রয়্যাল বেঙ্গল কি লালগড়ের জঙ্গলেই না অন্য কোনও পথে পা বাড়িয়েছে, খতিয়ে দেখছে বন দফতর, জারি সতর্কতাও

দেশ বন্যপ্রাণ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল                  

Published on: মার্চ ৪, ২০১৮ @ ১৪:২৩

এসপিটি নিউজ, লালগড়, ৪ মার্চঃ ঘড়ির কাঁটা ঘুরে চলেছে। বয়ে চলেছে সময়ও। খাঁচার ভিতর বন্দি হয়ে ছাগলটিও সমানে চেঁচিয়ে চলেছে। কিন্তু যার জন্য এত আয়োজন কোথায় তিনি। তার যে দেখাই নেই। সুন্দরবন থেকে অভিজ্ঞ বনকর্মীদের নিয়ে আসা হয়েছে। লক্ষ্য একটাই লালগড়ের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো মস্ত বড় রয়্যাল বেঙ্গলটিকে খাঁচা বন্দি করা। কিন্তু তিনি যে আরও বেশি সতর্ক। খাঁচা পাতার পর ২৪ ঘণ্টা অতিক্রম করে গেলেও বাঘটির টিকিও আর দেখা যায়নি। বনকর্মীরা হত্যে দিয়ে বসে থাকলেও তিনি বড্ড নিরাশ করেছেন। এখন বাঘের অবস্থানও জানতা পারছে না বনকর্মীরা। মনে করা হচ্ছে সুন্দরবন থেকে আরও অভিজ্ঞ বন কর্মীদের নিয়ে আসা হতে পারে। আনা হতে পারে আরও বেশ কয়েকটি খাঁচা। আর এই বাঘটি ধরা না পড়ায় লালগড়ের বাসিন্দাদের সব কাজকর্ম এখন শিকেয় উঠেছে।

শনিবারই সুন্দরবন থেকে আসে তিনটি খাঁচা।এসেছেন বাঘ ধরায় অভিজ্ঞ মোট সাতজন বনকর্মীও। আয়োজনে কোনও ঘাটতি নেই। এতসবের পরও কিন্তু রবিবার দুপুর পর্যন্ত মিলল না তার দেখা। লালগড়ের জঙ্গলে বসানো ফাঁদ ক্যামেরার সাতটির একটিতেও ধরা পড়ল না তার ছবিও। স্বভাবতই হতাশ বন দফতর। বাড়ছে দুশ্চিন্তাও। কারণ, বাঘটি যতক্ষণ পর্যন্ত ধরা না পড়ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বন দফতর  এবং স্থানীয় গ্রামবাসী কেউই স্বস্তি পাচ্ছেন না।কখন যে কিভাবে বাঘটি কোথায় গিয়ে হামলে পড়ে তা নিয়ে বেশ উদ্বেগে সকলেই।

বন দফতরের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশে লালগড়ের জঙ্গলে থাকা পূর্ণ বয়স্ক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটিকে খাঁচা বন্দি করতে শনিবার সুন্দরবন থেকে সাতজনের এক প্রতিনিধি দল এসে পৌঁছয়। সেই দলে আছে সুন্দরবন টাইগার রেঞ্জের দুইজন ও ঝড়খালি মাতলা রেঞ্জের পাঁচজন।তারা নিয়ে এসেছে তিনটি খাঁচা।

শনিবার সকালে মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহার নেতৃত্বে সুন্দরবন থেকে আসা বাঘ ধরার কাজে অভিজ্ঞ সাতজন বনকর্মীকে নিয়ে মেলখেড়িয়ার জঙ্গলে চলে যান। সেখানে গিয়ে তারা খাঁচা তিনটিকে বসানোর জায়গা বেছে নেয়। অভিজ্ঞ বনকর্মীদের পরামর্শ মেনেই জঙ্গলের যে যে জায়গায় বাঘের বিচরন ক্ষেত্র বলে মনে করা হচ্ছে ঠিক তেমনই তিনটি জায়গায় খাঁচা তিনটিকে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।কিন্তু এখন বনকর্মীরা মনে করছেন, বাঘটি তার বিপদ বুঝে নিজের অবস্থান বদলে ফেলেছে। সে কোঠায় যেতে পারে সেটাও অনুমান করতে হিমশিম খাচ্ছে বাঘ ধরার কাজে অভিজ্ঞ সুন্দরবনের বনকর্মীরা।

খাঁচার ভিতর ছাগলকে টোপ হিসেবে রাখা হয়েছে। এই ছাগলের মাংসের লোভে খাঁচার ভিতর এলেই বন্দি হয়ে যাবে বাঘটি বলেই মনে করছে বন কর্মীরা। ঝড়খালি মাতলা রেঞ্জের থেকে আসা অভিজ্ঞ বনকর্মী পরেশ চন্দ্র কুলু বলেন, বাঘটিকে খাঁচায় বন্দি করতে টোপ হিসেবে ছাগলের মাংস দেওয়া হয়েছে। বাঘটি জঙ্গলের যে জায়গায় রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে সেই জায়গাতেই খাঁচাগুলি পাতা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে সুন্দরবন থেকে আরও খাঁচা নিয়ে আসা হবে। দু’একদিনের মধ্যে যদি বাঘটি ধরা না পড়ে তাহলে সুন্দরবন থেকে বাঘ ধরার কাজে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বন কর্মীদের নিয়ে আসা হবে বলেও তিনি জানান।

এখনও বাঘটিকে খাঁচা বন্দি করা সম্ভব হয়নি।রয়্যাল বেঙ্গল ঘুরছে কিন্তু তার নিজের মেজাজেই। এদিকে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মানুষদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বন দফতর ব্যবস্থা নিয়েছে। লোকালয়ে নজর রাখা হচ্ছে যাতে বাঘটি কোনওভাবে ঢুকে পড়ে কারও উপর আক্রমণ করতে না পারে।

এদিনও মাইকিং করে গ্রামের মানুষদের সতর্ক করা হয়েছে। দিনের বেলায় ঘর থেকে বেরোলে এক সঙ্গে যেন ১০ থেকে ১২জন মিলে জোরে জোরে আওয়াজ করে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। রাতে যেন বাড়ি থেকে কেউ না বের হন। সব মিলিয়ে লালগড়ে রয়্যাল বেঙ্গল আতঙ্ক মানুষকে বেশ বিপাকে ফেলে দিয়েছে।

Published on: মার্চ ৪, ২০১৮ @ ১৪:২৩


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 77 = 83