বড়দিনে রাজ্যের পর্যটনে নয়া নজির গড়ল জঙ্গলমহলের “অরণ্য সুন্দরী”, স্যান্টার সাজে পর্যটকদের মাঝে ঝাড়গ্রামের এসডিপিও

ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল   ছবি-রামপ্রসাদ সাউ

Published on: ডিসে ২৫, ২০১৭ @ ১৭:৫৯

এসপিটি নিউজ, ঝাড়গ্রাম, ২৫ ডিসেম্বরঃ এটা কোনও বানানো গল্প নয়, সরকারি প্রচারও নয়-এটা একেবারে বাস্তব। এটাই আজকের পশ্চিমবঙ্গ। আজকের বাংলা। আজকের জঙ্গলমহল। নেই কোনও মাও-আতঙ্ক, নেই বারুদের পোড়া গন্ধ, নেই গুলির শব্দ। একেবারে বদলে গেছেই শুধু নয়-একদা আতঙ্কের জঙ্গলমহল পর্যটনের জঙ্গলমহলের চেহারায় অরণ্য সুন্দরী রূপে বিকশিত হয়েছে। একদিন যে পুলিশ বাহিনীকে সন্ত্রাসবাদীদের পিছনে ছূটে বেড়াতে হত আজ সেই বাহিনীর কোনও এক কর্তা (এসডিপিও)-কে বড়দিনের দুপুরে খুদে পর্যটকদের সামনে গিয়ে তাদের আনন্দ দিতে।ভারতে তো বটেই এ নজির সারা বিশ্বে আর কোথাও রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।

ঝাড়গ্রামকে জঙ্গলমহলের “অরণ্য সুন্দরী” বলা হয়।সবুজ গাছ-গাছালি, নদ-নদী, ছোট পাহাড়ি টিলা, প্রাচীন মন্দির-সব মিলিয়ে এক অতি মনোরম স্থান এই ঝাড়গ্রাম। একটা সময় এই প্রকৃতি সুন্দর জায়গাটিকে ঘিরে দিনের পর দিন ঘটে গেছে শুধু রক্তপাত। ঝরে গেছে কত অসহায় মানুষের প্রাণ। একটা সময় মনে হয়েছিল এই অবস্থা আর বোধ হয় কোনওদিন বদলাবে না। কিন্তু ছবিটা বদলাতে শুরু করল ২০১১ সালের পর থেকে। যেদিন থেকে রাজ্যে নতুন সরকার দিয়েত্বে এল।তারপর শুধু নয়, আজও একটা অংশ স্ময়ানে বলে চলেছে নাকি কিছুই বদলায়নি। তাদের সেই কথা যে সম্পূর্ণ ভুল সেটাই প্রমাণ করে দিলেন আজ বড়দিনের ছূটিতে অরণ্য সুন্দরীর রূপ দেখতে আসা প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়গ্রাম ও উড়িষ্যার পর্যটকরা।

তেমনই এক পর্যটক শান্তনু দাস ঝাড়গ্রামের ঘাটশিলা থেকে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসেছেন বেড়াতে। তারা উঠেক্সহেন স্থানীয় এক বেসরকারি হোটেলে।তিনি জানান, “আমরা আজ অন্য ঝাড়গ্রামকে দেখলাম। পুলিশ এখানে পর্যটকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করছে। পথে তো দেখলাম, এক পুলিশ অফিসারকে স্যান্টা সেজে পর্যটকদের আনন্দ দিচ্ছেন। এ দৃশ্য যে খুবই বিরল। সারা দেশে তো বটেই সারা বিশ্বে এমন কোনওজায়গা আছে কিনা আমার জানা নেই যেখানে পুলিশ অফিসার স্যান্টা সেজে ঘুরতে আসা পিকনিক করতে আসা শিশুদের হাতে চকোলেট তুলে দিচ্ছেন।এটাই তো চাই। আমরা অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রামের এই রূপ দেখতে প্রতি বছর আসব।”

শান্তনুবাবুর এই কথা যে কতটা বাস্তবসম্মত তা বোঝা গেল আজ বড়দিনে গোটা ঝাড়গ্রামের বুকে। এখানে মোট আটটি ব্লকের মধ্যে ঝাড়গ্রাম, বিনপুর-১ ও বিনপুর-২, গোপীবল্লভপুর-১, জাম্বনী, নয়াগ্রাম, সাকরাইল-এ পর্যটকদের ঢল নেমেছিল। ঝাড়্গ্রামের মিনি চিড়িয়াখানায় যেমন ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে ঠিক তেমনই কংসাবতী ও সুবর্ণরেখা নদীর দুই পার ধরে চড়ুইভাতির আসরে রেকর্ড সংখ্যক ভিড় হয়। এসদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি পাশের প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়গ্রাম ও উড়িষ্যা থেকেও এসেছিল বহু পর্যটক। কংসাবতীর আমখোলা ঘাট, ভেরুয়া, বৈঠা আর সুবর্ণরেখার গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রামে উপছে পড়েছিল মানুষের ঢল। ভীড় জমিয়েছিল কেশিয়াড়ি-নয়াগ্রামের সংযোগরক্ষাকারী জঙ্গলকন্যা সেতুর নীচেও। ভীড় হয়েছিল ঘোড়াঘোড়া, কদমকানন, ডিয়ারপার্কেও।

আজ যে ভিড় হয়েছিল তা গত কয়েক বছরের ভিড়ের হিসাব-নিকাশকে মুছে ফেলে এক নয়া রেকর্ড তৈরি করেছে। এক পুলিশ কর্তা জানান, এই মুহূর্তে আমাদের হাতে সঠিক হিসাবটা নেই। তবে বলা যেতেই পারে, এবার জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রামে পর্যটকদের সংখ্যা অন্যান্যবারের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ এখানের হোটেলগুলি থাকবে একেবারে ভিড়ে ঠাসা। সন্ত্রাসকে পিছনে ফেলে পর্যটনের মানচিত্রে এক নয়া ডেস্টিনেশন হিসেবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে “অরণ্য সুন্দরী” ঝাড়গ্রাম।Published on: ডিসে ২৫, ২০১৭ @ ১৭:৫৯


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

61 − = 57