ভূমি পূজা নিয়ে কলম ধরলেন তসলিমা নাসরিন- লিখলেন তাঁর সাফ কথা

Main দেশ ধর্ম বিদেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

“মুসলমানদের মতো আপাদমস্তক ধার্মিক এমনকী ধর্মান্ধ হওয়ার অধিকার তাদেরও আছে। হিন্দু হলে সেক্যুলার হতে হবে, কে দিব্যি দিয়েছে! আসলে সেক্যুলার নামধারী যারা আছে ভারতবর্ষে, তারা হিন্দু মুসলমান যে-ধর্মেরই হোক না কেন, ধর্মে তাদের গভীর বিশ্বাস। এদেশে নাস্তিক খুব চোখে পড়ে না।”-তসলিমা নাসরিন

Published on: আগ ৬, ২০২০ @ ১৫:১৪

এসপিটি নিউজ: সোশ্যাল নেটওয়ার্কে নিজের পেজে এবার ভূমি পূজা নিয়ে লিখলেন তসলিমা নাসরিন। যেখানে তিনি তাঁর মনের সাফ কথা প্রকাশ করেছেন। লেখাটিতে তিনি বিশ্বের সমস্ত ধর্মকে স্মরণ করেই নিজের মত ব্যক্ত করেছেন। এই লেখাতেই তসলিমা তুলে ধরেছেন হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে স্পষ্ট অভিমত। যেখানে তিনি লিখেছেন-“দুনিয়াতে একেশ্বরবাদের ভিড়ে এবং আধিপত্যে এখনও একটি প্রাচীন বহুঈশ্বরবাদ নানা ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যে টিকে আছে। টিকে থাকা একটা চ্যালেঞ্জ বটে। টিকে থাকুক।” এমনকি, ভারতবর্ষ যদি কোন ওদিন হিন্দু রাষ্ট্র হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্র কেমন হোয়া উচিত তানিয়েও নিজের জানিয়েছেন এই নির্ভীক সাহসী স্পষ্টবাদী বাঙালি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সংবাদ প্রভাকর টাইমস তার পাঠকদের জন্য সম্পূর্ণ লেখাটি তুলে ধরল।আসুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক- ভূমি পূজা নিয়ে ঠিক কি লিখেছেন তসলিমা নাসরিন।

“এখনও একটি প্রাচীন বহুঈশ্বরবাদ নানা ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যে টিকে আছে”-তসলিমা

“ভূমি পূজা দেখলাম, যেমন কাবা পরিক্রমণ দেখি, মিনা শহরের দেওয়ালে শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোঁড়া দেখি, সেন্ট প্যাট্রিক ডে’র প্যারেড দেখি, গির্জার সারমন দেখি, পুরোনো জেরুজালেম শহরের ওয়েস্টার্ন ওয়ালে ইহুদিদের মাথা ঠোকা দেখি। ওইসবে অংশগ্রহণ আমার কাজ নয়, অবলোকন আমার কাজ। রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে বলে আমি শোক করছি না, সুখও করছি না। ভারতের হিন্দুদের অধিকাংশই চাইছে রাম মন্দির তৈরি হোক, সুতরাং তৈরি হোক । দুনিয়াতে একেশ্বরবাদের ভিড়ে এবং আধিপত্যে এখনও একটি প্রাচীন বহুঈশ্বরবাদ নানা ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যে টিকে আছে। টিকে থাকা একটা চ্যালেঞ্জ বটে। টিকে থাকুক।”

“কাবাই তো ছিল মক্কার বহুঈশ্বরবাদীদের মন্দির”- তসলিমা

“ইতিহাস জুড়ে কত যে গির্জাকে মসজিদ করা হয়েছে, ফের মসজিদকে গির্জা করা হয়েছে, কত যে সিনেগগকে মসজিদ করা হয়েছে, আবার মসজিদকে সিনেগগ। কত যে হিন্দুর, আর জোরোস্ত্রিয়ানদের মন্দিরকে ভেঙ্গে মসজিদ করা হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। কাবাই তো ছিল মক্কার বহুঈশ্বরবাদীদের মন্দির। শেষনবী মুহম্মদ সেই মন্দিরের ৩৬০টি দেব দেবীর মূর্তি ভেঙ্গে কাবা দখল করে নেন। যে-ই ক্ষমতা দখল করেছে কোনও অঞ্চলের, সে-ই সেই অঞ্চলে তার বিশ্বাসের ইমারত নির্মাণ করেছে। কোথায় এখন অলিম্পিয়া পর্বতের সেই দেবতারা, কোথায় শক্তিশালী রোমান ঈশ্বরেরা! কোথায় মিশরের দেবদেবী? সবই বিলুপ্ত। এক ধর্ম সরিয়ে আরেক ধর্ম এসেছে, এক ধর্মের উপাসনালয় আরেক ধর্মের উপাসনালয়ে পরিণত হয়েছে। স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চল দখল করার পর গির্জাগুলোকে মসজিদ বানিয়েছিল মুসলমান শাসকেরা। কয়েক শতক পর মুসলমানরা যুদ্ধে পরাজিত হলে মসজিদ্গুলোকে ফের গির্জা বানিয়েছে স্পেনের খিস্টান শাসক। এভাবেই চলছে জগত। কোনও একদিন রোবটেরা যদি দখল করে নেয় পৃথিবী, বা কোনও এলিয়েন, তাহলে আমাদের মন্দির মসজিদ, গির্জা প্যাগোডা, সিনেগগ গুরুদুয়ারাকে কী বানাবে ওরা কে জানে, হয়তো নাটবল্টুর ওয়্যারহাউজ।”

“হিন্দু হলে সেক্যুলার হতে হবে, কে দিব্যি দিয়েছে”-তসলিমা

“ভারতের হিন্দুরা এখন যদি মুসলমানরা যেমন পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ গড়ে তোলে, তেমন মন্দির গড়ে তোলে পাড়ায় পাড়ায়, তাহলে আপত্তি করার তো কিছু নেই! মুসলমানদের মতো আপাদমস্তক ধার্মিক এমনকী ধর্মান্ধ হওয়ার অধিকার তাদেরও আছে। হিন্দু হলে সেক্যুলার হতে হবে, কে দিব্যি দিয়েছে! আসলে সেক্যুলার নামধারী যারা আছে ভারতবর্ষে, তারা হিন্দু মুসলমান যে-ধর্মেরই হোক না কেন, ধর্মে তাদের গভীর বিশ্বাস। এদেশে নাস্তিক খুব চোখে পড়ে না।”

“মুসলিম সন্ত্রাসীদের তারা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছে”-তসলিমা

“ইসলাম ধর্ম যেমন শেখায় বিধর্মীদের কাছ থেকে দূরে থাকতে, অবিশ্বাসী আর অমুসলিমদের পেছন থেকে হাত পা কেটে ফেলতে, তেমন শিক্ষা হিন্দু ধর্মের লোকেরা তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে পায় না। তেমন শিক্ষা বাইবেল থেকেও ইহুদি আর খ্রিস্টানরা পায় না, তেমন শিক্ষা বৌদ্ধরাও তাদের ত্রিপিটক থেকে পায় না। এখন যদি হিন্দুরা বিধর্মীদের বা অহিন্দুদের ধরে ধরে হত্যা করে, তাহলে বুঝতে হবে তারা তাদের ধর্মের শিক্ষার বাইরে গিয়ে হত্যা করছে। তারা মুসলমানের ধর্মগ্রন্থকে নিজের ধর্মগ্রন্থ ভাবছে, তারা ইসলাম থেকে প্রেরণা পাচ্ছে, বা মুসলিম সন্ত্রাসীদের তারা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছে।”

“একে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সাচ্চা হিন্দু হওয়া জরুরি, সাচ্চা মুসলমান নয়”-তসলিমা

“হিন্দুরা নিজ ধর্মে ডুবে থাকতে চাইলে ডুবে থাক। এভাবেই বিরুদ্ধ স্রোতে ধর্মকে তারা বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সাচ্চা হিন্দু হওয়া জরুরি, সাচ্চা মুসলমান নয়। এই উপমহাদেশে বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া সহজ নয়। এখানে বিজ্ঞানীরাও বিজ্ঞানমনস্ক নয়। এখানে সাচ্চা কমিউনিস্টরাই সাচ্চা ধার্মিক। আপাতত ভায়োলেন্স আর ঘৃণাকে সমস্ত মনোবল দিয়ে দূরে রাখুক। হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খিস্টান সকলে। যদি ভারতবর্ষ একদিন হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে ওঠে, তাহলেও যেন মুসলমানদের রাষ্ট্রের মতো সেই রাষ্ট্র না হয়, যেন নানা গোষ্ঠীর নানা বর্ণের নানা জাতের নানা মতের নানা বিশ্বাসের নানা ধর্মের নানা সংস্কৃতির সৌহার্দপূর্ণ সহাবস্থানে সমৃদ্ধ হয় সেই রাষ্ট্র।”

Published on: আগ ৬, ২০২০ @ ১৫:১৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

25 − 16 =