বর্ষবরণে অচেনা মুখ কলকাতার হোটেলে, বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে ব্যবসায় মন্দা

Main অর্থ ও বাণিজ্য এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ বাংলাদেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

  • কলকাতার হোটেল ব্যবসার বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতি নিয়ে ক্যালকাটা হোটেলস, গেস্ট হাউসেস এন্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া সরব হয়েছে।
  • ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকার ফলে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে কলকাতার হোটেল- রেস্টুরেন্ট ব্যবসার উপর।
  • কলকাতার হোটেলে এখন এসি রুম 500-600 টাকায় দিতে বাধ্য হচ্ছে।
  • ঢাকা-কলকাতা রুটে পাঁচটি কোম্পানি সম্মিলিতভাবে ক্রমান্বয়ে একটি করে বাস চালাচ্ছে।
Published on: ডিসে ৩১, ২০২০ @ ১৯:১২
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৩১ ডিসেম্বর:  প্রতি বছর এই দিনটিতে কলকাতার হোটেলগুলি লোকজনের সমাগমে ভরপুর থাকে। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে হোটেলগুলি। করোনার আবহে এবার সেই চেনা ছবি অনুপস্থিত। বর্ষবরণে এ এক সম্পূর্ণ অচেনা মুখ কলকাতার হোটেলগুলিতে। বিদেশিদের দেখা নেই। নেই বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড়। যাদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল এই হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। যেখানে এখন শুধুই মন্দার হাতছানি।

সরব হয়েছে যারা

কলকাতার এই হোটেলগুলি শুধু নয় একাধিক রেস্টুরেন্ট থেকে মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র ট্রাভেল এজেন্টস, ভ্রমণ সংস্থা সকলেরই একই অবস্থা। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ জায়গায় গেছে যে গোটা ব্যবসাই আজ ধ্বংসের কিনারায় পোঁছে গেছে। অন্যান্য রাজ্য যেখানে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে ভ্রমণ ও পর্যটন ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন।বিষয়টি নিয়ে ক্যালকাটা হোটেলস, গেস্ট হাউসেস এন্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া সরব হয়েছে।

ট্যুরিস্ট ভিসা চালু না হওয়ায় বিপাকে বহু মানুষ

অন্যান্য বছর বর্ষবরণের জন্য বছরের শেষ দিনে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে বাংলাদেশ থেকে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মনোতোষ সাহা যিনি আবার ক্যালকাটা হোটেলস, গেস্ট হাউসেস এন্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ মেম্বারও তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিলেন। মনোতোষবাবু জানালেন- “নিউ মার্কেট, সদর স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, মার্কোস স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, টোডি লেন, চৌধুরি লেন, কিড স্ট্রিট-এ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র, পর্যটন সংস্থার অফিস। যেগুলি সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল বাংলাদেশি পর্যটকদের উপর। করোনা কালে এখন ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকার ফলে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে আমাদের হোটেল- রেস্টুরেন্ট ব্যবসার উপর।এখানে বহু বাংলাদেশির আত্মীয়-স্বজন আছে। সেইসমস্ত মানুষেরা আসেন পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। এখন তাদের ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এটা খুবই বেদনাদায়ক।”

হোটেল ব্যবসা ধুঁকছে

পর্যটক থেকে শুরু করে কাস্টমারের অভাবে আজ হোটেল ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। কলকাতার এইসব হোটেলগুলিতে এখন শুধুই শূন্যতা। পর্যটকের দেখা নেই। ফলে মালিকরা কর্মীদের বসিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গত অক্টোবর মাসের 15 তারিখ রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে দেখা করে কোলকাতার হোটেল ব্যবসায়ীরা তাঁর হাতে এক দাবসনদ তুলে দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তারপরেও কোনও সুরাহা হয়নি। 200 হোটেলের মধ্যে অধিকাংশই এখন খারাপ অবস্থায়। দেড় মাস এগে পর্যন্ত এইসব হোটেলগুলিতে পারায় 15 হাজারের মতো কর্মীকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।তারপর সেখানে কর্মী সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছিল সাড়ে চার হাজার। এখন সেখান থেকে কমে দাঁড়িয়েছে চার ভাগের এক ভাগ। পরিস্থিতি দিন কে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।

কর্মীদের রাখাই অসম্ভব হয়ে উঠেছে

মনোতোষবাবু বলছিলেন- ” হোটেলগুলিতে কাস্টমার নেই। বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ পর্যটক এই সময় আসতো তাদের আসাও এখন বন্ধ হয়ে আছে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু না হওয়ার জন্য। এমনিতে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত হল সিজন। সেখানে তিন মাস কেটে গেল। লোক নেই। কর্মীদের আর বসিয়ে রেখে টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। যেখানে ব্যবসাই বন্ধ হতে বসেছে সেখানে কর্মীদের রাখাই অসম্ভব হয়ে উঠেছে।” মনোতোষবাবুদের একটি গেস্ট হাউস ও একটি হোটেল আছে।সেখানেও আজ একই অবস্থা। তিনি বলছিলেন- পরিস্থিতি আজ এমন জায়গায় গেছে যে এসি রুম 500-600 টাকায় দিতে হচ্ছে। জানি না, এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি যে কোন জায়গায় পৌঁছবে কেউ তা জানে না।”

ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিস শিথিল হয়ে পড়েছে

হোটেল ব্যবসা মার খাওয়ার পিছনে বড় কারণ বাংলাদেশি পর্যটকদের আসা বন্ধ হয়ে যাওয়া। আর সেটা হয়েছে ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিস ক্রমেই শিথিল হয়ে পড়েছে। যেখানে আগে দিনে একাধিক বাস চলত সেখানে করোনা কালে আজ দিনে মাত্র একটি করে বাস চলছে। জানালেন মনোতোষবাবু। তিনি জানালেন- “এখন বাস সার্ভিস দিচ্ছে পাঁ-ছ’টা কোম্পানি সম্মিলিতভাবে। প্রতিটি কোম্পানির বাস ক্রমান্বয়ে এক দিন করে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই বাসেও যাত্রী সংখ্যা মেরেকেটে খুব বেশি হলে ৫০ জন হচ্ছে, এদের সকলেই চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসছেন। মাঝেমধ্যে যাত্রী সংখ্যা বাড়লে সেদিন অবশ্য দু’টি বাস দেওয়া হচ্ছে। তা না হলে ৩০-৩৫ জন যাত্রী হলে একটি বাসেই কাজ চালানো হচ্ছে। যে পাঁচটি কোম্পানি বাস সার্ভিস দিচ্ছে তারা হল- বিল লাইন, দেজ ট্রাভেলস, সোহাগ পরিবহন, রয়্যাল পরিবহন, সৌদিয়া ট্রাভেলস।”

টাফি’র চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি জানালেন এই কথা

টাফি’র চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি এই বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন। চিঠি লিখেছেন। অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন-” দেখুন আমরা এখন এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছি। সারা দেশেই কম-বেশি সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত।এখন আমাদের একটা লক্ষ্য, কিভাবে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে তা নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে বসে ঠিক করে নেওয়া। ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হলেই এই সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে। সেটা যত তাড়াতাড়ি হবে ততই মঙ্গল। তবেই আমরা কলকাতার এই হোটেল ব্যবসাকে বাঁচাতে পারবো। কলকাতার জন্যই কলকাতার হোটেল, রেস্টুরেন্ট ব্যবসাকে বাঁচাতে হবে।”

Published on: ডিসে ৩১, ২০২০ @ ১৯:১২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + 3 =