চিরদিনের ছুটিতে প্রবাদপ্রতিম গায়িকা, প্রয়াত গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

Main দেশ বিনোদন রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ১৫, ২০২২ @ ২৩:৪১

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৫ ফেব্রুয়ারি:  বাংলা সঙ্গীত জগতের স্বর্ণযুগের অবসান। প্রয়াত হলেন প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দীর্ঘদিন তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। গত ২৭ জানুয়ারি ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে তাঁকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। এরপর তাকে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। অবশেষে সোমবার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতেই তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পী।

উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খানের সুযোগ্যা শিষ্যা বাংলা সঙ্গীত জগতে এক অবিস্মরনীয় মুহূর্ত স্থাপন করে গেলেন। শুধুমাত্র বাংলা গানেই নয় শাস্ত্রীয় সংগীতেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।বাংলা আধুনিক গানেও তিনি ছিলেন অসাধারণ। যদিও বাংলা ছবিতে তাঁর গান আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। ১৯৫০ সালে তারানা চলচ্চিত্রে একটি গান দিয়ে তিনি মুম্বইতে হিন্দি গান গাওয়া শুরু করেন। ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়িকা হিসেবে গান গেয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত কারণে ১৯৫২ সালে তিনি তাঁর কলকাতা শহরের বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাঙালী কবি শ্যামল গুপ্তকে বিয়ে করেন। শ্যামল তার অনেক গানের জন্য কথা লিখে দিয়েছিলেন।

আর এক প্রবাদপ্রতিম শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে অসংখ্য গান গেয়েছেন, যা জনপ্রিয় হয়েছে। হেমন্ত ও সন্ধ্যা বাংলার মহানায়ক উত্তম কুমার এবং তার অসংখ্য নায়িকার নেপথ্য কণ্ঠস্বর হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, বিশেষত অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের কণ্ঠে। হেমন্ত মুখার্জির রচনা ছাড়াও তিনি রবিন চট্টোপাধ্যায় ও নচিকেতা ঘোষের সঙ্গেও একাধিক কাজ করেছেন।

বাংলাদেশেও তিনি ছিলেন সমানভাবে জনপ্রিয়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় , যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের জন্য তিনি ভারতীয় বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে গণ আন্দোলনে যোগ দেন এবং তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী সমর দাস যিনি বাংলাদেশে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন তার সাহায্যার্থে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান রেকর্ড করেন। কারাগারে বন্দী থাকা বাংলাদেশের জাতির পিতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি উপলক্ষে তার গাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটি মুক্তি পায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্‌যাপন উপলক্ষে ঢাকায় পল্টন ময়দানে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে তিনি ছিলেন সেদেশের অন্যতম প্রথম বিদেশি শিল্পী।

১৯৭১ সালে জয় জয়ন্তী ও নিশিপদ্ম ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গান দুটি ছিল- আমাদের ছুটি ছুটি এবং ওরে সকল সোনা মলিন হল। এছাড়াও পরবর্তীকালে ২০১১ সালে পশ্চিমবংগ সরকার তাকে বঙ্গবিভূষণ উপাধিতে সম্মানিত করেন। যদিও ২০২২ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে তাঁর নাম ঘোষণা করা হলেও তিনি সেই পুরস্কার প্রত্যাখান করেন।

Published on: ফেব্রু ১৫, ২০২২ @ ২৩:৪১


শেয়ার করুন