‘পাপ্পু’ থেকে ‘পরম পূজ্য’-যুবশক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সফল রাহুল গান্ধী

উত্তর সম্পাদকীয় দেশ
শেয়ার করুন

অনিরুদ্ধ পাল

Published on: ডিসে ১২, ২০১৮ @ ১৭:৪৩

এসপিটি নিউজ, ১২ ডিসেম্বরঃ একদিন তাঁকে টিপ্পনি শুনতে হয়েছিল। ভরা সংসদে ‘পাপ্পু’ বলে ব্যঙ্গ করতেও ছাড়েননি বিজেপি নেতারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত তাঁকে উদ্দেশ্য করে অনেক কথা বলেছেন। হেয় করেছেন। তবু তিনি এতটুকু হতাশ হননি। হাল ছাড়েননি। নিজের পায়ের উপর ভর দিয়ে কারও সাহায্য ছাড়াই প্রবল শক্তিশালী কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। ২০১৪ সালে যে বিপর্যয় কাঁধে নিয়ে মাথা নত করতে হয়েছিল প্রায় পাঁচ বছর বাদে সেই রাহুল গান্ধী নতুন ভাবে যুবশক্তির এক সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সফল হলেন। এখন তিনি বলতেই পারেন-“এভাবেও ফিরে আসা যায়।”

সত্যি এ যেন এক সেলুলয়েডের পর্দার কাহিনি যা বাস্তবের আকারে সকলের সামনে আত্মপ্রকাশ করেছে। একদিন যারা তাকে ‘পাপ্পু’ বলে ব্যঙ্গ করতেও ছাড়েননি যারা এমন একটা ভাব দেখিয়েছিল যে ধুর! রাহুল গান্ধী আবার নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কি লড়বে!আগে নিজে ভালভাবে বক্তৃতা দেওয়া শিখুক। তারপর তো রাজনীতি করতে আসবে। তারা একদম ঠিক বলেছিলেন। আর সেটা বলছেন রাহুল গান্ধী স্বয়ং।কি বলেছেন জানেন?

গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে এসে রাজীব-সোনিয়ার পুত্র ইন্দিরা গান্ধীর নাতি রাহুল গান্ধী একেবারে তাঁর পারিবারিক শিষ্টাচার, ভদ্রতা, সৌজন্যবোধের চূড়ান্ত ভাব প্রদশর্ন করে বলেন-” হ্যা, আমি শিখেছি। ২০১৪ সালের হার থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, কিভাবে নিজেকে তৈরি করে এগিয়ে যেতে হয় এসব কিছু আমি নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে শিখেছি। এজন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। সেদিন যদি তিনি আমাকে ওভাবে না বলতেন আমি কিছুই শিখতে পারতাম না।তাই তো আমি আজ শিখেছি কিভাবে বিজেপিকে পরাস্ত করতে হয়। তাই তো আজ রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস বিজেপিকে পরাজিত করতে সফল হয়েছে।”

তিনি যে এখন আগের চেয়ে আরও অনেক পরিণত হয়ে উঠেছেন তার পরিচয়ও দিয়েছেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে। তিনি সরাসরি বলেন-“কাউকে নিঃশেষ করে দেওয়াটা কংগ্রেসের কাজ নয়। কংগ্রেস কখনও এসব করে না। এসব করে আর এসব কথা বলে বিজেপি। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে শিখেছি। এটাই আমাদের পরম্পরা। এটাই আমাদের শিক্ষা। এটাই আমাদের সংস্কৃতি।”

যারা ভেবেছিল বিজেপির পরাজয়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী আরও অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত হবেন তাদের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলবেন তা যে হবার নয়ে সেটাও বুঝিয়ে দেন রাজীব-সোনিয়া পুত্র। রাহুল বলেন-রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশে যাঁরা এতদিন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তাঁদের সম্মান জানিয়ে একটা কথা জানিয়ে রাখি যে কংগ্রেস তাদের সম্মান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁরা যে কাজ হাতে নিয়েছিলেন কংগ্রেস সেই কাজ সম্পূর্ণ করবে।একই সঙ্গে তিনি মিজোরাম ও তেলেঙ্গানা যেখানে তারা হেরেছেন সেই দুটি রাজ্যের জয়ী দলকেও অভিনন্দন জানান সাদরে। একবারের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনও কঠিন বাক্য উচ্চারন করতে দেখা যায়নি কংগ্রেসের এই তরুন নেতাকে।

একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গেছে গতকালের পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফলাফলে। দুটি রাজ্যে কংগ্রেস কিছু করতে না পারলেও যেভাবে মোদির খুব কাছের তিন রাজ্য বলা যেতে পারে গো-বলয়ের তিন শক্তিশালী রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে বিজেপিকে কংগ্রেস একেবারে ওয়াশ আউট করে ৩-০ ব্যবধানে জয় হাসিল করে নিল তা নিয়ে কিন্তু ঘুম ছুটে গেছে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের। যেভাবে এই পাঁচ রাজ্যে বিজেপির তাবড় তাবড় নেতারা একের পর এক সভা করে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছেন সেখানে একা রাহুল গান্ধীর বুক চিতিয়ে মনে সাহস আর অদম্য জেদ রেখে গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন তা এক কথায় অবিশ্বাস্য।

মোদির ‘পাপ্পু’ যে তাই কখন রাজনীতিতে পরিণত হয়ে গেছেন সেকথা খেয়াল করেননি বিজেপি নেতৃত্ব। কচ্ছপকে হেয় করার কি ফল হতে পারে তা যেমন জেনেছিল খরগোশ ঠিক তেমনই কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভার ভোটের আগে মোদির ‘পাপ্পু’ কিন্তু বিজেপিকে একটা চরম শিক্ষা দিয়ে গেল পাঁচ রাজ্যের এই বিধানসভা ভোটের ফলাফলে।

আর সেটা অকপটেই স্বীকার করে নিয়েছেন মহারাষ্ট্র নবনির্মান সমিতির নেতা রাজ ঠাকরে। রাজ ঠাকরে বলেন-কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে যারা ‘পাপ্পু’ বলে ডাকত, তিনি আজ ‘পরম পূজ্য’ হয়ে গিয়েছেন। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপির অন্দরে তোলপাড় হতে শুরু করেছে।রাজ বলেন- গুজরাট নির্বাচনে রাহুল গান্ধী একলা ছিলেন। এখন ‘পাপ্পু’ ‘পরম পূজ্য’ হয়ে গিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্ব গোটা দেশে স্বীকৃত হতে চলেছে।

ইতিমধ্যে দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে বৈঠকও করেছেন। যদিও সেখানে নেতা নির্বাচন নিয়ে কারও কারও মধ্যে সংশয় থাকলেও এখন যে সেই প্রশ্নে অনেকটাই এগিয়ে রইলেন রাহুল গান্ধী তা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না।

Published on: ডিসে ১২, ২০১৮ @ ১৭:৪৩


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − = 9