ভারত বনধ রুখতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে এদিন পথেই নামতে হল না, কাজটা সহজ করে দিল তৃণমূল কংগ্রেস

উত্তর সম্পাদকীয় দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

প্রতিবেদন- অনিরুদ্ধ পাল

Published on: জানু ৮, ২০২০ @ ২০:০০

এসপিটি নিউজ:  আজ ছিল ভারত বনধ। দেশের বিজেপি বিরোধী প্রায় সব কটি দল এই বনধকে সমর্থন জানিয়েছিল। যার ফলে কংগ্রেস ও অবিজেপি শাসিত প্রায় সব কটি রাজ্যেই এই বনধে সাড়া দিয়েছিল। কিন্তু মজার বিষয় – কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরোধিতা করে দেশের বা্মপন্থী সংগঠনগুলি এদিন যে বনধ ডেকেছিল তাতে কংগ্রেস, শিবসেনা সহ বিজেপি বিরোধী একাধিক রাজনৈতিক দল এই বনধকে সমর্থন জানালেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস শুধুমাত্র কর্মক্ষমতা নষ্ট হওয়ার কারণ দেখিয়ে তীব্র বিরোধিতা করল। আর যাদের বিরুদ্ধে এই বনধ ডাকা হয়েছিল সেই বিজেপি এ রাজ্যে এদিন বসে বসে মজা দেখল। কারণ তাদের কাজটা যে রাজ্য সরকার সহজ করে দিয়েছে। বনধের বিরোধিতা করে তা রুখে দিয়ে।

কেন এই বনধ, কারা ডেকেছে

মোট ১২টি দাবিকে সামনে রেখে এদিনের ধর্মঘট ডাকা হয়। সারা দেশের দুই শতাধিক শ্রমিক ও ক্ষেতজুরদের সংগঠন তাদের যৌথ সংগ্রাম মঞ্চের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের এই ধর্মঘটকে সমর্থন করেছেন। সারা দেশের ৬০টি ছাত্র সংগঠন শিক্ষার বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে একই দিনে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। আর এই ধর্মঘটে বিজেপি বিরোধী দলগুলির মধ্যে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন করেনি।এদিন তারা মূলত বনধের তীব্র বিরোধিতা করে বিজেপির কাজটাকেই সহজ করে দিয়েছে।

উঠল এই প্রশ্নগুলি

সারা রাজ্যে এদিন যেভাবে ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা বিরোধিতায় পথে নেমেছিল তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে তৃণমূল কংগ্রেসের কেন্দ্রের বিরোধিতা করা তবে কি লোক দেখানো? এনআরসি-সিএএ-এনপিআর নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতা তবে কি শুধুই নাটক? এনডিএ জোটে থাকা শিবসেনা যদি বামপন্থীদের ডাকা কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এনসিআর-সিএএ-র মতো ইস্যুগুলির বিরুদ্ধে ডাকা বনধকে সমর্থন জানাতে পারে, তাহলে তৃণমূল কেন এদিনের বনধের বিরোধিতা করল? তবে কি পর্দার আড়ালে বিজেপি-তৃণমূল কংগ্রেসের যোগাযোগ গভীর হচ্ছে? এইসমস্ত প্রশ্ন কিন্তু আজকের পর সাধারণ মানুষের মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

বনধের বিপক্ষে ও সপক্ষে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি

তৃণমূল কংগ্রেস যুক্তি দেখিয়েছে তারা ইস্যুকে সমর্থন করে কিন্তু বনধকে নয়। একটি বনধ মানুষের আয় ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। এই বনধ করে কোনও লাভ হয় না। আখেরে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এই বনধ নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির প্রদর্শন ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। বামপন্থীরা আবার এই যুক্তির বিরুদ্ধে পালটা যুক্তি খাড়া করে তাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছে- তাহলে ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস যতগুলি বনধ ডেকেছিল সেগুলিতে কোনও ক্ষতি হয়নি সাধারণ মানুষের। বিরোধিতায় থাকলে বনধ ডাকব আর সরকারে আসলে বনধের বিরোধিতা করব- এ তো এক ধরনের দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

বিজেপি-সিপিএমের নিশানায় তৃণমূল কংগ্রেস

বিজেপি অবশ্য এনআরসি নিয়ে অবিজেপি দলগুলির ডাকা বনধ নিয়ে কটাক্ষ করেছে। তারা অবশ্য বলেছে- এসব তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে অবিজেপি দলগুলির বোঝাপড়া। এটা একটা নাটক।রাজ্যে তৃণমূলের সরকার আছে। মুখে বলেছে তারা সমর্থন করছে না। কিন্তু তা কি হয়েছে? এসব একটা নাটক। যদিও সিপিএম-কংগ্রেস একই সুরে জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস এনআরসি বিরোধিতা নিয়ে যা করছে তা শুধুই নাটক আর লোক দেখানো। মোদি-অমিত শাহকে সন্তুষ্ট রাখতেই ওরা আজ বনধ সমর্থকদের উপর লাঠি চালাল। অত্যাচার করল। বিজেপির- হয়ে ওরাই আজ বনধ বিরোধিতায় পথে নেমেছিল।

পরিশেষে

এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে- তাহলে সাধারণ মানুষের কাছে কি বার্তা যাবে? দেশে কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির বিরোধিতা করে আজকের বনধকে অবিজেপি সব কটি সংগঠন সমর্থন জানালেও তৃণমূল কংগ্রেস তাতে সায় দেয়নি। শুধু সায় দেওয়াই নয়, বনধের বিরোধিতায় তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি, নোটিশ জারি করে বলে দেওয়া হয়েছিল সরকারি কর্মচারী যারা আজ অফিসে আসবেন না তাদের একদিনের বেতন কেটে নেওয়া হবে। অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকার যেহেতু এই বনধকে সমর্থন করছে না সেহেতু সে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরাও যেন এই বনধকে সমর্থন করে অফিসে অনুপস্থিত না থাকে। এভাবে চরম বিরোধিতা করে কি তৃণমূল কংগ্রেস এনআরসি ইস্যুতে বিজেপি-কে উৎসাহিত করল না? প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ। যারা এতদিন ধরে দেখে আসছে এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস এনআরসি বিরোধিতায় মিটিং-মিছিল করছে আবার তাদের সরকারই আজ বনধ সমর্থকদের আটক করল। লাঠি চালাল। সাধারণের মানুষের মনে জন্ম নেওয়া এই প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদের আর কিছুদিন তাই অপেক্ষা করতেই হবে।

Published on: জানু ৮, ২০২০ @ ২০:০০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 4 = 1