ফলাফল প্রকাশের পরদিন ‘ মানি না ‘ কবিতা লিখে নিজের মত ব্যক্ত করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Main দেশ রাজ্য লোকসভা ভোট 2019
শেয়ার করুন

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ প্রকাশ হয়ে গিয়েছে সপ্তদশ লোকসভা ভোটের ফলাফল। বিজেপি অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করেছে সারা দেশে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন- এই জয় মোদির জয় নয়, ভারতের জয়। এমনকি তিনি ১৩০ কোটি দেশবাসীকে ভগবান কৃষ্ণের মতো দেখেছেন। তিনি আরও বলেছেন- কোটি কোটি দেশবাসী এই ফকিরের ঝোলা পূর্ণ করেছে। অনেকেই তাঁর এই বিপুল জয়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু ফোনে কিংবা ট্যুইট করে তাঁকে অভিনন্দন জানাননি। এমনকী, তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসেও নিজের মত প্রকাশ করেননি। তবে ২৪ ঘণ্টা পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু নিজের ফেসবুক পেজে ‘মানি না’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখে নিজের ক্ষোভ-রাগ-দুঃখ-হতাশা যাই বলুন না কেন, তা প্রকাশ করেছেন।

কবিতার বিষয়বস্তু

একুশ লাইনের এই কবিতায় তিনি ৭৭টি শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেখানে তিনি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম, সহিষ্ণু, বিশ্বাস, টাকা, সহনশীলতা এমন অনেক শব্দ প্রয়োগ করেছেন। যেখানে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন- সাম্প্রদায়িকতার রঙ তিনি বিশ্বাস করেন না। মানবিকতার আলোকে আলোকিত ধর্মকেই তিনি বিশ্বাস করেন। গোটা কবিতাতে তিনি যে কথাগুলি লিখেছেন তাতে পরিষ্কার হয়েছে যে তিনি বিজেপির এই বিপুল জয়কে মেনে নিতে পারেননি। আর তাই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন কবিতার লাইনে- “সারা বিশ্ব একটাই দেশ তবে এ কি অঙ্ক? যার উগ্রতাই অভিলাষ”।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিজেপির এই জয় মেনে নিতে পারবেন না সেটা অনেকেই জানেন। যেভাবে সারা দেশের মধ্যে দৃঢ়তার সঙ্গে মোদি বিরোধিতায় সরব হয়ে প্রচার করে গিয়েছেন , যেভাবে একের পর এক মিটিং-এ মানুষকে বার্তা দিয়ে বলেছেন- ‘মোদি আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’ ‘এই এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রীকে আমি আমি মানি না।’ ‘২০১৯ বিজেপি ফিনিশ।’ ‘১৪২৬ বাংলায় ৪২-এ ৪২’-এমন আরও কত কী! কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা যে সব ব্যর্থ হয়ে গেল -তাঁর ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার সমীকরনও একেবারে হাওয়ায় মিশে গেল- সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর আর কী বা বলার থাকতে পারে! মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই হতাশা-রাগ-ক্ষোভ-দুঃখ-বেদনা থেকে তিনি কবিতার মাধ্যমে নিজের মত ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছেন।

ফেসবুক পেজে নানা প্রতিক্রিয়া

ফেসবুক পেজে তাঁর এই কবিতা প্রকাশ নিয়ে এক একজন এক এক রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। যাদের মধ্যে ক্ষোভের ভাবই বেশি ফুটে উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উগরে দিয়েছেন নিজেদের ক্ষোভ।

সহদেব গিরি নামে একজন লিখছেন- “চোখের সামনে দেখলাম পঞ্চায়েত ভোটের ভোট ডাকাতি।দেখলাম গরিবের আবাস যোজনার টাকা আপনার নেতারা প্রত্যেকে দু-তিনটে করে নিচ্ছে। আপনাদের এই দশা হবেনা তো কার হবে।”
“গরিবের হায় বিফলে না যায়।”

রাজকুমার সেনাপতি নামে আর একজন লিখছেন- “আমি একজন সাধারণ মানুষ
যদি আপনি বছর বছর SSC প্রাইমারি নিতেন, যদি বেকারদের কাজ দিতেন , শিল্প আনতেন , মুসলিম ধর্ম নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি না করতেন , নিচ লেবেল-এর নেতারা আজ যেন PM হয়ে গেছে, দলে ভালো কর্মী নিন। লেবার ডিপারমেন্ট-এর SLO দের বেতন চালু করুন । দেখুন আবার পশ্চিমবঙ্গ শান্ত হবে সব আগের মতো হবে এখনো সময় আছে । যদি কিছু খারাপ কথা বলি আমাকে ক্ষমা করবেন।”

সুবীর কর্মকার লিখছেন- “দিদি পাশে ছিলাম, পাশে থাকবো, তবে মনটা এখোনো সেই সৎ, সংগ্রামী, নির্ভিক ২০১১-১২ এর TMC তে টানে। সবাই হারে কষ্ট হয় না কিন্তু আপনার কষ্ট নেওয়া যায় না।”

শম্পা বিশ্বাস লিখছেন-“আবার কি নতুন করে স্কুলে ভর্তি হতে হবে এই কবিতার মানে উদ্ধার করার জন্য?”

পশ্চিম দিগন্ত লিখছেন-“Learn from Navin patnayek… always dedicated for his own state… stop ur drama of gathering opposition leaders. U can’t be ever a PM.”

পার্থ ভৌমিক নামে এক ব্যক্তি লিখছেন-” কবিতার সময় নয় এখন, পারলে দলে ভালো ভালো লোক নিন৷ সংগঠন চাঙ্গা করুন৷ আর দলে ক্ষমতা decentralised করুন৷ দল বড় হলে সব ডিসিসান আপনি একা নিতে গেলে ভুল বেশি হবে এটা মেনে নিন।”

সুজিত হুই লিখছেন- “দলনেত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কাছে আবেদন দলের সংগঠনটা শক্ত হাতে ধরুন। পুরানো কর্মীদের এবার যোগ্য সম্মান দিন। বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেস এর এই দুই নির্লোভ, সৎ ও দক্ষ সংগঠক -কে একটু গুরুত্ব দিন। কারণ এরা জীবন বাজি রেখে রাজনীতি করে। আর অন্যান্যদের মতো এরা টাকার লোভে তৃণমূল কংগ্রেস করে না।২০১১ এর ভাতার বিধানসভা নির্বাচনে মানগোবিন্দ অধিকারী-এর অবদান এবং ২০১৫ এর কাটোয়া পৌরসভা নির্বাচনে শান্তনু কোনার-এর অবদান নিশ্চয় আপনি ভুলে যাননি। তাই দয়া করে এই দুই মানুষকে বসিয়ে না রেখে সামনের সারিতে আনুন। দায়িত্বের ভার চাপিয়ে দিন এদের কাঁধের উপর। দেখুন সম্মানের সাথে সেই দায়িত্ব এরা পালন করবেই করবে।”

সাবির আহমেদ লিখছেন-” ধান্দাবাজদের দল থেকে তাড়ান। নিজে পারফেক্ট হন। যদি একা থাকেন তাও ভালো। পুরনো কর্মীদের ফিরিয়ে আনুন। অন্য দল থেকে ঢোকা বেনোজল বার করুন। বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল। ৫ বছর পর আর ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।”


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 6 = 1