মাছ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটতে চলেছে, চলছে তারই প্রক্রিয়া

Main প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-অনিরুদ্ধ পাল

Published on: জানু ৫, ২০১৯ @ ২১:০৩

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৫ জানুয়ারিঃ মাছ চাষে সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষে রয়েছে। তবু চাহিদার তুলনায় মাছের যোগান বেশ কম। আগামিদিনে যাতে এই সমস্যার মুখোমুখি না হতে হয় সেদিকে নজর দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন -মাছে-ভাতে বাঙালির পাতে যাতে মাছ কম না পড়ে। আর তাঁর ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে রাজ্য মৎস্য দফতর বিশেষ করে মেরিন ফিশারিজ ডিপার্টমেন্ট কিংবা সামুদ্রিক মৎস্য বিভাগের ক্ষেত্রে এমন এক নীতি নির্ধারিত হতে চলেছে যা কার্যকর হলে পশ্চিমবঙ্গের মাছ চাষ ও উৎপাদনের ক্ষত্রে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটে যাবে। ইতিমধ্যে তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।এমনটাই জানালেন পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য দফতরের মেরিন অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. সোমেন সাহু।

সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. সাহু জানান-“ব্র্যাকিশ ওয়াটারে এমন হয় যেখানে প্রচুর চাষ হলেও এক এক বছর প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। সেই ক্ষেত্রে ঠিক কী করা উচিত মাছের চারা থেকে শুরু করে পুরো সেক্টরটাকে একটা ম্যানেজমেন্ট ওয়েতে ভেবে তার একটা নির্দিষ্ট নীতি সরকার তৈরি করছে। মেরিনের ক্ষেত্রেও কিছু পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগে যত ট্রলার ছিল এখন তা দ্বিগুন হয়ে গেছে। মাছ সমুদ্রে উৎপাদন হয়ে বড় হবার আগেই সেই মাছকে ধরে নেওয়া হচ্ছে। একটা ট্রলার যখন সমুদ্রে যায় তখন ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এত টাকা খরচ করে সে যখন যাবে সে তো আর খালি হাতে ফিরে আসবে না। এখন আমরা এসব নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি। যে সমুদ্রের মধ্যে খাঁচা বসিয়ে মাছ চাষ করার কথা ভাবা হচ্ছে।”

“সামুদ্রিক মাছ চাষের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নীতি নেওয়া হচ্ছে। মেরিন অ্যাডভাইজার হিসেবে আমারও একটা দায়িত্ব থেকে যায়।আমরা পূর্ব মেদিনীপুরের কালীনগরে একটা বড় ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি কারণ এখানে অভ্যন্তরীন জলের মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় সমস্যা। যেমন একটা সিড আসছে তা সেটা বাগদা কিংবা ভেনামই যাই বলুন, ভেনামের সিডটা আসছে ভাইজাগ থেকে না হলে চেন্নাই থেকে। মাছের কিছু মিডলম্যান আছে যারা ওই সিডটা ওখান থেকে এখানে নিয়ে আসছে। সিডের মান ভাল না থাকার জন্য এখানে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।”বলেন সোমেনবাবু।

তিনি আরও বলেন-“একদিন সিড খাওয়ানো মানে সেই মাছের ৫ শতাংশ মূল্য বেড়ে গেল। তাই আমাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাছটাকে বৃদ্ধি করাতে হবে। সেই জন্য মাছের গুণগত মান যদি ঠিক না হয় মাছের নীতি যদি ঠিক না হয় তা না হলে তার আশানুরূপ বৃদ্ধি হবে না।এবং সে বিদেশের মার্কেটে মার্কেটিং করতে পারবে না। সেজন্য আমরা একটা ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি সেওজন্য প্রোগ্রামটা সাজাচ্ছি আস্তে আস্তে। একথা আমাদের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন।এটা হয়ে গেলে পশ্চিমবঙ্গে মৎস্য উৎপাদনে একটা যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটবে।”

“স্টেট ফিসারিজ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এসএফডিসি)-র নিজস্ব কিছু ফার্ম আছে।এমন কিছু মাছ আছে যা তামিলনাড়ু কিংবা ভাইজাগ উপকূলে হয় সেই মাছগুলিকে আমরা এখানে দেখভাল করে সেইগুলিকে বাজারজাত করতে পারি। এরও একটা ভাল বাজার আছে।” বলেন অধ্যাপক ড. সোমেন সাহু।

তিনি বলেন-“চিরাচরিত মাছের পাশাপাশি ভারতবর্ষের অন্যান্য উপকূলের মাছগুলি যা এখানে খাপ খাবে যাদের রফতানি মূল্য আছে কারণ বিদেশে কেউ কিন্তু কাটা মাছ খায় না। সেখানে মাছের মূল অংশটাকে বের করে নিয়ে তা টিউব আকারে মাছটা বিক্রি করে। তাহলে আমার সেরকম ধরনের মাছ দরকার। যেটা ভেটকির মধ্যে পাওয়া যায় আমাদের এখানে। যার বাজারে দামও পাওয়া যায়। এটা বাস্তবায়িত হলে যে সুবিধা হবে তা হল-আগেকার মতো করে ফিসারিজ চলছিল তাতে পলিসি ইনকর্পোরেটেড হচ্ছিল। এটা হলে হবে কি এক নির্দিষ্ট নীতিতে মৎস্য দফতর সরাসরি নির্দেশিত হবে। মাছ চাষ থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ গোটা পথটাই একটা নীতির দ্বরাই চালিত হবে। এটা খুব কঠিন কাজ। কারণ, আপনাকে দেখতে হবে গুজরাট সেক্টরে কি হচ্ছে, বিদেশে কি হচ্ছে তারা কোথায় কোথায় ঠকেছে তাদের কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে? তারা কি কি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সেটার সমাধান করে আমাদের দেশে আমাদের মতো করে নীতিটাকে তৈরি করতে হচ্ছে। আমাদের এক্সপার্ট কমিটি বসে ঠিক করে নেব।”

Published on: জানু ৫, ২০১৯ @ ২১:০৩

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

33 − 28 =