“ডাইনি”র অজুহাতঃ “নিদান” এর নামে মহিলাকে পিটিয়ে মেরে চলল নাচানাচি- পুলিশ এসেও ছুঁতে পারল না একজনকেও

Main এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা- বাপ্পা মন্ডল

Published on: মার্চ ১৭, ২০১৯ @ ২৩:৫০

এসপিটি নিউজ, ঘাটাল, ১৭ মার্চঃ এখনও আমাদের দেশে এমন কিছু কাজকর্ম হয়ে চলেছে যা নিষ্ঠুরতম বললেও কম বলা হয়। আর তা নিয়ে আজ পর্যন্ত কিছু হয়নি। নানারকম দিক তুলে ধরে সমাজের সেইসমস্ত অপরাধীরা অতি অনায়াসে রেহাই পেয়ে চলেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গত বছর একটি বাঘকে হত্যা করল আদিবাসীরা।কিছুই হল না তাদের। বন্যপ্রাণী হত্যা আইনে বড় সাজা হতে পারত, তা হল না শুধু মাত্র প্রশাসনের সৌজন্যে। ঠিক একই কাণ্ড ঘটল ঘাটালেও। সেখানে একটি আদিবাসী গ্রামে শুধুমাত্র “ডাইনি” অজুহাত খাড়া করে নিজেদের সম্প্রদায়ের এক উৎসবে্র মধ্যেই পিটিয়ে মারল এক মহিলাকে। তার মৃতদেহ সামনে রেখে চলল নাচানাচি। পুলিশ এল। কিন্তু ধরতে পারল না কাউকেই। থাকতে হল নীরব দর্শক হয়ে।

এ ভাবে আর কত দিন

  • শুধুমাত্র আদিবাসী বলেই কি এসব “নিষ্ঠুর” কাজ করতে দেওয়া হবে?
  • শুধুমাত্র আদিবাসী বলেই কি এদের কেউ কেউ “হত্যা” করেও পার পেয়ে যাবে?
  • শুধুমাত্র আদিবাসী বলেই কি এদের “নিদান”কে আইনের উর্ধ্বে রাখা হবে?
  • শুধুমাত্র আদিবাসী বলেই কি “শিকার” উৎসবের নামে বন্যপ্রাণী হত্যা কিংবা গ্রামের কাউকে “ডাইনি” অজুহাত দিয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে যাবে?
  • এভাবে আর কতদিন এমনটা চলবে? প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ মানুষ।

১) ঘাটাল থানার ঈশ্বরপুর আদিবাসী পাড়ার আশপাশের এলাকার বহু মানুষ। তাদের সকলের একটাই কথা-কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। শুধুমাত্র সন্দেহের বশে এভাবে কাউকে এত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা যায় না। আর তারপর তার মৃতদেহ নিয়ে এভাবে নাচানাচি করাও অশোভনীয়। শুধুমাত্র পুলিশকে দোষারোপ করেও কোনও লাভ নেই। কারণ তাদের উপর যদি তেমন কোনও নির্দেশ থাকে যে তোমরা আদিবাসীদের অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছো তখন তার দায় কোন পুলিশ নেবে বলুন তো? প্রশ্ন তুলেছেন সেই প্রতিবাদী মানুষগুলিই।

কি হয়েছিল ঘটনাটি

১) ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল থানার ঈশ্বরপুর আদিবাসী পাড়া এলাকার। বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকায় বেশকিছু গুরু ছাগল মারা যায়। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোগেও ভুগছিলো।ব্যস, আর কি-অমনি গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া হল এসব গ্রামের ডাইনির জন্যই হচ্ছে। অতএব সেই ডাইনিকে খুঁজে বার করা হোক।

২) খোঁজে শুরু হল। ডাকা হল গ্রামেরই এক আদিবাসী মহিলা শ্যামলী মান্ডিকে। তিনি নাকি অনায়াসে ডাইনি খুঁজে দেন। তাকে গ্রামের আদিবাসীরা ডানগুরু নামেই চেনে। এবার সেই আদিবাসী মহিলা সেই এলাকারই পাঁচজন মহিলাকে ডাইনি বলে চিহ্নিত করে দেয়। ব্যস, কেল্লা ফতে। আর কি- সঙ্গে সঙ্গে সেই মহিলাদের নিয়ে আসা হয় শ্যামলী মান্ডির সামনে। যেখানে গ্রামের আদিবাসীদের নিজের ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছিল। অভিযোগ- এই আদিবাসী মহিলাই নাকি “নিদান” দেয় শাস্তির। কি শাস্তি- লাঠি দিয়ে এদের সবাইকে পেটানো হবে। পিটিয়ে এদের মুখ দিয়ে স্বীকার করানো হবে যে তারাই ডাইনি।বুঝে দেখুন-কি কান্ড!

৩) শুরু হয় পেটানো। যাদের যাদের বাড়িতে গরু-ছাগল মারা গেছে কিংবা পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে সবাই মিলে এগিয়ে এল পেটাতে। সবার হাতে লাঠি। ছবিটা ভাবুন একবার। সেখানে ছিল এক ৫০ বছরের এক মহিলাও। মারের তীব্রতা এত সাঙ্ঘাতিক ছিল যে তিনি আর সইতে পারলেন না। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়লেন। মৃত্যু হল তাঁর। মৃত ওই মহিলার নাম আদরমণি হাঁসদা (৫০)। এরপর ওই মৃতদেহ ফেলে রেখেই তার সামনে চলল নাচানাচি। সেই সঙ্গে গান।শ্যামলী মান্ডি অর্থাৎ যাকে গ্রামের সকলে ডানগুরু বলে- তিনি এবার বলে উঠলেন- “ওই আদরমণিই ছিল প্রকৃত ডাইনি”।

পুলিশ রইল নীরব দর্শক হয়ে, প্রশাসন বলল, “এখন হস্তক্ষেপ করা যাবে না”

১) কি সাঙ্ঘাতিক কান্ড, বুঝে দেখুন! এমন অমানবিক ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা এলাকা।এমন নারকীয় হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছয় ঘাটাল থানার বিশাল পুলিশ। কিন্তু গ্রামের সেই এলাকায় তারা ঢুকতেই পারেনি। বলা ভাল, তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাদের দেশে আইন এখনও কোথাও আটকে আছে এক অদৃশ্য শক্তির ফাঁসে। পুলিশ ইচ্ছা করলে ঢুকতে পারত। কিন্তু অন্য অনেক দিক ভেবেই তারা নিজেরা চুপ করে যায়। নীরব দর্শক হয়েই থাকে। পরে অবশ্য পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ঘাটাল হাসপাতালে পাঠায় এবং আহতদের চিকিৎসার জন্যও হাসপাতালে নিয়ে যায়।

২) এলাকা থমথমে। আদিবাসীদের সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলায় পুলিশ তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারছে না- এমনটাই জানিয়েছে মহকুমা প্রশাসন।বর্তমানে ওই গ্রামে বিশাল পুলিশবাহিনী সহ উপস্থিত আছেন ঘাটাল এসডিও,এসডিপিও,সিআই, ওসি সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা।কিন্তু যার ক্ষতি হওয়ার তার তা হয়েই গেছে। কিছু বেপরোয়া অন্ধ-কুসংস্কারের দোহাই দিয়ে সমাজে মাতব্বরি করে চলা মানুষগুলির জন্য সেই পরিবার অকালেই তাদের স্বজনকে হারাতে বাধ্য হয়েছে। এর দায় কে নেবে বলতে পারেন? আইনের কাছে কি এর কোনও জবাব আছে?

Published on: মার্চ ১৭, ২০১৯ @ ২৩:৫০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

49 + = 55