নিজের আবির্ভাব দিবসে ইন্টারন্যাশনাল বেদান্ত সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা তুলে ধরলেন দুই বিজ্ঞানের কথা

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জানু ৪, ২০২৩ @ ০১:১৫
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৩ ডিসেম্বর: বেদান্ত নিয়ে তাঁর উৎসাহ দীর্ঘদিনের। এই নিয়ে পড়াশুনো, চর্চা সবই তিনি আজও করে চলেছেন।মানুষ, সমাজ, আজকের সময় এসব কিছুই তাঁকে ভাবায় প্রতি মুহূর্তে। কষ্টও পান সব কিছু দেখে। তবু তিনি বিশ্বাস করেন এসব কেটে গিয়ে পৃথিবীতে আবার শান্তি ফিরে আসবে।মানুষ একে অপরকে কাছে টেনে নেবে। তিনি হলেন ইন্টারন্যাশনাল বেদান্ত সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ ও উপাস্য শ্রীশ্রী ভগবান।এই নামেই তিনি ভক্ত ও শিষ্যদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তিনি মনে করেন বিশ্বাসও করেন- ‘মানুষই ঈশ্বর’। আজ কলকাতায় সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে তাঁর ৮২তম আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে ভক্তদের উদ্দেশ্যে অমৃতবাণী দিতে গিয়ে এমন অনেক কথাই বললেন তিনি।

১২ মিনিটের ছোট্ট ভাষণে যা বললেন

১২ মিনিটের ছোট্ট ভাষণে শ্রীশ্রী ভগবান কখনও মা সারদা, কখনও ভগবান বুদ্ধদেব আবার কখনও রাজার প্রসঙ্গ টেনে এনে উপস্থিত ভক্ত-শিষ্যদের বোঝাতে চেয়েছেন ধর্ম-ধর্ম করে চেঁচালেই ধর্ম হয় না। এজন্য মনে-প্রাণে তাঁকে উপলব্ধি করতে হবে। তাকে বুঝতে হবে। আর তাকে নিজেদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ঘটাতে হবে। তবেই হবে ধর্ম।

দুটোই বিজ্ঞান

শুরুতেই তিনি বলেন- আজ সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে এত মানুষ আমার জন্য এসেছে দেখে আমার খুবই ভালো লাগছে।এত মানুষ যে এখানে এসেছেন তা সত্যি একটা ভালো দিক। আজ এই বিজ্ঞান নগরীতে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে। আজকের দিনে বিজ্ঞান অবশ্যই দরকার।এটাও একটা বিজ্ঞান। আজ এখানে যা হচ্ছে তাও একটা বিজ্ঞান। বর্হি্বিজ্ঞানের পাশাপাশি অন্তর্বিজ্ঞানেরও প্রয়োজন আছে। আমি নিজেও দুটো বিজ্ঞানকে মেনে চলি। দুটোরই দরকার আছে। একটা বাদ দিয়ে আর একটা সম্ভব নয়।

বুদ্ধের কথা

এই যে চারিদিকে আজ এত সমস্যা এত অপরাধ এত অরাজকতা। খুন, ডাকাতি, আরও কত খারাপ অপরাধ ঘটছে। এর শেষ হবে কিভাবে? এই প্রসঙ্গে ভগবান বুদ্ধদেবের একটা কথা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বুদ্ধ বলেছিলেন – পাপ বাড়তে দাও। বাড়তে বাড়তে সে নিজেই একদিন ধ্বংস হবে। তাই আজ যেভাবে পাপ কাজ হচ্ছে, অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে চলেছ্‌ এসব একদিন নিজে থেকেই নির্মূল হয়ে যাবে। কাউকে লাগবে না। পাপ বাড়তে বাড়তে  নিজে থেকেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

ওটা তো সারদা মায়ের কথা

আজ মানুষের মধ্যে একাত্মতা, একে অপরকে সাহায্য করা, আপন করে নেওয়ার বড়ই অভাব দেখা দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রী ভগবান নিজের জীবনের একটি অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ টেনে আনেন।তিনি উপস্থিত সকলের সঙ্গে সেটা ভাগ করে নেন। বলেন-“আমি একবার আমার এক ডাক্তার বন্ধুর বাড়ি গেছিলাম। তাঁর দুই মেয়ে- একজনের বয়স পাঁচ বছর এবং আর একজনের বয়স আট বছর। দুই কন্যা সন্তানকে দেখিয়ে আমার দাক্তার বন্ধুটি বলতে থাকেন- এরা দু’জনেই সারাদা মা-এর উপর অনেক কিছু জানে। আপনি জিজ্ঞাসা করুন বলে দেবে। আমি তখন সারাদা মায়ের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই পাঁচ বছরের মেয়েটি গড়গড়িয়ে সারদা মায়ের সম্পর্কে অনেক কথা বলে। পুরোটাই ছিল একেবারে মুখস্তের মতো। যেন বই থেকে মুখস্ত করে বলছে। সে বলে যে সারাদা মা সকলকে আপন করে নিতে বলেছেন।তার বলা শেষ হতেই মেয়েটি তার বাবার কোলে গিয়ে বসে পরে। আমি তখন মেয়েটিকে বলি- তুমি কেন বাবার কাছে গিয়ে বসলে? আমার কাছে কেন এলে না। এই তো তুমি বললে যে সবাইকে আপন করে নিতে হয়। আমার কথা শুনে মেয়েটি লাফিয়ে বলে ওঠে- কই আমি তো বলি নি। ওটা তো সারদা মায়ের কথা। “

আদতে আমরা কিছুই জানি না কিংবা শিখিনি

এই প্রসঙ্গ টেনে শ্রীশ্রী ভগবান বলে চলেন- এই হল এখনকার অবস্থা। আমরা বই পড়ে, কারও কথা নিজের মুখে বলে দেখাতে চাই যে আমি কত জেনে গেছি। কিন্তু আদতে আমরা কিছুই জানি না কিংবা শিখিনি। সবটাই মুখস্থ। এসব আমরা কখনোই নিজের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি না। আমরা আজ বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে অনেক কাজ করছি। অনেক জায়গার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করছি। কিন্তু আমরা নিজের প্রতিবেশীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি না। মানুষকে আপন করে নিতে পারছি না। আমজাদকে আপন করে নিতে পারি না। মা সারদা পেরেছিলেন আপন করে নিতে আর আমরা পারছি না। আমরা আমজাদদের নিজের ঘরে আনতে পারবো না। মানুষকে ভালোবাসা, আপন করে নেওয়াই হল আসল ধর্ম। ধুপ-ধুনো দিয়ে পুজো করা তো একটা দেখানোর বিষয়।

এমন একজন শিশুকে দরকার, যে বলতে পারবে ‘রাজা নেংটো’

এক রাজা খুব সুন্দর পোশাক পরেছে। এসে বলছে- দেখো তো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে। জবাবে সেই প্রজা বললেন- ভালোই দেখাচ্ছে। তখন রাজা বললেন- তাহলে তুমি বললে না কেন। জবাবে প্রজা বলে ওঠে – আজ্ঞে, রাজামশাই আপনাকে কিভাবে বলি কথাটা। একটি শিশু এসে দেখে রাজার গায়ে পোশাক নেই। তাই দেখে শাইশু বলে ওঠে – ‘রাজা নেংটো’, ‘রাজা নেংটো’। আজ এমনই পরিস্থিতি হয়েছে যে এমন একজন শিশুকে দরকার, যে কিনা বলতে পারবে ‘রাজা নেংটো’।আমি তো আর বলতে পারবো না, কারণ আমার তো বয়স হয়েছে। দরকার সেইরকম একজন শিশুকে।

সমাজ আজ দিশাহীন

আসলে তিনি বর্তমান সমাজ, মানুষ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করেন। একই সঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে সংবাদ প্রভাকর টাইমস ইন্টারন্যাশনাল বেদান্ত সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ শ্রীশ্রী ভগবান-এর কাছে জানতে চায় – তাহলে আপনি কি মনে করেন, বর্তমান সমাজ দিশাহীন? জবাবে তিনি বলেন – অবশ্যই। আজকের সমাজ দিশাহীন অবস্থায় রয়েছে। আমাদের সকলকেই এই কাজ করতে হবে। দিশা দেখাতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই সমাজ আবার দিশা দেখবে।

Published on: জানু ৪, ২০২৩ @ ০১:১৫


শেয়ার করুন