক হয়ে আছে প্রত্যেক স্তরের ব্যক্তিকে তাঁর চিন্তাধারায় যুক্ত করে তাদের কিভাবে মঙ্গল করা হবে সেই উদ্দেশ্যেই গৌড়ীয় মিশন কর্তৃপক্ষের থেকে প্রভুপাদের এই কার্যক্রম তা প্রথম ২০২২ সালে প্রবর্তন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মাননীয় রামনাথ কোবিন্দ। তিনি প্রভুপাদের জন্মস্থানে এই মহোৎসবের শুভ উদ্বোধন করেছিলেন।

Published on: ফেব্রু ১৩, ২০২৪ at ১১:১৭


শেয়ার করুন