জেনেবুঝেই বাঘের সামনে, অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন জয়রাম, বন দফতরের নিষেধ উপেক্ষা করার ফল হাতেনাতে মিলল

বন্যপ্রাণ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা- বাপ্পা মণ্ডল                                       ছবি-রামপ্রসাদ সাউ

Published on: মার্চ ১১, ২০১৮ @ ২১:৫৮

এসপিটি নিউজ, গোয়ালতোড়, ১১ মার্চঃ ঠিক ১০ দিনের মাথায় ফের দেখা মিলল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। শুধু দেখাই নয়, রীতিমতো তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে। তার বসত এলাকায় শিকার করতে গিয়ে বাঘটির সামনে গিয়ে পড়ে বনশিকারির দল। জয়রাম সোরেন নামে একজনকে বাঘটি আক্রমন করে। অল্পের জন্য সে প্রাণে বাঁচে। বাকিরা পালিয়ে রক্ষা পায়। যদিও এই ঘটনার জন্য পরোক্ষে কিন্তু আক্রান্তকারীরাই দায়ী। কারণ, বন দফতর সমানে বলে চলেছে, জঙ্গলের ভিতর এখন কারও যাওয়াটা নিরাপদ নয়। সেই নিষেধ উপেক্ষার ফল পেল তারা হাতেনাতে।

গত এক সপ্তাহের উপর হয়ে গেল জঙ্গলমহল এলাকা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পূর্ণ বয়স্ক একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।বাঘটিকে ধরার জন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি বন দফতর। কিন্তু বাঘটি এতই ধূর্ত যে তাদের পক্ষেও বাঘটির নাগাল পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। লালগড়, গুড়গুড়িপাল, শালবনীর পর বাঘটি এখন ঘাঁটি গেঁড়েছে গোয়ালতোড়ের গভীর জঙ্গলে। গত দুদিন ধরেই গোয়ালতোড়ের পাথরপাড়া, জিরাপাড়া, হিরাশোল এলাকার জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন দফতরকে জানানো হয়। বন দফতরও গ্রামবাসীদের সতর্ক করে দেয়, কেউ যেন জঙ্গলের দিকে না যায়।এরই মধ্যে বাঁকুড়ার সারেঙ্গার জঙ্গল এলাকাতেও মিলেছে বাঘের পায়ের ছাপ। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সেখানেও।

কিন্তু এতদিন মানুষ সতর্কতা মেনে চললেও আজ কিন্তু তারা আর বন দফতরের সতর্কতা মেনে ঘরে বসে থাকতে পারেননি। তারা বেরিয়ে পড়েছিলেন।প্রত্যক্ষদর্শী গোবিন্দ মান্না, রামু সোরেন, দেবাশীষ মান্নার কথা অনুযায়ী-“তারা রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ গোয়ালতোড় থানার জিরাপাড়ার জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে মোটর বাইক নিয়ে আসছিলেন। আর সেই সময় তারা দেখেন মস্ত বড় বাঘটি জঙ্গলের ভিতর থেকে আপন মেজাজে বেরিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। বাঘটির নজর ছিল সামনের জঙ্গলের দিকে। আমরা, ছিলাম অনেকটা দূরে। বাঘটি একবার ঘাড় ঘুরিয়েছে কি ঘুরায়নি আমাদের অত খেয়াল নেই, কোনওরকমে প্রাণ হাতে নিয়ে বাইক ঘুরিয়ে পালিয়ে চলে আসি।আর ওদিকে যাওয়ার সাহস হয়নি।ফিরে তারা বন দফতরকে ঘটনাটি জানায়।

এরইমধ্যে কুশকাঠি গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ১৫জন বনশিকারের উদ্দেশ্যে হিরাশোলের জঙ্গলে ঢোকে। জঙ্গলটি খুব গভীর।তারা বন দফতরের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই কিন্তু জঙ্গলের পথে পা বাড়ায়। আসলে এদের জঙ্গলে গিয়ে শিকার করেই পেট চলে। বাঘের ভয়ে বেশ কিছুদিন তারা বেরোতে পারছিলেন না। তাই আর তাদের ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করছিল না।তাই তারা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই শিকারের লক্ষ্যে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গলে। ধুকেই একেবারে সামনে পড়ে যায় দক্ষিণ রায়ের। সামনে জয়রাম সোরেন(৪৭)। কিছু ভেবে ওঠার আগেই জয়রামের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘটি। কিন্তু জয়রামের সাহসিকতায় সে বাঘের মুখ থেকে বেঁচে যায়। বাকিরা জঙ্গলের যে যেদিকে পেরেছে পালিয়েছে।মেদিনীপুর মেদিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বেডে শুয়ে ঘটনার কথা বলার সময় কাঁপছিলেন জয়রাম।

মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা জানান, বাঘটি বর্তমানে গোয়ালতোড়ের উমডাপাতার জঙ্গলে রয়েছে। তাই জিরাপাড়া, হিরাশোল, কাদরা উমডাপাতার জঙ্গলের চারপাশ ঘিরে ফেলা হয়েছে। সেখাবনে বন দফতরের সমস্ত আধিকারিক থেকে শুরু করে কর্মীরা আছেন। আশপাশের মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। বাঘ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বন দফতর যদি তাদের লক্ষ্যে সফল হয় অর্থাৎ বাঘটি যদি বর্তমানের অবস্থান থেকে অন্য কোথাও না যেতে পারে তাহলে দু’একদিনের মধ্যেই তাকে খাঁচাওবন্দি করা সম্ভব। সেই দিকেই তাকিয়ে এখন জঙ্গলমহলের মানুষ।

Published on: মার্চ ১১, ২০১৮ @ ২১:৫৮

 

 

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

28 − 25 =