পুজোর মুখে সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার একাধিক কর্মীর চাকরিতে কোপ, যার মধ্যে ১৩জনই ডিটিপি কর্মী

Main অর্থ ও বাণিজ্য এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকা থেকে তার ২৭ তম জন্মদিবস পালনের মাসেই একাধিক কর্মীর চাকরিতে পড়ল কোপ।

যার মধ্যে ১৩জনই ডিটিপি কর্মী।আছে সিস্টেম বিভাগ, সম্পাদকীয় বিভাগ, সার্কুলেশন বিভাগ সহ অন্যান্য আরও অনেক বিভাগ।

তবে কি এবার আরও অনেকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা আছে? এই প্রশ্নের জবাব কিন্তু মেলেনি।

২৪ আগস্ট ছিল তাদের সংবাদ প্রতিদিন-এ চাকরির সফরের শেষদিন।

 Published on: আগ ২৬, ২০১৯ @ ২২:৩২

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৬ আগস্ট: একদিন যারা বহু ত্যাগ স্বীকার করে তাদের প্রিয় সংবাদপত্রটির পিছনে সময় ব্যয় করে গেছেন, যাদের নিরলস পরিশ্রম ছাড়া কাগজটিকে সেইদিন দাঁড় করানো অসম্ভব ছিল- আজ কিনা তাদের উপরেই নেমে এল কর্মচ্যুত হওয়ার নির্মম খাড়া।কলকাতা থেকে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকা থেকে তার ২৭ তম জন্মদিবস পালনের মাসেই একাধিক কর্মীর চাকরিতে পড়ল কোপ যার মধ্যে ১৩জনই ডিটিপি কর্মী।সকলের মাথায় হাত।

মাথায় হাত ১৩জন ডিটিপি কর্মীর

সূত্রের খবর, অভিযোগ- সংবাদ প্রতিদিন কর্তৃপক্ষ খুব সুকৌশলে এই কর্মীদের ছেঁটে ফেলল। কিছুদিন আগে পত্রিকার ডিটিপি বিভাগে একটি নামের তালিকা আসে। যে তালিকায় ওই বিভাগের ১৩জন কর্মীর নাম ছিল। সেই নামের তালিকায় এমন অনেকেই ছিলেন যারা পত্রিকার জন্মলগ্ন কিংবা তার বছর কয়েক পর সময় থেকেই চাকরি করে আসছিলেন।যাদের মধ্যে এমন অনেক কর্মী আছেন খুবই অভিজ্ঞ।সেই তালিকা পাঠিয়ে বলা হয়- এদের সকলকেই স্বেচ্ছায় অবসর নিতে হবে। অর্থাৎ তাদের ইস্তফা পত্র লিখে দিতে হবে।সেখানে তাদের কি লিখতে হবে সেটাও কর্তৃপক্ষ ওই তালিকাভুক্ত কর্মীদের জানিয়ে দেয়- বলা ভাল কৌশলে ‘হুমকি’ দেয়।এমনটাই অভিযোগ। ২৪ আগস্ট ছিল তাদের সংবাদ প্রতিদিন-এ তাদের চাকরির সফরের শেষদিন।

কি লিখতে বলা হয় কর্মীদের

অভিযোগ- ‘ওই সমস্ত কর্মীকে পরিষ্কার নির্দেশ দেওয়া হয় যে “আপনারা লিখবেন- আমরা স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিলাম। আমাদের কোনও অভিযোগ নেই, বরং আমরা দুঃখিত যে আমরা কোম্পানিকে আর আমাদের সেবা দিতে পারলাম না।” এর আগে অবশ্য দু’একজনকে তারা নিজেদের লেখা এক বয়ানের নীচে সই করিয়ে নিচ্ছিলেন। যদিও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয় এই ভেবে যে এতে গোল বাধার সম্ভাবনা থাকতে পারে যে কোম্পানি জোর করে কর্মীদের সই করিয়ে ছাঁটাই করছে। শুধু ডিটিপি নয়, আছে সিস্টেম বিভাগ, সম্পাদকীয় বিভাগ, সার্কুলেশন বিভাগ সহ অন্যান্য আরও অনেক বিভাগ।

এর পর কি আরও অনেকের পিছনে খাড়া ঝুলছে

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে – তবে কি এবার আরও অনেকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা আছে? এই প্রশ্নের জবাব কিন্তু মেলেনি।এখন অনেকেই রীতিমতো ভয়ে কাজ করছে। চাকরিতে আসছেন। অভিযোগ- ‘এই সংবাদ প্রতিদিন-এর সঙ্গে ২০০০ সালের প্রতিদিনের আকাশ-পাতাল তফাত। তখন অফিস ছিল একটা পরিবারের মতো। আর এখন অফিস হয়েছে পক্ষপ্তাতিত্ব, তোষামোদ আর তাবেদারির জায়গা। এর সঙ্গে যারা নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে না তাদের দিতে হয় এমন খেসারত। ‘

সেদিনের সংবাদ প্রতিদিনের সেইদিনগুলি

1992 সালের   9ই আগস্ট জন্ম নিয়েছিল সংবাদ প্রতিদিন। ট্যাংরায় একটি অঞ্চলে পথ চলা শুরু হয়েছিল এই পত্রিকাটির। সেইসময় বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের প্রসার ছিল না। বাংলা পত্রিকা বলতে শোনা যেত আনন্দবাজার, আজকাল, বর্তমান পত্রিকার নাম। এর পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছিল রাজপথ, সোনার বাংলা, বঙ্গলোক-এর মতো কিছু দৈনিক সংবাদপত্র। পরবর্তীকালে তাও বন্ধ হয়ে গেছিল। সংবাদ প্রতিদিন তবু লড়াই চালিয়ে গেছিল সেদিনের দুঃসময়ে। অল্প টাকার বেতনে কর্মচারীদের রেখেছিল খুশিতে। পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রখ্যাত ব্যবসায়ী স্বপন সাধন বসু সেইসময় কর্মীদের সর্বদা রক্ষা করে গেছিলেন। তার সময়ই পত্রিকা লড়াই করে নামিদামি পত্রিকার মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছিল। এর পিছনে অবশ্যই সেই সময়কার কার্যনির্বাহী সম্পাদক প্রখ্যাত সাংবাদিক অঞ্জন বসুর অবদান অনেকখানি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও এক বিশিষ্ট সাংবাদিক কমল ভট্টাচার্য। ছিলেন জয়ন্ত চক্রবর্তীর মতো সাংবাদিকও। যিনি তাঁর জীবনের একটা বড় সময় দিয়ে গেছেন সংবাদ প্রতিদিনকে।কিছুদিন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে গেছিলেন আরও এক সাংবাদিক অভিজিৎ দাশগুপ্ত, ছিলেন জেলাবিভাগের দায়িত্বে নীলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যা্যের মতো বর্ষীয়ান সংবাদিকও। প্রতিদিন তখন আসলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে গেছে।

অবনমন শুরু

সারদা গ্রুপের সঙ্গে যেদিন থেকে সংবাদ প্রতিদিন গাঁটছড়া বাঁধে সেদিন থেকে প্রতিদিনের অবনমন শুরু। এমনই অভিযোগ সংবাদপত্র জগতে।পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক স্বপন সাধন বসু যাঁকে সকলে টুটু বসু নামে জানে তিনি একবার পত্রিকার জন্মদিনে বলেছিলেন- এই পত্রিকা হল তাঁর আরও এক সন্তান। অর্থাৎ আমার মোট তিন সন্তান। কিন্তু দুর্ভাগ্য- সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার সেই সমস্ত কর্মীদের যাদের আজ চাকরি হারাতে হল। যদিও লিখিত বা নিয়ম অনুযায়ী বলতে গেলে বলতে হবে তাঁরা ‘স্বেচ্ছায় ইস্তফা’ বলুন ‘অবসর’ বলুন নিলেন।আজ পত্রিকার সার্কুলেশনও খুব ভালো জায়গায় নেই। পত্রিকার নিজস্ব উইকিপেডিয়া অনুযায়ী- সার্কুলেশন 2,60, 310 প্রতিদিন (জানুয়ারি-জুন 2016) । আমরা জানি না এই মুহূর্তে সার্কুলেশন বেড়েছে না কমেছে। তারা লাভে চলছে না ক্ষতিতে। তবে খুব বেশি লাভ যে তারা করছে না তা কিন্তু এই কর্মী সঙ্কোচনের মধ্যে দিয়েই পরিষ্কার হয়ে গেছে। এমনটাই বলছে সূত্র।পত্রিকাটিতে এরপর অঞ্জন বসুর পরবর্তী সময়ে ‘পড়তে হয় নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়’ সংবাদপত্র থেকে বড় বড় নাম বলা যেতে সেই পত্রিকার ‘ছাপ’ মারা কয়েকজন ‘স্ব-ঘোষিত বোদ্ধা’ সাংবাদিক সংবাদ প্রতিদিন-এ যোগ দিলেও তারা যে নিজেদের উদর পূর্তি করা ছাড়া পত্রিকার প্রসারের কাজে নিষ্কর্মা প্রমাণিত হয়েছেন তা কিন্তু আজ নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

Published on: আগ ২৬, ২০১৯ @ ২২:৩২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 13 =