নাকাল যাত্রীরা, নৈহাটির ফুট ওভার ব্রিজ মেরামতের নামে রেলের “মিথ্যাচার”এর বিরুদ্ধে শুরু গণসাক্ষর অভিযান

রাজ্য রেল
শেয়ার করুন

Published on: জানু ২, ২০১৮ @ ১৭:৫৫

এসপিটি নিউজ, নৈহাটি, ২ জানুয়ারিঃ যাত্রী পরিষেবার দিক থেকে এখনও অনেকখানি পিছিয়ে আছে নৈহাটি জংশন স্টেশন। একাধিক সমস্যায় জর্জরিত এই ঐতিহাসিক স্টেশনটি আজ শুধু অতীতের স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলেছে। চার মাসেরও বেশি সময় ধরে স্টেশনের মাঝখানের ফুট ওভার ব্রিজটি মেরামতের নাম করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে ব্রিজটির সঙ্গে নৈহাটির অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। এছাড়াও আছে একাধিক সমস্যা। এইসব সমস্যার সমাধানের দাবি নিয়ে নৈহাটিবাসীকে একত্রিত করে গণসাক্ষর অভিযান শুরু করেছে নৈহাটি শহর কংগ্রেস। যদিও এই আন্দোনলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নৈহাটির জনদরদী সমাজবন্ধু পরেশ নাথ সরকার। নৈহাটির ফুট ওভার ব্রিজ মেরামতের নামে রেলের “মিথ্যাচারের” বিরুদ্ধে শুরু গণসাক্ষর অভিযান।১০ হাজার মানুষের গণসাক্ষর সংগ্রহ হয়ে গেলেই তারা সেটি পৌঁছে দেবেন রেলমন্ত্রী পীযুশ গোয়েলের কাছে।

নৈহাটি জংশন রেল স্টেশনের মাঝখানে অবস্থিত বহু প্রাচীন ফুট ওভার ব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত বছর ৭ অক্টোবর থেকে রেল কতৃপক্ষ ব্রিজটিকে বন্ধ করে রেখেছে। এই ব্রিজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বহু প্রবীণ মানুষকে টিকিট কেটে ২,৩,৪,৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য টিকিট কাউন্টার থেকে কিছুটা দূরের ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এরফলে তাদের নাকাল হতে হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীরা উঠতে গিয়ে বাধা পাচ্ছেন। যদিও বা কেউ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে পড়ছেন তাহলে স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের সামনে দিয়ে তাদের আবার সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসতে হচ্ছে। এক নম্বর থেকে যেটি সোজাসুজি চলে গেছে পাঁচ নম্বর বরাবর তার ঠিক মুখেই বড় একটি টিন ফেলে তাতে লিখে রেখে দেওয়া হয়েছে-“ব্রিজটি যাতায়াতের জন্য বিপদ।”আর এক দিকের সিঁড়িতে ওঠার মুখে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে আরও একটি বোর্ড-মেরামতের জন্য ব্রিজটি বন্ধ আছে।অথচ মেরামতের কোনও লক্ষণই নেই। দীর্ঘ ৪ মাস ধরে একই অবস্থায় পড়ে আছে ব্রিজটি। বিষয়টি নিয়ে পূর্ব রেলের মতামত নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিকের সঙ্গে। বারবার ফোন করা হলেও তাঁর কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

নৈহাটির সমাজবন্ধু পরেশ সরকার আজ সকালে নৈহাটি শহর কংগ্রেস কমিটির ব্যানারে এক গণসাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে শামিল হয়েছিলেন। দলের একজন সক্রিয় কর্মী ও নেতা হিসেবে তিনি নিজেই এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তিনি বলেন, নৈহাটির এই ব্রিজটি বহু পুরনো। এর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে নৈহাটির মানুষের। অথচ রেল কতৃপক্ষ নৈহাটির মানুষের সেই আবেগকে ছুড়ে ফেলে দিতে চাইছে। আর সেটা করতে তারা এক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। মেরামতের নাম করে ব্রিজটি কোনোরকম রক্ষণাবেক্ষণ না করে ব্রিজটিকে অকেজো করে নষ্ট করে দিতে চাইছে।যাতে করে পরবর্তী সময়ে ব্রিজটিকে ভেঙে ফেলতে সুবিধা হয়। কিন্তু, আমরা তাদের সেই অভিসন্ধি ধরে ফেলেছি। তাই সেটা যাতে তারা করতে না পারে সেজন্য আমরা শহর নৈহাটি কংগ্রেস কমিটি এক গণসাক্ষর অভিযান শুরু করেছি। ১০ হাজার সাক্ষর সংগ্রহ হয়ে গেলে আমরা তা নিয়ে তুলে দেব ভারতের রেলমন্ত্রী পীযুশ গোয়েলের হাতে। একই সঙ্গে আমরা আরও কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছি।

সেগুলি হল-নৈহাটি স্টেশন ও শিয়ান্দহ দিভিশনের বিভিন্ন প্লাটফর্মগুলি উঁচু করতে হবে, যাত্রী সাধারণের জন্য বিদ্যুৎ ও জল প্রতিটি প্লাটফর্মে সরবরাহ করতে হবে। সমস্ত প্লাটফর্ম আ ব্রিজের উপর দিজিট্যাল সময় সূচী বোর্ড টাঙাতে হবে, নৈহাটি স্টেশনের দক্ষিণ-পূর্বে টিকিট কাউন্টারটি অবিলম্বে চালু করতে হবে। নৈহাটি স্টেশনে যাত্রী নিবাস শৌচালয় করতে হবে। যাত্রী নিরাপত্তার কারণে প্রতিটি প্লাটফর্ম ও ব্রিজের উপর সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে। দূরপাল্লার ট্রেনের রিজার্ভেশন চার্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স বোর্ড প্লাটফর্মের উপর দিতে হবে।যাত্রী সাধারণের জন্য মহিলা প্রতীক্ষালয় ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার স্বার্থে খোলা রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময়-সূচি অনুযায়ী ট্রেন চালাতে হবে। উত্তর-পূর্ব টিকিট কাউন্টারের সামনের রাস্তাটি জল জমার কারণে অবলম্বে উঁচু করতে হবে। এই টিকিট কাউন্টারটিকে সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। সর্বশেষ, নৈহাটি স্টেশনে অনুসন্ধান অফিস করতে হবে।

নৈহাটি শহর কংগ্রেস কমিটির সভাপতি স্বপন বিশ্বাস ও ঋষি বঙ্কিম ব্লক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি পার্থ চন্দরা মনে করেন, নৈহাটির মানুষের স্বার্থে লক্ষ লক্ষ রেলযাত্রীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে তাদের এই আন্দোলন অবশ্যই একটা পথ বার করবে। পরেশবাবু বলেন, আমাদের প্রাণ থাকতে আমরা নৈহাটির এই পুরনো রেল ফুট অভার ব্রিজটি কখনই ভাঙতে দেব না।এই ফুট অভার ব্রিজ নিয়ে আমরা রেলের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, এই লড়াই চলবে। আমরা ভারতের বর্তমান রেল্মন্ত্রী পীযুশ গোয়েলের হাতে দাবিগুলি তুলে দেওয়ার পাশাপাশি ১০ হাজার গণসাক্ষরও পৌঁছে দেব। যার প্রতিলিপি পাঠাব প্রাক্তন রেল্মন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। পাঠাব আরও কয়েকজন প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর কাছেও।

১৮৬২ সালে  ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কলকাতা-কুষ্টিয়া লাইনটি খুলে দিয়েছিল।হুগলি নদীর পূর্ব পাড়ে রেল তখন থেকেই পরিষেবা প্রদান করে আসছে।সেই সময় বাংলা অবিভক্ত ছিল.১৯৬৩-৬৪ সালে রানাঘাট ও ১৯৬৫-৬৬ সালে ব্যান্ডেলের লাইনটি বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছিল.২০১২ সালের রেল বাজেটে নৈহাটিতে একটি নতুন কোচিং টার্মিনালের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে একটি জাদুঘরের প্রস্তাবও। কোথাও গেল সেসব, রেলমন্ত্রীর কাছে জানতে চায় নৈহাটির মানুষ।

Published on: জানু ২, ২০১৮ @ ১৭:৫৫


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + 1 =