পশ্চিমবঙ্গঃ মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের দফতরে টাফি’কে নিয়ে অ্যাসোচাম প্রতিনিধিরা, দিলেন ‘সেফ ট্যুরিজমে’র প্রস্তাব

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: সেপ্টে ২৩, ২০২১ @ ২১:০৬
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৩ সেপ্টেম্বর:   দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী, ঐতিহ্যমন্ডিত, বৈভবশালী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। পর্যটনের এত রসদ থাকা সত্ত্বেও সারা দেশের মধ্যে এই রাজ্য পর্যটনে সেভাবে এখনও মাথা তুলতে পারেনি। রাজ্য সরকার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখেনি। এবার সেই কর্মযজ্ঞে এগিয়ে এল অ্যাসোচাম। গতকাল বুধবার অ্যাসোচাম-এর এক প্রতিনিধি দল টাফি’র চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবিকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যের পর্যটমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে দেখা করেন।অ্যাসোচামের পক্ষে মধুশ্রী দ্বৈতারি জানিয়েছেন, পর্যটনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে।এই কাজে তিনি আমাদের সবরকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

অ্যাসোচামের পক্ষে মধুশ্রী দ্বৈতারি জানিয়েছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা

অ্যাসোচাম পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছে ১২ পাতার পর্যটন বিষয়ক একটি প্রস্তাবনা পেশ করেন। যেখানে রাজ্যের পর্যটনের যে বিপুল সম্ভাবনা আছে তা কিভাবে বাস্তবায়িত করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে একটা পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।এই প্রসঙ্গে সংবাদ প্রভাকর টাইমসকে একান্ত সাক্ষাৎকারে মধুশ্রী দ্বৈতারি জানিয়েছেন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা।

মধুশ্রী দ্বৈতারি বলেন- “আমরা পর্যটন সংক্রান্ত বেশ বড় একটা ওয়েবমিনার করব, সেখানে পর্যটন সংক্রান্ত যত অর্গানাইজেশন আছে, প্রতিষ্ঠান আছে তাদের ডাকা হবে। সমস্ত চেম্বার অব কমার্স আছে তাদের ডাকা হবে। বিদেশের চেম্বার অব কমার্সদের ডাকা হবে। আসলে আমাদের বাংলায় যে এত সম্পদ পড়ে আছে সেটাকে নিয়ে পর্যটনের প্রসারে সাধারণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।”

“মন্ত্রী নিজেও আমাদের সঙ্গে সহমত হয়েছেন, এ ব্যাপারে যতটা সম্ভব পাবলিসিটি করতে হবে। অ্যাসোচামের মাধ্যমেই একটা ওয়েবমিনার হবে। অ্যাসোচাম একটা সরকারি ভয়েস। আমরা চাইছি এই ওয়েবমিনারটাকে বিদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করতে, যাতে করে এটি আরও বেশি গুরুত্ব পায় এবং প্রচারের আলোয় উঠে আসে। আমাদের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনকে প্রচারের আলোয় তুলে আনা। যার ফলে অনেক বেশি ট্রাভেলারও পাওয়া যাবে, পশ্চিমবঙ্গে ডিজাইন করতে আসবার জন্য।”

“এখানে কত প্যাকেজ আছে, যা আমরা জানিই না। হিমালয়ান প্যাকেজ, হেরিটেজ প্যাকেজ, রিলিজিয়াস প্যাকেজ, ফরেস্ট এন্ড ইকো সিস্টেম প্যাকেজ, বিশেষ করে মেডিক্যাল প্যাকেজ, টি প্যাকেজ, আয়ুর্বেদা প্যাকেজ।কেরালার মতো এখানে একটা সুযোগ আছে।”

“আর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল টি ট্যুরিজম। চা-বাগান নিয়ে পর্যটনের বিরাট সুযোগ আছ। অথচ এটা নিয়ে কিছুই করতে পারছে না। এসব শুনে মন্ত্রী বলেছেন- আমরা আপনাদের সব রকমের সাহায্য দেব। আমাদের এই ওয়েবমিনার জানুয়ারির একেবারে প্রথম দিকে আয়োজন করব। তবে এর মধ্যেই আমাদের রিসার্চ ওয়ার্ক শুরু করে দিচ্ছি।” জানালেন মধুশ্রী দ্বৈতারি।

‘অনিল পাঞ্জাবি একজন ট্যুরিজম এক্সপার্ট’

অ্যাসোচামের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন টাফি’র চেয়ারম্যান(পূর্বাঞ্চল)অনিল পাঞ্জাবি।এই প্রসঙ্গে মধুশ্রী দ্বৈতারি বলেন-  “আমাদের সঙ্গে আমরা টাফি’র অনিল পাঞ্জাবিকে নিয়ে গিয়েছিলাম। উনি তো ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। আমরা ওনাকে সঙ্গে রেখেছি। উনি একজন ট্যুরিজম এক্সপার্ট। উনি মন্ত্রীর কাছে একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন।উনি বললেন- অনেক দেশ আছে যাদের কিছুই নেই অথচ তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ট্যুরিস্ট পায়। সেখানে আমরা কেন পাব না।”

টাফি’র চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি পর্যটনমন্ত্রীর কাছে রাখলেন এই প্রস্তাব

টাফি’র চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি বলেন-” পর্যটন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। একটা সেফ ট্যুরিজমের জন্য প্রপোজাল দেওয়া হয়েছে। আলোচনা হয়েছে সেটা কিভাবে প্রমোট করা যায়। মন্ত্রী খুব মন দিয়ে শুনেছেন। তিনি বিষয়টিকে সমর্থন করেছেন। বলেছেন, সরকার থেকে সব রকমের সাহায্য করা হবে। অনেক প্রপোজাল দেওয়া হয়েছে। বাংলায় তো অনেক হোটেল আছে। মন্ত্রীও জানিয়েছেন যে আপনারা লোকজনকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করান। এখানে কি আছে। কত দেখার জায়গা আছে। এসব সম্পর্কে আগে পরিচিত করান। এখানে আমাদের যে সংস্কৃতি, হেরিটেজ আছে সেসম্পর্কে পরিচিত করান।”

“সেই সঙ্গে মন্ত্রীকে আমি টাফি’র পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাব দিয়েছি – বলেছি, সারা দেশে ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’র যে ১২০০ সদস্য আছে সেই মতো আমাদের রাজ্য যদি প্রতিটি রাজ্য থেকে পাঁচজন করে প্রতিনিধিকে এখানে পর্যটন কেন্দ্রগুলি ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করা যায় তাহলে তারা ফিরে গিয়ে আমাদের রাজ্যের পর্যটনের প্যাকেজ বিক্রি করবে। লাভবান হবে রাজ্য। মন্ত্রী শুনেছেন এই প্রস্তাব, দেখা যাক কী হয়!”

ভারতে পর্যটনের পটভূমি

অ্যসোচাম তাদের প্রপোজালে পটভূমি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছে। সেখানে তারা লিখেছে-

  • ভারত ভ্রমণ এবং পর্যটনের জন্য একটি বড় বাজার। এটি বিশেষ পর্যটন পণ্যের একটি বিচিত্র পোর্টফোলিও প্রদান করে – ক্রুজ, অ্যাডভেঞ্চার, চিকিৎসা, সুস্থতা, খেলাধুলা, মাইস, ইকো -ট্যুরিজম, চলচ্চিত্র, গ্রামীণ এবং ধর্মীয় পর্যটন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য ভারত আধ্যাত্মিক পর্যটনের গন্তব্য হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
  • ভারতে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্প দেশের জিডিপির ৯.২% এবং জনসংখ্যার ৮.১% কর্মসংস্থান করে, ফরেক্সে আমাদের মোট অবদান প্রায় ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাতির অর্থনৈতিক সুস্থতার জন্য শিল্পের গুরুত্বকে জোর দেওয়া যায় না কারণ এটি জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশকে কর্মসংস্থান এবং জীবিকা প্রদান করে।
  • ২০১৯ সালে, ভারতে বিদেশী পর্যটক আগমন ছিল  ১০.৮৯ মিলিয়ন, যা ৩.২০% y-o-y বৃদ্ধির হার অর্জন করেছিল। ২০১৯এর সময়, পর্যটন থেকে ৪.৮% y-o-y বেড়ে ১, ৯৪,৮৮১ কোটি হয়েছে। ২০১৯ সালে, ই-ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে আগমন ২৩.৬% y-o-y বেড়ে ২.৯ মিলিয়ন হয়েছে। হোটেল এবং পর্যটন খাত ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে মার্চ ২০২০ এর মধ্যে ১৫.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এফডিআই প্রবাহ পেয়েছে।
  • কোভিড মহামারী দেশের আতিথেয়তা শিল্পকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং এই বিষয়ে সকল স্টেকহোল্ডারদের একসাথে হাত মিলানো গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে, কোভিড-19 বিশ্বব্যাপী পর্যটন খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল।
  • ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি) অনুমান করে যে ২০১৯ থেকে চাকরির ক্ষতির পরিমান ৩০% থেকে ৬০% পর্যন্ত হবে এবং ভ্রমণ ও পর্যটন দ্বারা জিডিপি অবদান ৬২% পর্যন্ত হবে কারণ ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিভিন্ন দেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত পদক্ষেপগুলি এর কারণ। ১০০ মিলিয়নেরও বেশি চাকরি এবং ১৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতিতে এশিয়ার বাজারে প্রভাবও উল্লেখযোগ্য।

অ্যাসোচাম রাজ্য পর্যটন দফতরের সঙ্গে অংশীদারিত্বের একটি কর্মসূচির প্রস্তাব

পরিবর্তিত ব্যবসায়িক পরিস্থিতি বিবেচনা করে,  অ্যাসোচাম রাজ্য পর্যটন দফতরের সঙ্গে অংশীদারিত্বের একটি কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছে। মূল উদ্দেশ্য হল রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় স্তরে সরকার, শিল্পের বড় বড় ব্যাক্তিত্ব এবং পর্যটন খাতের অন্যান্য অংশীদারদের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য-

১)নিরাপদ ট্যুরিজম এবং সেক্টরের মুখোমুখি মূল চ্যালেঞ্জগুলি বোঝা,

২) দেশীয় পর্যটন খাতের পুনরুজ্জীবনের জন্য নির্দিষ্ট সুপারিশ চিহ্নিত করন,

৩) ভারতে অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি স্বল্প-মধ্যমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।

এই কর্মসূচিতে নিরাপদ পর্যটন প্রচারমূলক কার্যক্রম, ইকো-ট্যুরিজমের সঙ্গে গ্রামীণ উন্নয়ন, সেবা বৃদ্ধি এবং গার্হস্থ্য ব্যবহারের জন্য যুবসমাজকে দক্ষ করা, টেকসই পর্যটন ইত্যাদির উপরও নজর দেওয়া হবে।

নিরাপদ পর্যটন এবং ফোকাস এলাকায় প্রচার

পর্যটনে আস্থা ফিরিয়ে আনা

ভ্রমণকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ভ্রমণকারীদের আত্মবিশ্বাস চলে যাওয়া অবশেষে চাহিদা হ্রাস করেছে এবং উল্লেখযোগ্য সময়ের মধ্যে পর্যটন খরচকে প্রভাবিত করেছে। আরও সুবিধাজনক ভ্রমণের জন্য প্রযুক্তি এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করা ব্যবধানটি পূরণ করতে পারে।

কঠোর নিরাপত্তা বিধি এবং সামাজিক দূরত্বের দিকে মনোযোগ দেওয়া

ভ্রমণকারীদের আচরণও সেক্টরটি কীভাবে অভিযোজিত হয় তা নতুন আকার দেবে। এর মধ্যে থাকবে নতুন কুলুঙ্গি বাজার বিভাগের উদ্ভব, নিরাপত্তা প্রোটোকল এবং যোগাযোগহীন পর্যটন অভিজ্ঞতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা।

অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে উৎসাহিত করা

গার্হস্থ্য পর্যটন অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে যদি মানুষ তার নিজের দেশে স্থানীয়ভাবে ভ্রমণ করতে পছন্দ করে।

নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যবিধি

নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যবিধি ভ্রমণকারীদের গন্তব্য নির্বাচন এবং তাদের ভ্রমণের পরিকল্পনা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। ভ্রমণকারীরা সম্ভবত ‘কাস্টমাইজড সমাধান’ পছন্দ করবে এবং বড় জমায়েত এড়াবে।

লিভারেজিং প্রযুক্তি

পর্যটন পরিষেবায় ডিজিটাইজেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাঘাতকারী যা এই সংকটে উদ্ভূত হয়েছে। টাচলেস সার্ভিস ডেলিভারি এবং কন্টাক্টলেস পেমেন্ট এবং সেবার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করা মহামারী-পরবর্তী সময়েও বহাল থাকতে পারে।

Published on: সেপ্টে ২৩, ২০২১ @ ২১:০৬


শেয়ার করুন